যানজট নিরসন ও ট্রাফিক পুলিশের ওপর চাপ কমাতে রাজধানীর কদম ফোয়ারা থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ২২টি ব্যস্ত মোড়ে আধা স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করার কথা ভাবছে সরকার।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আক্তার জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে গত ১৬ মার্চ চারটি মোড়ে এ ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা ছিল, তবে জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের কারণে তা এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মোড়গুলোতে হাতের ইশারায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয় উল্লেখ করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তাদের মতে, এই ব্যবস্থা বাস্তবায়নে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
দুই দশকের চেষ্টার পর কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হলো। বছরের পর বছর আধুনিক সরঞ্জামের জন্য ১১৯ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হলেও ঢাকার ট্রাফিক এখনো মূলত ম্যানুয়ালিই পরিচালিত হয়।
নতুন এই উদ্যোগের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৪টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আটটি মোড় তত্ত্বাবধান করবে।
শুরুতে ডিএসসিসি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল এবং বাংলামোটরের কাছে এবং ডিএনসিসি সার্ক ফোয়ারা গোলচত্বর এবং ফার্মগেটে ট্রাফিক লাইট স্থাপন করা হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, এই চারটি মোড়ে এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা যাচাই করার পরই অন্যান্য স্থানে তা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ট্রাফিক পুলিশের বুথে একটি সুইচ থাকবে, যা ব্যবহার করে কর্মকর্তারা স্বয়ংক্রিয় ও ম্যানুয়াল মুড পরিবর্তন করতে পারবেন। কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে ক্যামেরা ও লাউডস্পিকারও স্থাপন করা হবে।
সরেজমিন দেখা যায়, শহরজুড়ে যান চলাচলের মধ্যেই অনেকে রাস্তা পার হচ্ছেন, মোটরসাইকেল চালকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জায়গার জন্য ঠেলাঠেলি করছেন এবং স্কুল ও হাসপাতালের কাছে গাড়ি পার্ক করছেন অনেকেই।
কর্মকর্তারা বলছেন, পথচারীদের রাস্তায় নেমে আসা, ক্রসওয়াকের অভাব, অপর্যাপ্ত ফুটওভার ব্রিজ, অবৈধ পার্কিং এবং রিকশার এলোমেলো চলাচল সব কিছুই যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
একজন সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'যানবাহনের সংখ্যা এত বেশি যে, সেগুলোর চলাচল ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।'
একজন কর্মকর্তা বলেন, ভিআইপি, রাজনীতিবিদ এমনকি আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারাও প্রায়শই নিয়ম অমান্য করেন, যার ফলে সাধারণ মানুষ আইন মানতে চান না।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, সড়কে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা আনা ছাড়া কোনো কিছু সফল হবে না। আপনি যত ইচ্ছা প্রকল্প চালু করতে পারেন। শৃঙ্খলা ছাড়া স্বয়ংক্রিয় এবং আধা-স্বয়ংক্রিয় উভয় ব্যবস্থা ব্যর্থই হবে।
তিনি বলেন, ট্র্যাফিক লাইট কাজ করার জন্য ফুটপাতের মতো পর্যাপ্ত পথচারী অবকাঠামো থাকতে হবে এবং সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএকে যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, গুলশান-২, হাতিরঝিল এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মোড়গুলোতে কঠোর আইন প্রয়োগের কারণে সুশৃঙ্খলভাবে যান চলাচল করে। গুলশানে রিকশা, ইজিবাইক বা বাসের অসংলগ্ন চলাচল দেখা যায় না।
গত ২০ বছরে কর্তৃপক্ষ ১১৯ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে প্রধান প্রধান মোড়ে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল, কাউন্টডাউন টাইমার, ডিজিটাল ডিসপ্লে এমনকি এআই-সমর্থিত সিস্টেম স্থাপন করেছে। কিন্তু কোনো কিছুই যানজট কমাতে পারেনি।
২০০১ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে স্থাপিত স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাফিক লাইটগুলো দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণের কারণে অকার্যকর হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ আছে।
২০১২ ও ২০১৩ সালে ডিএসসিসি সিস্টেমটি পুনরায় চালু করলেও, তা এক মাসের বেশি টেকেনি।
এক পর্যায়ে পুলিশ লাইটগুলো পরিচালনা করার জন্য রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করেছিল। কিন্তু সেই সিস্টেমটিও ভেঙে পড়ে।
দিকনির্দেশনা দেখানো ডিজিটাল ডিসপ্লেগুলো গাড়িচালকদের কাছে অনেকটাই উপেক্ষিত ছিল।
২০২৩ সালে ৬০ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয়ে গুলশান-২ এ পাইলট প্রকল্প বেসিসে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ এআই-সহায়ক সিস্টেম স্থাপন করে। তবে এটি সফল হয়নি।
এর আগে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসি) পরীক্ষামূলকভাবে চারটি স্থানে এআই-সহায়ক সিস্টেম চালু করেছিল। ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ের সেই ব্যবস্থাও কাজ করেনি।
অন্যান্য মোড়ে, ব্যস্ত সময়ে পুলিশকে ম্যানুয়ালি যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হতো। পরে ডিএসসিসি ৫৪টি মোড়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে এবং গত বছরের জুলাই মাসে এই উদ্যোগ বাতিল করে।
অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, প্রশিক্ষিত কর্মী এবং শৃঙ্খলায় মৌলিক পরিবর্তন না ঘটলে, ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলোরও আগের প্রকল্পগুলোর মতো পরিণতি হতে পারে।
তিনি বলেন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা একটি মডেল হতে পারে কারণ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ট্র্যাফিক লাইট কার্যকরভাবে কাজ করছে। গাড়ির সংখ্যা রাস্তার জায়গার সঙ্গে সমানুপাতিক হওয়া উচিত। সরকারের উচিত গাড়ির মালিকানা কমাতে নিরুৎসাহিত করা এবং উন্নত গণপরিবহনে বিনিয়োগ করা।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            