পাকিস্তানি এক তরুণীকে বিয়ে করার পর বিয়ের তথ্য গোপন করার অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) জওয়ান মুনির আহমেদ।
শনিবার (৩ মে) তিনি বরখাস্ত হন। বরখাস্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর মুনির আহমেদ জানান, তিনি সদর দপ্তরের অনুমতি পাওয়ার প্রায় এক মাস পর বিয়ে করেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জম্মুর ঘারোটা এলাকার বাসিন্দা আহমেদ ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সিআরপিএফে যোগ দেন। বরখাস্ত হওয়ার ঘটনায় আইনি লড়াইয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। মুনিরের বক্তব্য, ‘আমি আদালতে যাব এবং ন্যায়বিচার পাব বলেই আশাবাদী।’
সিআরপিএফ জানিয়েছে, পাকিস্তানি নাগরিক মিনাল খানকে বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখা ও তার স্বল্পমেয়াদি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাকে নিজ বাসায় রাখার কারণে মুনির আহমেদকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সংস্থাটির দাবি, এ কাজ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
মুনির আহমেদ বলেন, ‘প্রথমে আমি সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে বরখাস্ত হওয়ার খবর জানতে পারি। কিছু সময় পর সিআরপিএফ থেকে একটি চিঠি পাই, যাতে আমাকে বরখাস্তের কথা জানানো হয়। বিষয়টি আমার ও আমার পরিবারের জন্য একটি বড় ধাক্কা। কারণ, আমি পাকিস্তানি নাগরিককে বিয়ের জন্য সদর দপ্তরের অনুমতি নিয়েছিলাম এবং সেটি পেয়েওছিলাম।’
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন গত ২২ এপ্রিল। এ ঘটনার পর ভারত সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশ ছাড়তে বলে। ঠিক তার পরপরই মুনির আহমেদ ও মিনালের বিয়ের খবর সামনে আসে।
মিনাল খান গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে আসেন। তার ভিসার মেয়াদ ছিল ২২ মার্চ পর্যন্ত। তবে আদালত শেষ মুহূর্তে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করে। বর্তমানে তিনি জম্মুতে তার স্বামীর বাসায় আছেন।
মুনির আহমেদ জানান, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি প্রথম পাকিস্তানি নাগরিককে বিয়ের ইচ্ছার কথা কর্তৃপক্ষকে জানান। তখন তাকে পাসপোর্ট, বিয়ের কার্ড ও হলফনামার অনুলিপি জমা দিতে বলা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি আমার নিজস্ব হলফনামা ছাড়াও বাবা-মা, গ্রামের সরপঞ্চ এবং জেলা উন্নয়ন পরিষদের সদস্যদের হলফনামাও যথাযথ চ্যানেলের মাধ্যমে জমা দিই। পরে ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল সদর দপ্তর থেকে অনুমোদন পাই।’
তিনি আরো জানান, তিনি অনাপত্তিপত্র চেয়ে আবেদন করেছিলেন। তবে তাকে জানানো হয়, এমন কোনো আলাদা বিধান নেই এবং সরকারকে অবহিত করেই বিদেশি নাগরিককে বিয়ের প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন পালন করা হয়। মুনির বলেন, ‘২০২৩ সালের ২৪ মে আমরা ভিডিও কলে বিয়ে করি। পরে আমি আমার কর্মস্থল ৭২ ব্যাটালিয়নে বিয়ের ছবি, নিকাহনামা ও বিবাহ সনদ জমা দিই।’
এই জওয়ান আরো বলেন, ‘২৮ ফেব্রুয়ারি যখন তিনি (মিনাল) প্রথম ১৫ দিনের ভিসায় ভারতে আসেন, তখনই আমরা দীর্ঘমেয়াদি ভিসার জন্য আবেদন করি। ইন্টারভিউসহ প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়াও শেষ করি।’ তিনি জানান, আদালত গত বুধবার তার স্ত্রীর বহিষ্কারের আদেশ স্থগিত করে।
ছুটি শেষে মুনির আহমেদ কর্মস্থলে ফিরে গেলে তাকে ২৫ মার্চ সুন্দারবানি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে রিপোর্ট করতে বলা হয়। কিন্তু ২৭ মার্চ তার বদলির আদেশ আসে। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে সময় না দিয়েই বদলির আদেশ কার্যকর করা হয় এবং সঙ্গে সঙ্গেই তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এরপর মুনিরের সামনে ভূপালেই নতুন দায়িত্বে যোগ দেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না। তিনি ২৯ মার্চ ভূপালে যোগ দেন। সেখানে পৌঁছে তিনি কমান্ডিং অফিসার ও তার সহকারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। মুনির আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি বরখাস্তের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হবেন। তার প্রত্যাশা, আদালত থেকে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।
আমারবাঙলা/জিজি