নোয়াখালীতে মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে একই পরিবারের সাতজন নিহত হওয়ার ঘটনায় এখনও থামেনি স্বজনদের কান্না আর গ্রামের মানুষের শোক। দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাস চালক পলাতক থাকায় দ্রুত তার গ্রেপ্তারের দাবিও জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা।
সোমবার (৭ আগস্ট) সকালে সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী এলাকায় নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কবরের সামনে লিপি আক্তার নামের এক নারী কাঁদতে কাঁদতে ছোট বোন ও ভাগনিকে ডাকছেন। আরেক দিক থেকে কান্নার শব্দ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিক জুড়ে। স্বজনদের আহাজারি থামানো যাচ্ছে না।
বেঁচে ফেরা আব্দুর রহিম জানান, “দুর্ঘটনায় আমার স্ত্রী, শ্বাশুড়ি, তিন নাতনি ও দুই পুত্রবধূ পানিতে ডুবে মারা গেছে। চালক রাসেল ঘুমিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সে আমাদের ডুবন্ত অবস্থায় ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এখনো তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “আমার দুই ছেলে বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে এই ঘটনায় মামলা করবো। চালককে ছাড় দেওয়া হবে না। দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।”
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেছে, প্রবাসী বাহার উদ্দিনকে ওমানে থেকে আনার জন্য মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে পরিবার সদস্যরা মাইক্রোবাসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়ারপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাসটি খালে পড়ে। গাড়ি ডুবে যাওয়ার সময় চালক নিজেই দরজা খুলে বেরিয়ে পালিয়ে যায়, অথচ গাড়ির মধ্যে আটকে থাকা পরিবারের অন্য সদস্যদের উদ্ধারে সহায়তা করেনি।
নিহতরা হলেন- বাহার উদ্দিনের স্ত্রী কবিতা আক্তার (২৪), মেয়ে মীম আক্তার (২), ভাতিজি রেশমা আক্তার (৯), লামিয়া ইসলাম (৮), মা মোরশেদা বেগম (৫০), নানি ফয়জুন নেছা (৭০) ও ভাবি লাবনী আক্তার (২৫)। নিহত সবাই একই এলাকার বাসিন্দা।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোবারক হোসেন জানান, “পরিবার মামলা করলে আমরা ব্যবস্থা নেব। চালক পলাতক, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
বুধবার বিকেলে নিহতদের জানাজার নামাজ শেষে ছয়জনকে পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়। আর বৃদ্ধা ফয়জুন নেছার মরদেহ তার নিজ গ্রামে নেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা দ্রুত চালক গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন এবং শোকাহত পরিবারকে দ্রুত ন্যায়বিচার দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
আমারবাঙলা/এফএইচ