চট্টগ্রাম বন্দর হলো বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এও বলেন, এটি দুর্বল হলে চলবে না। কারণ চট্টগ্রাম বন্দর শুধু বাংলাদেশ নয়; নেপাল, ভুটান দক্ষিণ এশিয়ারও হৃৎপিণ্ড। তাই আগামীর অর্থনীতির জন্য বিশ্বের সেরা অপারেটরের কাছে এ বন্দর দিয়ে দিতে হবে। তাহলে আমরা সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করতে পারব।
আজ বুধবার (১৪ মে) অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো নিজজেলায় যান তিনি। সকাল সোয়া ৯টায় চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে এক মতবিনিময়সভায় যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমরা যদি একমত হই, বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড হলো চট্টগ্রাম বন্দর; তাহলে এটা যে সাইজের বন্দর আছে, সেটা চলবে না। এটাকে বিশ্বসাইজের করতে হবে। তাহলে এটা দেশজুড়ে সচল হবে।’
বন্দরের পরিবর্তন নিয়ে আগে লেখালেখি করলেও এবার সুযোগ পেয়েছি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটাকে সত্যিকারের বন্দর হিসেবে তৈরি করতে প্রথম দিন থেকে কাজ শুরু করেছি। বে-টার্মিনাল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরসহ চলমান বড় প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সন্তোষজনক হলেও সেগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গতি ও জবাবদিহি—দুটিই একসঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে।’ আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করি, চট্টগ্রাম বন্দরকে শুধু দেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।’
শ্রমজীবী কর্মী ও বেসরকারি অপারেটরদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘বন্দর কেবল ইট-পাথরের স্থাপনা নয়, এটিই মানুষের কর্মক্ষেত্র। তাই প্রতিটি কর্মীকে প্রশিক্ষিত, নিরাপদ ও সম্মানজনক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’
মতবিনিময়সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, চেম্বার প্রতিনিধি, কাস্টমস কমিশনার, বেসরকারি টার্মিনাল অপারেটর ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনায় বন্দরের সক্ষমতা, চলমান চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ধারা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টা কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করবেন। এরপর চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যা এবং অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কের বাস্তবায়নের অগ্রগতি পরিদর্শন করবেন। সার্কিট হাউসের অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের ২৩ একর জমির নিবন্ধিত দলিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবেন।
দুপুরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশে সার্কিট হাউস ত্যাগ করবেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠান। সমাবর্তনে ২০১১ থেকে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ২২ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র প্রদান করা হবে। এই অনুষ্ঠানে ২০১৫-২০২৫ সালের ২২ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হবে। চবি কর্তৃপক্ষ ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের জন্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে যোগদানের পাশাপাশি, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঐতিহাসিক জোবরা গ্রাম পরিদর্শন করবেন, যেখানে তিনি বিখ্যাত ক্ষুদ্রঋণ ধারণার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
আমারবাঙলা/ইউকে