খুলনার কয়রা ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া ও খোলপেটুয়া নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে লাখ লাখ ঘনফুট বালু তোলা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ বাণিজ্যের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শ্যামনগর উপজেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুর রহমান বাবু ও উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব আনোয়ারুল ইসলাম আঙ্কুর। সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত ছয়টি ড্রেজার চালিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকার বালু বিক্রি হচ্ছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে এই সিন্ডিকেট নদী থেকে বালু তুলে কোটি কোটি টাকা আয় করছে।
বাবু একসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আঙ্কুরকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে তারা ব্যবসা চালাচ্ছেন। কয়রা, শ্যামনগর, আশাশুনি ও দাকোপের বিভিন্ন ঘাটে তাদের নিয়ন্ত্রণে বালু তোলা হয়। ড্রেজার মালিকদের প্রতি ঘনফুটে ২-৩ টাকা ‘কমিশন’ দিতে হয়।
এক শ্রমিক জানান, প্রতি রাতে একটি ড্রেজার থেকেই এক থেকে দুই লাখ ঘনফুট বালু তোলা হয়, যা ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়। দিনের বেলায় ড্রেজারগুলো নদীর ধারে লুকিয়ে রাখা হয়। টাকা জমা দেওয়া হয় আনোয়ারুলের ম্যানেজারের কাছে। অবৈধ এই উত্তোলনে নদীর বাঁধ আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে চক্রের সদস্যরা হুমকি দেয়। কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন, ‘বালু তোলায় নদীভাঙন ভয়াবহ হয়েছে। বিষয়টি আমি বারবার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
বাঁধের ঠিকাদার আমিনুর ইসলাম স্বীকার করেন, তারা হারুন নামে এক ডিলারের কাছ থেকে বালু কিনেছেন, তবে উৎস সম্পর্কে কিছু জানেন না। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালামের অভিযোগ, ‘কপোতাক্ষ নদ দুই উপজেলার হলেও শ্যামনগরের প্রভাবশালীরা খোলপেটুয়ার চরে বালুবাণিজ্য চালাচ্ছেন। টাকা ছাড়া এক ফুট বালুও তোলা যায় না।’
অভিযোগ নিয়ে যুবলীগ নেতা আব্দুর রহমান বাবু বলেন, “সরকার ঘোষিত বালুমহাল থেকে ইজারা নিয়ে নিয়ম মেনে বালু তোলা হচ্ছে। কেউ যদি অবৈধভাবে নদী থেকে বালু নেয়, তার দায় আমাদের নয়।” যুবদল নেতা আঙ্কুরও নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল বাকী বলেন, ‘কয়রায় কোনো বালুমহাল নেই। উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নদী থেকে বালু তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ আইন ভেঙে বালু তুললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না হলে উপকূলের নদীভাঙন আরও ভয়াবহ হবে।
আমারবাঙলা/এফএইচ