নিজস্ব প্রতিবেদক: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ ছয়টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন।
অপরদিকে সম্পাদক পদে শাহ মঞ্জুরুল হকসহ আটটি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া বাকি রয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে থাকা একাধিক ব্যক্তি জানান, সভাপতি ও পাঁচটি সদস্য পদে বিএনপির প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হতে যাচ্ছেন। সম্পাদক পদ, দুই সহসভাপতি, দুই সহসাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ ও দুটি সদস্য পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হতে যাচ্ছেন।
এর আগে অনেক নাটকীয়তার পর শনিবার (৯ মার্চ) বিকেল ৩টার পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়।
ভোট গণনা ও ফল ঘোষণা উপলক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে প্রচুর পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যে ভবনে ভোট গণনা করা হচ্ছে সেখানে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
এদিকে ভোট গণনা ছাড়াই সম্পাদক পদে এক প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণার বিষয়টি আজ প্রত্যাহার করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের স্বাক্ষরিত এক পত্রে শনিবার বলা হয়, ‘একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোট গণনার আগেই দুঃখজনকভাবে বহিরাগত মাস্তান শ্রেণি কর্তৃক আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে লিখিত দিতে বাধ্য করা হয়। যদিও ইহা অর্থহীন ঘোষণা, তবুও কূটতর্ক নিরসনের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকলকে তাহা ‘ইগনোর’ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ভোট গণনা করেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে গতকাল হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটনায় ভোট গণনার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা আজ বসে ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনায় স্বতন্ত্র সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও বিএনপির প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
গতকাল ৮ মার্চ ভোরে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন আইনজীবী বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ভোট বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হয়। তখন থেকেই স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথি ও বিএনপির প্যানেলের প্রার্থীরা রাতেই ভোট গণনার পক্ষে সোচ্চার হন। তারা নির্বাচন কমিশনকে ভোট গণনা করে ফল ঘোষণা করতে বলেন। শুক্রবার ভোরে হাতাহাতি-মারামারির ঘটনাও ঘটে। এতে কয়েকজন আইনজীবী আহত হন। যেখানে একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে মারধর করা হয়। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বহিরাগতরা এই হামলা করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক শুক্রবার বেলা ৩টায় ‘দিনের আলোতে’ ভোট গণনা চাচ্ছিলেন। এ বিষয় নিয়েই একপর্যায়ে দুপক্ষের সমর্থকদের মাঝে হট্টগোল শুরু হয়।
এক পর্যায়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথিকে বিজয়ী ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের প্রধান অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের। তিনি বলেন, ভোট গণনার সময় অন্য সম্পাদক প্রার্থী উপস্থিত না থাকায় সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো।
পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সুপ্রিম কোর্টে এসে বহিরাগতদের বের করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। দুই দিনে ৭ হাজার ৮৮৩ জন আইনজীবীর মধ্যে ৫৩১৯ আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, দুই সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মোহাম্মদ আবু ওবায়েদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, দুটি সহ-সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির ও হুমায়ুন কবির পল্লব। সাতটি সদস্য পদে সৌমিত্রসরদার রনী, মো. খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, রাশেদুল হক খোকন, মাহমুদা আফরোজ, বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, রায়হান রনী।
বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল), দুই সহ-সভাপতি পদে মো. হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. রেজাউল করিম, দুটি সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান মিলন ও মো. আব্দুল করিম। সাতটি সদস্য পদে ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, মো. রাসেল আহমেদ, মো. আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মো. ইব্রাহিম খলিল। এই দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে ইউনুছ আলী আকন্দ এবং সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান নির্বাচন করছেন।
এছাড়া সম্পাদক পদে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            