গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় আলোচিত রিকশাচালক ছকু মিয়া হত্যা মামলার বাদী মোজাম্মেল হককে (২২) পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। চার বছর আগে সংঘটিত ওই হত্যা মামলার আসামিরাই মামলা তুলে না নেওয়ায় মোজাম্মেলকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মোজাম্মেলের দাবি, স্থানীয় বিএনপি নেতা রঞ্জু মিয়ার নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়।
ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাদুল্লাপুরের লাল বাজার এলাকার একটি স্কুল মাঠে। গুরুতর আহত মোজাম্মেল বর্তমানে সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় শনিবার রাতে মোজাম্মেল হক বাদী হয়ে সাদুল্লাপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় দামোদরপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রঞ্জু মিয়াকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া, রঞ্জু মিয়ার পাঁচ ভাইসহ আরও নয় জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন পূর্ব দামোদরপুর গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে আঙ্গুর মিয়া (৫৫), রাখু মিয়া (৫০), মঞ্জু মিয়া (৪০), সঞ্জু মিয়া (৩৫), মন্টু মিয়া (৪০), একই গ্রামের আবুল কাশেম (৫৭), শিশির আলিফ (১৮), সিফাত সরকার (২২) ও সাগর মিয়া (২০)। মোট ১০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজ উদ্দীন খন্দকার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ছকু মিয়া হত্যা মামলার বাদীকে মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মোজাম্মেল হক ঢাকা থেকে বাবার হত্যা মামলার হাজিরা দিতে গ্রামে এসেছিলেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি থেকে লালবাজারে পৌঁছালে রঞ্জু ও তাঁর ভাইসহ ৮-১০ জন তাঁকে জোর করে স্কুলের মাঠে নিয়ে যান। সেখানে তাঁরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেন। মোজাম্মেল অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। পরে তাঁর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
মোজাম্মেল হক জানান, বাবার হত্যার বিচার চাওয়ার পর থেকেই তাঁরা আসামিদের পক্ষ থেকে হুমকির মুখে আছেন। আসামিদের ভয়ে তাঁরা ভিটেমাটি বিক্রি করে বোনসহ এখন ঢাকায় বসবাস করছেন। তিনি বলেন, “চার দিন আগে মামলার হাজিরা দিতে গ্রামে আসায় আমার ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়। হত্যা মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে অভিযুক্তরা মরিয়া। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে বাবার হত্যার ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রঞ্জু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি এবং তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩ জুন পূর্ব দামোদরপুর (পুটিমারি) গ্রামের রিকশা চালক ছকু মিয়া (৫০) মারা যান। এ ঘটনায় ১৬ জুন তাঁর ছেলে মোজাম্মেল হক আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলন, ময়নাতদন্ত ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর মামলা নথিভুক্ত হয়, যা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৫ মে মোজাম্মেল হকের সঙ্গে প্রতিবেশী মন্টু মিয়ার কলেজপড়ুয়া মেয়ের প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে পালিয়ে যান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মন্টু মিয়া ও অন্যরা ছকু মিয়াকে আটক করে রাতভর নির্যাতন করেন। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ৩ জুন তিনি মারা যান।
ঘটনার পাঁচ দিন পর মোজাম্মেল ও মেয়েটিকে গাজীপুর থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে আনা হয়। পরে স্থানীয় সালিশ বৈঠকে ছকু মিয়ার পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই ছকু মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল হত্যা মামলাটি করেন।
বাবার পর ছেলেকেও তুলে নিয়ে মারধরের ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মোজাম্মেলকে মারধর করে আহত করার ঘটনাটি তাঁর বাবাকে নির্যাতনের ধারাবাহিকতা। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। এলাকাবাসী এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
আমারবাঙলা/এফএইচ