মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করে প্রতিবন্ধী ভাতার লাখ লাখ টাকা হতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। এনআইডির মাধ্যমে সনাক্ত করা হয়েছে নাম্বার মালিকদের। তথ্য চেয়ে আবেদন করলে অসন্তোষজনক জবাব দিয়েছেন দায়িত্বরত ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা।
গত ২৯ আগস্ট, মাজেদা আক্তার নামক একজন প্রতিবন্ধীর ভাতা আত্মসাৎ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এর পর থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে এমন একাধিক অভিযোগকারী। সত্য উদঘাটন করতে শুরু হয় অনুসন্ধান। জানা যায়, ভাতার জন্য আবেদকারীদের দেওয়া মোবাইল নাম্বার ব্যতীত অন্য নাম্বারে চলে যাচ্ছে টাকাগুলো। যেসব নাম্বারে টাকা যাচ্ছে এর তথ্য চেয়ে দু’জনের নামে তথ্য প্রাপ্তির আবেদন পত্রের মাধ্যমে আবেদন করা হয় গত অক্টোবরের ৬ তারিখ। এতে সংযুক্ত করা হয় অতিরিক্ত পাতা।
দীর্ঘদিন গড়িমসির একপর্যায়ে তথ্য দিয়েছেন একজনের। আরেকজন তথ্য কোথায়? জানতে চাইলে, সংযুক্ত অতিরিক্ত পাতায় কোনো তথ্য দেওয়া হবেনা বলে জানান দায়িত্বরত সমাজসেবা কর্মকর্তা তাজিমুল হালিম। যদিও তথ্য প্রাপ্তি ফরমে লেখা রয়েছে প্রয়োজনে অতিরিক্ত পৃষ্ঠা ব্যবহার করা যাবে। প্রাপ্ত তথ্যের সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে সন্দেহ বেড়ে যায় আরও। ব্যবহার করা হয় ভিন্ন কৌশল। খোঁজ মেলে আরও দু’জন ভুক্তভোগীর। তাদের একজনের নাম মঞ্জুরুল ইসলাম, বাড়ি বাঘবেড় ইউনিয়নের চারিয়াকান্দা গ্রামে। আবেদন করা হয় ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে। আরেকজনের নাম ছুলেমা খাতুন, বাড়ি পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের রায়কান্দুলিয়া গ্রামে। আবেদন করা হয় ৩ নভেম্বর ২০২৪ সালে।
স্বামী হারা ছুলেমা খাতুন বলেন, ‘এক পা ছোট নিয়ে, অন্যের বাড়ি বাড়ি কাজ করে দিনাতিপাত করছি। আমার প্রথম ধাপের ১০ হাজার ২’শ ও পরের ধাপে ২৭’শ ৫০ টাকা আত্মসাৎ করেছে।’
মঞ্জুরুল ইসলামের স্ত্রী রেনুয়ারা খাতুন জানান, তার অসুস্থ্য স্বামীকে ঘরে রেখে প্রায় আড়ই বছর যাবৎ ঘুরে বেড়াচ্ছেন সমাজসেবা কার্যালয়ে। নানা টালবাহানায় শুধু হয়রানির শিকার হয়েছেন কিন্তু টাকা পাননি আজও। কোন নাম্বারে যাচ্ছে টাকাগুলো তাও খুঁজে বের করা হয়েছে তবে বন্ধ রয়েছে সেইসব নাম্বারগুলো। পাওয়া গিয়েছে সিম রেজিস্ট্রেশন মালিকদের। মঞ্জুরুল ইসলামের টাকা যাচ্ছে পাশের হালুয়াঘাট উপজেলার শদেশী ইউনিয়ন নাশুল্যা গ্রামের বাসিন্দা ফজল হোসেনের মেয়ে সাজেদা খাতুনের নাম্বারে। ছুলেমা খাতুনের টাকা যাচ্ছে ধোবাউড়া উপজেলার পোড়াকান্দুলি গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে কেরামত আলী নাম্বারে। যাদের নাম্বারে টাকা যাচ্ছে এদের কাউকেই চিনেন না ভুক্তভোগীরা। এসব কার্যক্রমে এখন তাদের সন্দেহের তীর সমাজসেবা কর্মকর্তাদের দিকে। প্রতারণা করে টাকা আত্মসাতকারী এবং জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন তারা।
সমাজসেবা কর্মকর্তা তাজিমুল হালিম জানান, বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করা হয়েছে, বাকিগুলোও তদন্ত করে দেখা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে এমন বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গিছেয়ে এবং তা দ্রুত সমাধান করে ভাতাভোগীদের কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব।
আমার বাঙলা/আরএ