আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাঞ্জাব বাবা গুরু নানকের ভূমি হিসেবে পরিচিত হলেও ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় এই প্রদেশটিতে এখনও কোনও শিখ মন্ত্রীকে শপথ নিতে দেখা যায়নি।
গত মাসে নির্বাচনের পর পাকিস্তানে এখন কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার গঠনের তোড়জোড় চলছে। আর এই পরিস্থিতিতেই সামনে আসছে একটি প্রশ্ন। আর তা হলো- পাঞ্জাব কী দেশভাগের পর প্রথম শিখ মন্ত্রী পাবে?
সোমবার (৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই বিষয়টি সামনে এনেছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
দ্য নিউজ অনুসারে, মরিয়ম নওয়াজ পাকিস্তানের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সংখ্যালঘু এবং শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে যে প্রশ্নটি বেশ ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হলো- পাঞ্জাবে কোনও শিখ মন্ত্রী দায়িত্ব পাবে কি না।
নানকানা সাহাব এবং কর্তারপুরের মতো পবিত্র স্থানগুলো থাকার কারণে পাঞ্জাব প্রদেশটি শিখ সম্প্রদায়ের কাছে উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব বহন করে। প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী এই স্থানগুলো দেখার জন্য সারা বিশ্ব থেকে পাঞ্জাবে আসেন। বিশেষ করে কর্তারপুর করিডর খোলার পর ধর্মীয় পর্যটনের ক্ষেত্রেও পাঞ্জাবের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়েছে।
২০১৩ সালে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) সরদার রমেশ অরোরাকে সংখ্যালঘু আসনে আইনসভার সদস্য করেছিল। আর এর মাধ্যমে পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদ সেবারই প্রথম শিখ আইনপ্রণেতা (এমপিএ) পায়।
রমেশ অরোরা নারোওয়াল জেলা থেকে ২০১৩ সালে শপথ নিয়েছিলেন এবং একটি সংখ্যালঘু আসন খালি হওয়ার পর ২০২০ সালে আবারও পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে ফিরে আসার সৌভাগ্য হয় তার।
এছাড়া ২০১৭ সালে পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলিতে শিখ বিবাহ বিল উত্থাপন করার সময় এই আইনপ্রণেতাও লাইমলাইটে এসেছিলেন। বিলটি সেসময় প্রাদেশিক পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছিল। অরোরা সম্প্রতি পাকিস্তান শিখ গুরুদ্বার পারবন্ধক কমিটির প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন।
একইভাবে, পাঞ্জাবের দ্বিতীয় শিখ আইনপ্রণেতা ছিলেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সরদার মহেন্দ্র পাল সিং। তিনি ২০১৮ সালে এমপিএ হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। পরে তিনি পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির প্রথম সংসদীয় সচিব হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
যাইহোক, ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে কোনও শিখ এমপিএকে পাঞ্জাব মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
বর্তমান প্রাদেশিক পরিষদে পিএমএল-এন-এর সরদার রমেশ অরোরা হলেন একমাত্র শিখ যিনি এমপিএ হিসেবে শপথ নিয়েছেন। অন্যদিকে সরদার মহেন্দ্র পাল সিংয়ের আইনসভায় প্রত্যাবর্তন এখনও বেশ অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। কারণ পিটিআই-সমর্থিত সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল এখনও সংখ্যালঘু আসনের কোটা পায়নি।
এখন দেখার বিষয়, পিএমএল-এন প্রথম শিখ এমপিএ আইনসভায় আনার পর প্রদেশ ও দেশকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে প্রথম মন্ত্রী দেয় কিনা। এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) সংখ্যালঘু সদস্যদের সর্বাধিক সংখ্যক সদস্যকে মূল স্রোতে আনার চেষ্টা করেছে।
আর সেটি শুধুমাত্র সাধারণ আসনে মনোনয়ন প্রদান করেই নয়, সংখ্যালঘুদের ভেতর থেকে সিনেটর বাছাই করেও। কৃষ্ণা কুমারী, গায়ন চন্দের মতো সদস্যরা পাকিস্তানের সিনেটর হয়েছেন এবং ড. মহেশ কুমার মাল্লানির মতো ব্যক্তিত্বরা পিপিপির মনোনয়নে এমএনএ নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া পিপিপির মনোনয়ন পেয়ে নাভিদ অ্যান্থনি সিন্ধ বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন।
খাইবার-পাখতুনখাওয়াতে অবশ্য শিখ সম্প্রদায়ের একজন সদস্যকে প্রাদেশিক মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেছে ইমরান খানের পিটিআই।
পাঞ্জাবে দুই শিখ এমপিএ এখন পর্যন্ত পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। প্রদেশটিতে খ্রিস্টান এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদেরও এমপিএ করা হয়েছে কিন্তু খ্রিস্টান এমপিএ ছাড়া অন্য কোনও সম্প্রদায়ের সদস্যদের এখনও পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর কামরান মাইকেল পাঞ্জাবের প্রথম খ্রিস্টান অর্থমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন এবং ২০১১ সালে প্রাদেশিক সরকারের বাজেটও পেশ করেছিলেন তিনি।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            