সড়কের পাশের একটি বাড়ির দেওয়াল ঘেঁষা ফুটপাতে দুই নারী–পুরুষকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে এক যুবক। কোপ থেকে বাঁচতে পুরুষ বাঁ দিকে এবং নারী ডান দিকে সরে যান। হামলাকারী এবার বাম দিকে ছুটে গেলে পুরুষটি আবার পেছনে ফিরে আসেন। এবার নারী গিয়ে তার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে কোপ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা চালান। দুজনের ভয়ার্ত চিৎকার শোনা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ১৩ সেকেন্ডের এক ভিডিওতে দেখা যায় এই দৃশ্য। পুরো সময় এক যুবক হামলাকারীকে সহায়তা করেন। ভয়ংকর এ ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর উত্তরায়।
পরে জানা যায়, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে রিকশাকে ধাক্কা দেওয়া এক যুবককে ‘ঝামেলা’ করতে নিষেধ করায় ওই দম্পতির ওপর এমন আক্রমণ চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে গুরুতর আহত হন মেহেবুল হাসান ও তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার ইপ্তি। তাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হামলায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীদের এমন বেপরোয়া কর্মকাণ্ড দেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তারা বলছেন, উত্তরার মতো অভিজাত এলাকার সড়কে যদি নিরাপত্তার এই হাল হয়, তাহলে মানুষ চলাফেরা করবে কীভাবে? এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, নগরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কতটা ফাঁক–ফোকর রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের বলেন, ‘জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কেউ অপরাধ করার পর যদি আমরা অ্যাকশনে না যায়, তখন বলতে পারতেন যে আমরা কাজ করছি না। কিশোর গ্যাং-এর দৌরাত্ম্য, ছিনতাই আগের চেয়ে কমেছে। তবে সহনীয় পর্যায়ে আসেনি।’
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, দম্পতির ওপর হামলার ঘটনায় অন্তত সাতজন জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে দুজনকে উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো– মোবারক মিয়া ও রবি রায়। পরে গতকাল আলফাজ নামে আরেকজনকে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই আলফাজই দম্পতিকে কুপিয়েছিল। জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নাসরিন আক্তার ইপ্তি বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেছেন। সোমবার গ্রেপ্তার দুজনকে গতকাল এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এজাহারের বর্ণনা থেকে জানা যায়, সোমবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে উত্তরার আমির কমপ্লেক্স থেকে কেনাকাটা সেরে বাসায় ফিরছিলেন মেহেবুল ও ইপ্তি। পথে উত্তরা–৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাসার সামনে পৌঁছালে ঘটনার সূত্রপাত হয়। তখন তিনজন দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে বিকট শব্দ করে দ্রুতগতিতে এলোমেলোভাবে চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
এর মধ্যে মোবারক হোসেনের মোটরসাইকেল সামনে থাকা রিকশাকে ধাক্কা দিলে যাত্রীর সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। রিকশার পেছনে থাকা ভুক্তভোগী দম্পতি তাদের ঝামেলা করতে নিষেধ করেন।
এতে ক্ষিপ্ত সন্ত্রাসীরা তাদের মারধর শুরু করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সজিব মোবাইল ফোনে কল করে তার সহযোগীদের ঘটনাস্থলে আসতে বলে। আনুমানিক ১০ মিনিট পর ৪–৫ জন সন্ত্রাসী রামদাসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তারা লোকজনের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে ধারাল অস্ত্র দিয়ে মেহেবুলকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এ সময় ইপ্তি তার স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাকেও রামদা দিয়ে আঘাত করে।
খবর পেয়ে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জনগণের সহায়তায় দুজনকে গ্রেপ্তার করে। আহত দম্পতি ভাটারার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা বাড্ডার আফতাবনগর এলাকায় থাকেন।
ঘটনাস্থলের পাশে থাকা ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, সন্ত্রাসীদের মোটরসাইকেল একটি রিকশায় ধাক্কা দিলে আরোহী দুই নারী–পুরুষ নেমে প্রতিবাদ করেন। তখন পাশে মোটরসাইকেলে থাকা অপর দম্পতিও এর প্রতিবাদ করলে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে সন্ত্রাসীরা ফোন করে তাদের সহযোগীদের ডেকে এনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করে। আহতদের চিৎকারে পথচারীসহ স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে দুই সন্ত্রাসীকে আটক করে পিটুনি দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। তবে তারা পুলিশের হাতে সন্ত্রাসীদের তুলে দিতে রাজি হননি। পরে তাদের সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
অবশ্য কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, জনতা সন্ত্রাসীদের আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করতে চাইলেও প্রথমে পুলিশ তাদের নিতে গড়িমসি করেছে।
ঘটনাস্থলের অদূরে ভ্যানে সবজি বিক্রি করেন রাসেল। তিনি বলেন, শুরুতেই সন্ত্রাসীদের আটক করলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আশপাশের বাড়ির দারোয়ানরা এ দৃশ্য দেখেও প্রথমে এগিয়ে আসেননি। এ ঘটনায় উত্তরার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।
এদিকে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে লোকজন উত্তরাসহ দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেইসঙ্গে প্রশংসায় ভাসছেন সন্ত্রাসীদের ধারাল অস্ত্রের মুখে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা চালানো ইপ্তি। সবাই তাঁর সাহসকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
আমারবাঙলা/জিজি
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            