নুসরাত জাহান ঐশী: আজকে বিপ্লবের বাণী-চেতনা ছড়িয়ে দিতে সংস্কৃতির চর্চা প্রয়োজন। সংস্কৃতির মাধ্যমে বিপ্লবের চেতনা মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারব। কিন্তু সংস্কৃতি চর্চা আজ বাংলাদেশে অন্ধকারে আচ্ছন্ন।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘লেনিন ও বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা: দেশে দেশে মুক্তির লড়াই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন লেখক প্রাবন্ধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তার সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য দেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, লেখক বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু। এছাড়া কবিতা আবৃত্তি করেন হাসান ফকরী।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আজকে মিডিয়া, প্রচার মাধ্যম সাধারণ মানুষের হাতে নেই। এটা মানুষের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। আজকে কোথাও সংস্কৃতির চর্চাই নেই। কারণ ক্ষমতাসীনরা সংস্কৃতি চর্চা চায় না।
সংস্কৃতির চর্চাকে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এটা হচ্ছে সমাজ বিপ্লবের সংস্কৃতি। নইলে সভ্যতা খাদের মধ্যে পড়বে। আজকে প্রশ্ন হচ্ছে, সমস্ত সভ্যতা খাদের মধ্যে পড়বে, নাকি সব সভ্যতা যান্ত্রিক হয়ে পড়বে। এটা বানানো নয়, বাস্তব সত্য।
অধ্যাপক আরও বলেন, আজকে দেখতে পাচ্ছি, ব্যক্তিমালার পৃথিবী কোন প্রান্তে গিয়ে পৌঁছেছে। পুঁজিবাদী সভ্যতা চরম উৎকর্ষে পৌঁছেছে। কিন্তু মানুষ চরম দুর্গতির মধ্যে রয়েছে। এই করোনা ভাইরাস ছিল পুঁজিবাদের দূত। এরকম মহামারি আবারও আসতে পারে।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা নাকি প্রাচুর্যে ভরে দেবে। শ্রমিক-পুঁজির দ্বন্দ্ব থাকবে না। এর কারণে পৃথিবী যে কত ভয়ঙ্কর হতে পারে, সেটা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
প্রাচুর্য আসবে। তবে সেই প্রাচুর্য মানুষের কাছে পৌঁছাবে না। মানুষ যন্ত্রের দাসে পরিণত হবে। লেনিন এখানে গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক বিপ্লব করতে হলে লেনিনকে আঁকড়ে ধরতে হবে।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, লেলিনের কথাই আছে, কোনো জাতি যদি অন্য জাতির ওপর নিপীড়ন করে, তাহলে ঐ জাতি নিজেও মুক্ত হতে পারে না। পুজিবাদকে বেঁচে থাকতে হয় দমন-পীড়নের মাধ্যমে।
এখনও পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ হয় মানুষকে ধ্বংস করার জন্য। পুঁজিবাদ এখন এমন দিকে যাচ্ছে, যেখানে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষাই মুশকিল হবে। তাই বিশ্বব্যাপী জনগণের মাঝে মুক্তির লড়াই জাগ্রত করতে হবে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, লেনিন সমাজতন্ত্রের যে বিপ্লব শুরু করেছেন, তা আজও শেষ হয়নি। বিপ্লব কোনো ইলেক্ট্রিক সুইচ নয়, যে একসময় অন্ধকার ছিল, সুইচ দেওয়ার সাথে সাথে আলো এসে পড়বে৷ এর একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে।
আমরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রব্যবস্থা ছেদ করে নতুন রূপরেখা তৈরি করতে হবে, এটা কেউ বোঝেনি। বর্তমান সরকার বলছে, উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। স্থিতিশীলতা বলতে সরকারের স্থায়িত্ব। এভাবে তারা গত ১৫ বছর ক্ষমতায় টিকে আছে।
বদরুদ্দীন উমর বলেন, দুনিয়ায় লোকসংখ্যা এখন ৮০০ কোটি। ২০ বছর পরে সেটি ১৪ থেকে ১৫০০ কোটি হবে। খাদ্য উৎপাদনের কী হবে? পানি নেই, তার কী হবে? কিছু চোর-বাটপার অবশ্য বিদেশে ব্যবস্থা করে রেখেছে। কিন্তু আমাদের কী হবে?
এখানকার কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখলের কোনো চিন্তা করেনি। ক্ষমতা দখল না করে সমাজতান্ত্রিকরা নির্বাচনে প্রবেশ করলেন। কিন্তু এ রকম একটি দেশে নির্বাচন দিয়ে কিছু হয় না। একটি শক্তিকে সরাতে আরেকটি শক্তি প্রয়োগ করতে হয়।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সব প্রতিষ্ঠানের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। নির্বাচনের আগে পত্রিকায় সরকারের যে কড়া সমালোচনা হতো, তা আর দেখা যায় না। এ সরকারকে হটাতে হলে শক্তির প্রয়োগ ছাড়া উপায় নেই। এ শক্তি বাইরে থেকে নয়, বরং জনগণের মধ্য দিয়ে দেশের ভেতর থেকে আসতে হবে।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            