প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে অটল রয়েছেন। গত ১২ আগস্ট মালয়েশিয়ায়ও তিনি একই প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে ইতোমধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করা হবে ডিসেম্বর মাসে।
যদিও নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে, তারপরও নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে তা ঠেকাতে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতাকর্মীদের এসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সমাবেশে তা তুলে ধরেছেন।
একদিকে এনসিপি (NCP) ঘোষণা দিয়েছে যে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সম্ভব নয়। অপরদিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ও গোষ্ঠী দাবি করছে, নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সংস্কার সম্পন্ন হওয়া জরুরি। এই দাবি ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অনেক সংগঠন ও ব্যক্তি।
বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করে একটি চিত্র দেখানো হচ্ছে যা নির্বাচন পেছানোর পক্ষেই মত দিচ্ছে। জরিপ পরিচালনাকারীদের কেউ কেউ পরিচিত মুখ, আবার অনেকেই সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজেদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। অথচ ঐকমত্য কমিশন ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার নিয়ে ন্যূনতম সমঝোতায় পৌঁছেছে।
যেহেতু ঐকমত্য কমিশনের কিছু কাজ এখনো সম্পূর্ণ হয়নি, তাই এ কাজে ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বর্তমানে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা নির্বাচনি মাঠে সক্রিয় হলেও, নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষের শক্তিরাও নিজেদের মতো করে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি অনেক বিশ্লেষকের মতে, সরকারের ভেতরেই একটি অংশ এই ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন ও জাতীয় রাজনীতির যোগসূত্র
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ডাকসু, চাকসু ও রাকসুর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অশান্ত করে জাতীয় নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হতে পারে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই বিষয়টি নিয়েও গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, লন্ডন বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে যে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হলো তা অনেকের সহ্য হচ্ছে না। এর পর থেকেই ষড়যন্ত্র, শুরু হলো সংঘাত, রক্তপাত। বিভিন্ন কায়দায় ইস্যু সৃষ্টি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি মহল দেখাতে চায়, দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। সবকিছুর পেছনে ওই একটি কারণ। তা হলো নির্বাচনকে বিলম্বিত করা। জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা চলমান এ নিয়ে সন্দেহ নেই। তারেক রহমানের সঙ্গে দুই দিন আগেও বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে তাকে বেশ আশাবাদী দেখা গেছে। তবে গত দুই দিন আবার বিএনপির সমাবেশে তিনি নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন। এটি অমূলক কিছু না। বিভিন্ন অমীমাংমিত বিষয় রয়েছে এগুলো অস্বীকার করা যায় না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না। ১২ আগস্ট বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এই ঘোষণা দেন।
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পক্ষের দলগুলো বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাহত করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাদের সন্দেহ, হামলা-সংঘর্ষের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে কটূক্তি এবং দলের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারও নির্বাচন ঠেকানোর নীলনকশার অংশ। তারা বলছেন, একটি মহলের ‘বিপ্লবী সরকার’ গঠনের পরিকল্পনা আছে। এরই অংশ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা চলছে।
কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে। বর্তমান সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা গেলে দেশে তাদের এক ধরনের কর্তৃত্ব থাকবে। নির্বাচন হলে তারা হয়তো ক্ষমতায় যেতে পারবে না- এমনটি ভেবে বিএনপিকে ঠেকানোর অংশ হিসেবে নানা ঘটনার পরিকল্পনা করছে তারা। এ কাজে নতুন একটি দলকে তারা ব্যবহার করছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, নির্বাচন ঠেকানো। কারণ নির্বাচন ছাড়াই যারা ক্ষমতার স্বাদ পাচ্ছে, নির্বাচনের পর তাদের সেই ক্ষমতা না-ও থাকতে পারে।
তারা বলছেন, গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে বিঘ্নিত করতে এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রতিশ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ব্যাহত করতে মহলটি পরিকল্পিতভাবে মবোক্রেসি, হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর অযোগ্যতা এবং নির্লিপ্ততা পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা গণমাধ্যমে শুধু কথাই বলছেন কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ঠেকানোর ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পাচ্ছে।
আমারবাঙলা/এফএইচ