ফেনীর পাঁচগাছিয়ায় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ছেলেদের কথিত অপরাধে সালিশে তাদের মায়েদের প্রকাশ্যে নাকে খত দিতে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার (২ মে) রাতে এ ঘটনা ঘটে। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ওই মা-বাবাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় অভিযোগ ওঠা বিএনপি নেতার নাম দেলোয়ার হোসেন দেলু। তিনি পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক। গতকাল রবিবার ফেনী সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত পত্রে তার পদ স্থগিত করেন।
এ ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী মা-বাবা ও তাদের স্বজনরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ফেসবুক ব্যবহারকারী অনেকেই এ ব্যাপারে অভিযোগ ওঠা বিএনপি নেতার শাস্তি দাবি করেন। পুলিশ বলছে, ভাইরাল ভিডিওর বিষয়ে তারা খোঁজখবর নিচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামের খালুর দোকান এলাকার। ওই এলাকার দুই ছেলের বিরুদ্ধে মুরগি ও কবুতর চুরির অপবাদ দিয়ে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে আশপাশের এলাকার মানুষকে ঘটনাস্থলে জড়ো করেন মুরগি ও কবুতরের মালিক জাহাঙ্গীর। সালিশ বৈঠকে বিএনপি নেতা দেলু ওই দুই ছেলের মায়েদের নাকে খত দেওয়ার নির্দেশ দেন। যেটি কয়েকজনকে লাঠি হাতে বাস্তবায়ন করতে দেখা যায় ভিডিওতে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেলু বলেন, পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামের তফাজ্জল মেম্বারের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে হাঁস, মুরগি চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ওই এলাকায় ভাড়াটিয়া দুই ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। পরে স্থানীয়দের অনুরোধে বিষয়টি নিয়ে মাথিয়ারা এলাকার খালুর দোকানের সামনে সালিশ বৈঠক বসে। বৈঠকে অভিযোগ ওঠা দুই ছেলে উপস্থিত না হয়ে তাদের মায়েদের পাঠান। সালিশে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তখন উপস্থিত মায়েরা ছেলের পক্ষে শাস্তি ভোগ করতে রাজি হন। তখন সালিশদাররা মা-বাবাকে মাটিতে এঁকে দাগ টেনে দিয়ে মাথা নিচু করে ওই দাগ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য বললে তারা দুজনই যান।
ওই ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে স্বীকার করে বিএনপি নেতা বলেন, সামাজিক কিছু পরিবেশ-পরিস্থিতিতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোনো কোনো সময় এ কাজগুলো করতে হয়।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান জানান, বিষয়টি তারা শুনেছেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
আমারবাঙলা/ইউকে