চব্বিশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ৩১ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা করেছেন শহিদ আদিলের পিতা। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে কথিত গণহত্যায় সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার তদন্ত দেওয়া হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।
সোমবার ঢাকার বিজ্ঞ মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে এই মামলা (সিআর ১১৪২/২০২৫) দায়ের হয়।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০খ, ১৪৩, ২০৩, ৪৩১, ৪৪০, ৫০০, ৫০১, ৫০২, ৫০৪, ৫০৫, ৫০৫(ক) ও ৫০৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরাম’-এর সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের তৎকালীন সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক, একুশে টেলিভিশনের সাবেক প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বিএফইউজে'র সাবেক মহাসচিব (আওয়ামীপন্থী) আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, সাংবাদিক নেতা আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের তৎকালীন (ডিইউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সম্পাদক ফোরামের তৎকালীন আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রতন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির তৎকালীন সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, ডিইউজের (আওয়ামীপন্থি) তৎকালীন সিনিয়র সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক পরিষদের তৎকালীন সদস্য সচিব মোহাম্মদ আবু সাঈদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (আওয়ামীলীগ পন্থী) এর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, বিএফইউজের তৎকালীন মহাসচিব ও নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ দীপ আজাদ, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাবেক সম্পাদক নঈম নিজাম, ডিবিসি নিউজের এডিটর ইন চীফ এন্ড সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম, কালবেলার সাবেক সম্পাদক আবেদ খান, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান, এডিটর'স গিল্ড এর সাবেক সভাপতি ও একাত্তর টিভির সাবেক সিইও মোজাম্মল বাবু, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও যুগান্তরের সাবেক সম্পাদক সাইফুল আলম, গ্লোবাল টিভির নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা, আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক মাঈনুল আলম, বাংলাদেশ জার্নাল এর সম্পাদক শাহজাহান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির হেড অব নিউজ আশিষ সৈকত, বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, একাত্তর টিভির হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ, কিংস নিউজ এর হেড অব নিউজ নাজমুল হক সৈকত, আর টিভির হেড অব নিউজ মামুনুর রহমান খান।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ২০০৯ সাল থেকে ভুয়া/প্রহসনমূলক ও পূর্বনির্ধারিত ফলাফলের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার অনুগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ গত প্রায় ১৬ বছর অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ শাসনের মাধ্যমে দেশকে একটি স্বৈরাচারের লীলাভূমিতে পরিণত করেন। এই স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের স্বত:স্ফূর্ত প্রতিবাদ বিক্ষোভকে বারবার নিষ্ঠুর ও পৈষাচিক কায়দায় দমন করেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ ই জানুয়ারী একতরফা ও সম্পূর্ন ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় শেখ হাসিনা। এর পর থেকে হত্যা, গুম, খুন, দূর্নীতি, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সকল শ্রেণী, পেশার ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ ভাবে জীবন বাজি রেখে তার পদত্যাগের দাবিতে পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্কার গুলির মুখে রাস্তায় নেমে আসে। তার এই স্বৈরাচারী ব্যবস্থার চালিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারিগর ও চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে কিছু মিডিয়া মোঘল ও ধনিক এলিট শ্রেণী। যারা তাদের বক্তব্য বিবৃতি, সংবাদ ও অর্থের মাধ্যমে এই অপশাসনকে চালিয়ে নেয় ও দীর্ঘায়িত করে এবং সরকারকে জনগণের বিরুদ্ধে দাড়াতে প্ররোচনা দেয়। উপরোক্ত ১-৩১ নং আসামীগণ তাদের অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার জন্য ও পুকুর চুরির মাধ্যমে অর্জিত এ বিত্ত বৈভব টিকিয়ে রাখার জন্য অবৈধ সরকারকে অন্যায় পথে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার প্ররোচনা দেয়। সরকারের অবৈধ ক্ষমতাকে ব্যবহার করে তারাও বিভিন্ন স্বার্থ হাসিল করে জনগণের অর্থ লুটপাটে নিয়োজিত। তাদের বিরুদ্ধে দূর্নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।
মামলার বিবরণিতে আরও বলা হয়, ১-৩১নং আসামী বিগত ২৪ জুলাই ২০২৪ ইং তারিখে পালিয়ে যাওয়া অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এডিটর'স গিল্ডের নামে গণভবনে একটি বৈঠকের আয়োজন করে। সেখানে তারা দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আরো গণহত্যা চালাতে সর্বাত্মক সমর্থন প্রদান করে এবং তারা বলে যে, তারা শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন ও প্রয়োজনে যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত। তাছাড়া উপরোক্ত আসামীগণ বিগত ২৭ জুলাই ২০২৪ দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি সমাবেশের আয়োজন করে যেখানে ছাত্র জনতার ফ্যাসিস্ট বিরোধী ন্যায় সঙ্গত আন্দোলন ও মহান আত্মত্যাগতে জঙ্গী সন্ত্রাসী নাশকতা আখ্যা দিয়ে সরকারী পেটোয়া বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত হত্যাকান্ডের দায় জামাত-শিবিরের উপর চাপিয়ে দেওয়ার অপপ্রয়াস চালানো হয়।
উল্লেখ মামলার বাদী চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আদিলের পিতা। শহীদ মোহাম্মদ আদিল ১০ম শ্রেনীর ছাত্র ছিল। সে ১৯ জুলাই ২০২৪ ইং সাইনবোর্ড যাত্রাবাড়ী এলাকার দিকে পুলিশের গুলিতে শাহাদাৎ বরণ করেন।
আমারবাঙলা/এফএইচ