ফেনীর পরশুরাম সীমান্ত ও বিলোনিয়া দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় ধরা পড়েছে নয় জন বিদেশি, এদের সকলে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। অনুসন্ধানে মানবপাচারে বাংলাদেশ ও ভারতের মানবপাচারচক্রের যোগসাজশের তথ্য মিলেছে। এ নিয়ে প্রশাসনে ও এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
শনিবার (২২ মার্চ) রাতে আবদেয়ালি মোহাম্মদ আলী (২৬) নামে এক সোমালিয়ান নাগরিককে পরশুরামের নিজকালিকাপুর সীমান্তে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বুধবার বাউরপাথর সীমান্ত দিয়ে নাইজেরিয়ান নাগরিক উয়াচু ইউজুচুকু কালিসতুসকে (২৭) আটক করে বিজিবি।
বিজিবি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে পরশুরাম সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ বারবার ঘটছে। একই সূত্রে আরও জানা গেছে, একবছরে এ সীমান্ত ও বিলোনিয়া দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় ধরা পড়েছে নয় জন বিদেশি, এদের সকলে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। অনুসন্ধানে মানবপাচারে বাংলাদেশ ও ভারতের মানবপাচারচক্রের যোগসাজশের তথ্য মিলেছে। দেশের একই সীমান্ত দিয়ে এবং বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের কারণ জানার চেষ্টা চলছে।
বিজিবি ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, অবৈধ অনুপ্রেবেশকারীরা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। চলতি বছরে অবৈধ অনুপ্রবেশ করায় নয় আফ্রিকান নাগরিককে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে অনুপ্রবেশের জন্য কেন ফেনী সীমান্তকে বেছে নেয় তা অজানা। তাদের আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমা বলেন, বিদেশি নাগরিকদের দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের সুষ্পষ্ট কারণ এখনো নিশ্চিত নয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা পরশুরাম সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের কারণ স্বীকার করেননি। এতে একটি চক্র জড়িত রয়েছে। এ চক্রের দুই সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাদের জিাসাবাদে বিস্তারিত জানা যাবে। অনুপ্রবেশকারীদের রিমান্ডে নিলেও তারা এ ব্যাপারে কোন তথ্য দেয়না। পরে আদালতের মাধ্যমে জামিন পেয়ে মুক্ত হয়ে তারা বাংলাদেশের ভিসা পায়।
একই সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বিজিবির হাতে আটককৃত কারো কাছে বৈধ কোন কাগজপত্র ছিল না। আটককৃত বিদেশী নাগরিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তাদের পাসপোর্ট ও কাগজপত্র হারিয়ে যায়, মোবাইলফোন নষ্ট থাকে। তারা এসব কথা জিজ্ঞাসাবাদে বলে থাকেন। মানবপাচারকারী ও আইনজীবীদের শিখিয়ে দেওয়া এসব কথা সকলেই বলে থাকেন। এসব তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা হলে, তারা সহজে মুক্তি পেয়ে যান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী গ্রামে এক বছরে নয় বিদেশী নাগরিক আটক। ফেনী সীমান্তে আফ্রিকান নাগরিকদের অবৈধ অনুপ্রবেশের সংখ্যা বাড়ছে। বিজিবি বলছে, দেশে অনুপ্রবেশের জন্য ফেনী সীমান্তকে বেছে নেওয়ার কারণ অজানা। স্থানীয়দের তথ্যমতে, এতে ভারত ও বাংলাদেশের মানবপাচার চক্রের যোগসাজশ রয়েছে। পুলিশ বলছে, রিমান্ডে নেওয়া হলেও তাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোন তথ্য মেলে না।
নিজকালিকাপুর ও পৌর এলাকার বাউরপাথর গ্রামের মীরপাড়া ও বিলোনিয়া সীমান্ত মানবপাচার ও চোরাচালানির নিরাপদ রুট মনে করে মানবপাচারকারীরা। অভিযোগ রয়েছে এ চক্রে স্থানীয় লোকজন জড়িত রয়েছে। মানবপাচারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর মির্জানগর ইউনিয়নের উত্তর কাউতলির রাজু (৩৫) ও নিজ কালিকাপুর গ্রামের মোহাম্মদ ইব্রাহিম (৫০) নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করে ভারতের বিলোনিয়া পুলিশ। এবছর ২১ জানুয়ারি সুদানের একজন নাগরিককে পাচারের সঙ্গে জড়িতের অভিযোগে নিজ কালিকাপুর গ্রামের মো. এমরান (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পরশুরাম মডেল থানা পুলিশ।
পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একটি চক্র বিদেশিদের পারাপার করে থাকে। মানবপাচারের সাথে কারা জড়িত পুলিশ তদন্ত করছে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা, এসব বিদেশি নাগরিক ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে চেষ্টা করে। অনেকে দালালের মাধ্যমে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার কার্ড তৈরি করে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে।
আমারবাঙলা/ইউকে
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            