নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামকে শান্তি, সৌহার্দ্য ও মানবতার ধর্ম আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইমামদের প্রতি তৃণমূলে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে সবাই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ আমাদের দেশে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা বা নির্যাতন না করার জন্য আপনাদের (ইমাম-মুয়াজ্জিন,আলেম, ওলামা) সহযোগিতা চাই। আপনাদেরকে তৃণমূলে শান্তি বজায় রাখার জন্য কাজ করতে হবে যাতে আমরা দেশের আরও উন্নয়ন করতে পারি।’
আজ অপরাহ্নে ‘জাতীয় ইমাম সম্মেলন ও পুরস্কার বিতরণ-২০২৩’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে শেখ হাসিনা একথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে ধর্ম মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী একই অনুষ্ঠানে সারাদেশে ষষ্ঠ দফায় নবনির্মিত আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।
নিজেদের ধর্ম পালনের পাশাপাশি দেশে বসবাসকারি অন্য ধর্মাবলম্বী যারা রয়েছেন তারা যেন সঠিকভাবে নিজ নিজ ধর্ম কর্ম করতে পারেন তা নিশ্চিত করারও আহবান জানান সরকার প্রধান।
সরকার প্রধান কোরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে বলেন, ‘যার যার ধর্ম সে পালন করবে এই বিষয়টা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। অন্যের ওপর কোন অন্যায়-অবিচার বা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ যেন সৃষ্টি না হতে পারে। কারণ, ইসলাম শান্তি সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তির ধর্ম ইসলামের মর্মবাণী একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, আমাদের সকল মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং ওলামায়ে কেরামদের অনুরোধ করবো-ইসলাম শান্তির ধর্ম, সহনশীলতার ধর্ম। যা আমাদের নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সা:) শিখিয়েছেন। তাঁর যে বিদায় হজের বাণী সেই বাণীই আমরা অনুসরণ করি।
সরকার প্রধান বলেন, কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের দেশের কোন ছেলে-মেয়ে যেন জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে না পারে সেজন্য আপনারা যথাযথ শিক্ষা দেবেন এবং সঠিক ব্যবস্থা নেবেন। মুষ্টিমেয় লোকের জন্য আমাদের প্রকৃত যে ধর্ম, শান্তির ধর্ম, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্যই আপনাদের সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই আমাদের মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক। এদেশকে আমরা আরো সমৃদ্ধ ও উন্নত করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ ইমাম এবং আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
মসজিদ-ই-নববীর ইমাম শেখ ড.আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-বুয়াইজান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি’র বক্তৃতা করেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তরিকত ফাউন্ডেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী, মাওলানা ড. মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন সরকার সালেহী ও মাওলানা এহসানুল হক আল মোজাদ্দেদী।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ধর্ম সচিব মো. এ হামিদ জমাদ্দার।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলা মডেল মসজিদ এবং কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম-মুসল্লি ও বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।
কোভিড-১৯ দেখা দেওয়ার পর তাঁর সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সারাদেশে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করে দেয় উলেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সারাদেশের দরিদ্র মানুষসহ সমস্ত শ্রেনী পেশার জনগণকে আর্থিক সহায়তা ও প্রণোদনা দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সৌদি বদশাহ’র সহযোগিতায় হজ ব্যবস্থার উন্নয়নে হজ ক্যাম্প স্থাপন ও ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার উন্নয়নসহ তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়মমূলক পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া তাঁর সরকার দেশে একটি আরবি ইসলামিক বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে সৌদি বাদশাহ’র অনুদানে আরবি ভাষা শিক্ষারও একটি ইনষ্টিটিউট গড়ে উঠবে। কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসকে মাষ্টার্স ডিগ্রির সমমর্যাদা প্রদান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সংস্কার ও আধুনিকায়ন, ৩৫ হাজার মসজিদ ভিত্তিক পাঠাগার নির্মাণ, অর্থ ও বাংলা তরজমাসহ পবিত্র কোরআন শরিফের ডিজিটাল ভার্ষণ তৈরি, জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ প্রণয়ন, সীড মানি দিয়ে ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছে। বিত্তবানরাও এখানে সহায়তা দিতে পারেন।
দেশের ভূমিহীন গৃহহীন প্রত্যেক বিনা পয়সায় ঘর দেওয়া এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা তাঁর সরকার করে দিচ্ছে উল্লেখ করে বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে একজন এতিম হিসেবে নিজের ও পরিবার এবং দেশকে সফলভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সকলের দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের আবারো নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ইসরায়েল কতৃর্ক আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের ওপর যে আক্রমণ এবং নির্বিচারে ছোট্ট শিশু ও নারী হত্যা করা হচ্ছে আমরা এটা কখনো চাইনা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাধ্যমত ফিলিস্তিনের নারী-শিশু ও সাধারণ জনগণের জন্য ওষুধ ও শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও মানবতার ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমরা চাই সকলে শান্তিতে বসবাস করুক। তাঁর সাম্প্রতিক বেলজিয়াম সফরেও তিনি বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের কাছে যুদ্ধ থামানোর আহবান জানিয়েছেন বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগানোর মাধ্যমে দেশের সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোয় তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, যার যেটুকু জমি আছে তাতে ফসল ফলাতে হবে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ, আমরা কারো কাছে হাত পেতে চলবো না। জাতির পিতা যে বলেছিলেন ‘তাঁর মাটি আছে, মানুষ আছে, তা দিয়েই তিনি দেশকে গড়ে তুলবেন,’ সেভাবেই আমরা দেশকে গড়ে তুলবো। কোনভাবেই আমাদের দেশের মানুষ যেন খাদ্যের জন্য কষ্ট না পায়। তাঁর সরকারের এক কোটি মানুষকে বিশেষ খাদ্য সহায়তা কার্ড প্রদানেরও উল্লেখ করেন তিনি।
সরকার প্রধান আবারো সকলের দোয়া চেয়ে বলেন, আপনারা দোয়া করবেন যেন দেশের মানুষের সেবা করে যেতে পারি। আর বাংলাদেশ আজ যে উন্নযনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে সেই উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে। ভবিষ্যতে এই বাংলাদেশকে যেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            