মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গারো জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব “ওয়ানগালা উৎসব” মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট ইউনিয়নের ফুলছড়া গারো লাইন মাঠে দিনব্যাপী এ উৎসবকে কেন্দ্র করে মিলনমেলায় পরিণত হয় পুরো এলাকাজুড়ে।সকাল থেকেই ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত গারো সম্প্রদায়ের মানুষজন এসে ভিড় জমাতে থাকেন মাঠে নির্মিত প্যান্ডেলে। বাদ্যযন্ত্রের সুরেলা বাজনায় হারমোনিয়াম, গিটারসহ স্থানীয় বাদ্যযন্ত্রে শিল্পীরা পরিবেশন করেন ওয়ানগালার গান। সেই সুরের তালে তালে বর্ষার ফসল ঘরে তোলার আনন্দে নাচে-গানে উদযাপনে অংশ নেন সবাই। নতুন ফসল সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে উৎসর্গের মধ্য দিয়েই শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে গারো খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনায় অংশ নেন। এরপর নতুন ধান উৎসর্গ ও গারোদের ঐতিহ্যবাহী নাচ-গানের পরিবেশনায় রঙিন হয়ে ওঠে মঞ্চস্থল।প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইসলাম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অনুপ চিসিম এবং সঞ্চালনায় ছিলেন গারো নকমা অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সামুয়েল যোসেফ হাজং।স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত ফাদার শ্যামল জেমস গমেজ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ মুজিবুর রহমান, মনিপুরি ললিতকলা একাডেমির উপপরিচালক প্রভাস সিংহ, জাতীয় নাগরিক পার্টির জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক নিলয় রশিদ এবং ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া।
গারো সম্প্রদায়ের সদস্যরা জানান, ‘ওয়ানা’ অর্থ দেবদেবীর দানের উপকরণ আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। ফসল ঘরে তোলার আগে শস্যদেবতা মিসি সালজং-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রার্থনার মাধ্যমে এ উৎসব পালন করা হয়। এখন খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণের পর নতুন ফসল যিশু খ্রিস্টের নামে উৎসর্গ করেন তারা।এ সময় গারো নকমা অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সামুয়েল যোসেফ হাজং বলেন, “ওয়ানগালা আমাদের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব। দেবতার নামে উৎসর্গ না করে আমরা নতুন শস্য গ্রহণ করি না। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিচয় ধরে রাখতে এ আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”দিনব্যাপী আয়োজনে নাচ-গান, উৎসর্গ ও মিলনমেলার মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হলেও এর রং ও আনন্দ গারো জীবন-সংস্কৃতিতে রেখে যায় স্থায়ী স্মৃতি।
আমারবাঙলা/এসএবি