বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি হলো ভোটাধিকার নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার। এই অধিকার জনগণের মতামতকে রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিফলিত করে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভোটাধিকারের চর্চা নিয়ে জন্ম নিয়েছে নানা বিতর্ক ও প্রশ্ন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ও তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ কমে যাওয়া নিয়ে আলোচনাও হয়েছে ব্যাপকভাবে। কেউ দেখেছেন গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা, আবার কেউ নতুন রাজনৈতিক সংস্কারের প্রত্যাশা করেছেন।
আগামী ২০২৬ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তাদের নানা অভিমত, প্রত্যাশা ও উদ্বেগ।
ইবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহা. মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমরা অতীতে বহু প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখেছি। এবার আশা করি নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক। প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ করে, তবে জনগণ ভয়মুক্তভাবে ভোট দিতে পারবে।”
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “যারা দীর্ঘদিন স্বৈরাচারী রাজনীতি চালিয়ে এসেছে, তাদের বাইরে রেখেই পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব।”
ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নূর উদ্দিন বলেন, “গত ১৬ বছরে প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়নি। এবার আমরা চাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।”
তিনি আরও যোগ করেন, “পিআর পদ্ধতিতে অনেক সময় অস্থিতিশীল জোট সরকার গঠিত হয়, যা বিনিয়োগ ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। কিছু ছোট দল এই পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, “বিগত সরকারগুলো জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তবে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘জুলাই স্পিরিট’ ধারণ করে সংস্কারের পথে এগোচ্ছে। যদি এই সংস্কার সফল হয়, ভবিষ্যতের সরকার আর আগের মতো স্বৈরাচারী হওয়ার সুযোগ পাবে না।”
ইবি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইসমাইল রাহাত বলেন, “একজন নাগরিক হিসেবে কখনো বৈধ নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। পিআর পদ্ধতিতে একাধিক দলের অংশগ্রহণ থাকলে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা পাবে এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা আরও বাস্তবায়িত হবে।”
ইবি ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমরা চাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুক। পিআর পদ্ধতি চালু হলে সব দল সরকারের অংশ হওয়ার সুযোগ পাবে, ফলে একক দলীয় ফ্যাসিবাদ আর টিকবে না।”
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুমতাহিনা রিনি বলেন, “বিগত নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা তরুণ প্রজন্মের কাছে সুখকর নয়। আমরা চাই আসন্ন নির্বাচন হোক হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের একটি সুযোগ। ৫ আগস্টের পর যেসব তরুণনির্ভর দল আত্মপ্রকাশ করেছে, তাদের ভূমিকা এবার গুরুত্ব পাক।”
তিনি আরও বলেন, “দলের নাম নয়—আমরা প্রার্থীর যোগ্যতা, সততা ও কর্মদক্ষতা দেখে ভোট দিতে চাই। ইশতেহার হোক জনগণের স্বপ্ন ও কল্যাণের প্রতিফলন। আমরা চাই একটি অংশগ্রহণমূলক ও ন্যায্য নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক।”
আমারবাঙলা/এফএইচ