সারাদেশ

আগামী ঈদ করবেন আরাকানে, আশা রোহিঙ্গাদের

কক্সবাজার প্রতিনিধি

দেশব্যাপী ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে আজ। মিয়ানমার থেকে উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত শরণার্থী শিবিরগুলোতে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় এই উৎসব উদযাপন করেছেন রোহিঙ্গারা। তবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে শিশুদের আনন্দ চোখে পড়লেও, বড়রা কাটিয়েছেন বিষাদে। তারা আশা করছেন, আগামী ঈদ আরাকানে কাটাবেন।

সোমবার (৩১ মার্চ) সকালে ৮টার পর উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন রোহিঙ্গারা। তাদের রাখাইনে মিয়ানমার সেনাদের চালানো নির্যাতনের বিভীষিকা আর অভাবের দাপটে এই উৎসবের রঙ সেখানে অনেকটাই বিবর্ণ।

রোহিঙ্গা শিবিরে ঈদের নামাজ আদায়ের পর কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন ইমাম ও মুসল্লিরা। মোনাজাতে অংশ নেওয়া মুসলিমরা নির্যাতনের বিচার চেয়ে ও বাংলাদেশে সরকার-জনগণের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।

এদিকে সম্প্রতি ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গা যেন আগামী ঈদ নিজেদের মাতৃভূমিতে উদযাপন করতে পারে-এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া বৃহস্পতিবার সকালে নিজের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিওবার্তার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে ঈদের শুভেচ্ছা জানান ইউনূস।

এ বিষয়ে টেকনাফের লেদা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘ঈদ আসলেও আমাদের মাঝে তেমন আনন্দ নেই। কেননা নিজ দেশে ঈদ উদযাপন আর ভিনদেশে ঈদ পালন করা অনেক ভিন্ন। সেদেশে (মিয়ানমারের) আমাদের বাপ-দাদার কবর রয়েছে। যুগ যুগ ধরে সেখানে থাকা অবস্থায় ঈদের নামাজ শেষ করে তাদের কবর জিয়ারত করতাম। কিন্তু এখন সেটা সম্ভব না। এর চেয়ে কষ্ট কি আর হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘ক্যাম্প পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গা যেন আগামী ঈদ নিজেদের মাতৃভূমিতে উদযাপন করতে পারে-এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, সেটা শুনে আমাদের মাঝে নিজ দেশে ফেরার স্বপ্ন আলোর মুখ দেখছে বলে আশা করছি। বিশেষ করে ঈদের নামাজে দোয়া চেয়েছি; এ ঈদ যেন শেষ ঈদ হয় এ দেশে (বাংলাদেশ)। আগামীতে যেন আমাদের ঈদ আরাকানে হয়; এমন প্রত্যাশা আমাদের।’

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনা নির্যাতনের ফলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা এসেছিল। পুরানোসহ উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।

শরণার্থী জীবনে ‘টাকা-পয়সা নাই, চলাফেরার সুযোগ নাই’, মন্তব্য করে মংডু থেকে আসা টেকনাফের জাদিমুড়া ক্যাম্পের বসবাসকারী রশিদ আহমেদ (৭২) বলেন, ‘আমরা দেশে যেভাবে ঈদ করতাম, এখানে সেভাবে ঈদ করতে পারিনি। কারণ, সবকিছুর পরও এটা আমাদের দেশ না। এই জন্য আমাদের কোনো আনন্দ নেই। কোথাও বের হতে ভয় লাগে। বিশেষ করে; সেদেশে (মিয়ানামারে) আমাদের শৈশবের অনেক স্মৃতি রয়েছে। সেখানে আছে বাপ-দাদাসহ স্বজনদের কবর।’

আজ ঈদের দিন উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবির ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই সেজেগুজে শিশুরা, নতুন জামা-কাপড় পরে ক্যাম্পের রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দে মেতে উঠেছে তারা।

শিশুদের জন্য টেকনাফের লেদা-জাদিমুড়াসহ কয়েকটি জায়গায় নাগরদোলা, চড়কিসহ মিনি মেলা বসেছে। এর আয়োজক নুর কামাল বলেন, এই মেলা কমপক্ষে তিন দিন থাকবে। এখানে শিশুরা এসে খুব আনন্দ উপভোগ করছে।

টেকনাফের জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ নুর বলেন, অনেক আনন্দের ঈদ ছিল মিয়ানমারে। কিন্তু বাংলাদেশে সে খুশির ঈদ হয় না। এখানে মেহমান হিসেবে আছি। দেশে (মিয়ানমারে) ঈদ করে মা বাবার কবর জিয়ারত করতে পারতাম, নিজ মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারতাম। সেটি এখানে সম্ভব হচ্ছে না। নিজ দেশে চলাচল করতে ভয় ছিল না।

তিনি বলেন, ‘১৪ মার্চ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইফতার মাহফিলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামী ঈদ নিজ দেশে উদযাপন করতে পারবে; তাদের এমন কথা শুনে আমাদের মন কেঁদে উঠে আরাকানের জন্য। আশা করছি ,তাদের এমন আশ্বাস আমাদের সাহস জোগায়। কেননা আমাদের খাদ্যসহায়তা সংকট নিয়ে বড় সমস্যা ছিল। কিন্তু তারা (প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস) যাওয়ার পর পরই সমাধান হয়েছে। তাই দেশে ফেরা নিয়ে তাদের কথা বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি খুব।’

রোহিঙ্গাদের মতে, কক্সবাজারের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ১৩৫০টি মসজিদ ও ৯৫০টি নূরানি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মত্তব) রয়েছে। এসব মসজিদ ও নূরানি শিক্ষাপ্রতিষ্টানে সোমবার ঈদের নামাজ আদায় করেছেন শরণার্থী রোহিঙ্গারা।

জানতে চাইলে ১৬- এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি কাউসার সিকদার বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের নামাজ সম্পন্ন হয়েছে। ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা ঈদ উদযাপনে মেতে উঠেছেন। তবে কেউ যাতে ক্যাম্প থেকে বাইরে না যায়, সেজন্য তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ক্যাম্পে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেখানে নজরদারি রাখা হয়েছে।’

আমারবাঙলা/জিজি

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

রাজনৈতিক অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

রাজনীতি ফায়দা হাসিল করতে নরসিংদী জেলা বিএনপির ত্রান ও দূর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ম...

ভৈরব নদীর পানিতে ডুবে গেছে হাজার হাজার বিঘা ফসলের মাঠ

চুুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কৃষকদের কৃষিকাজে সেচ, মৎস্য চাষ বৃূ্দ্ধি ও এলা...

চূড়ান্ত পর্যায়ে জুলাই জাতীয় সনদ, ঐকমত্যের পথে কঠিন বাঁধা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ৫ আগস্ট ‘জুলাই জাতীয় সনদ&r...

 ইউনিয়ন পরিষদে তালা, বিএনপি নেতাসহ আটক ৬

‎ঝিনাইদহের শৈলকুপার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদে তালা লাগিয়ে সচিবকে জোরপূর...

রেগে গিয়ে রাশিয়ার কাছাকাছি সাবমেরিন পাঠানোর নির্দেশ ট্রাম্পের

রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধকালীন পারমাণবিক অস্ত্রনীতিকে ইঙ্গিত করে সাবেক প্রেসিডেন্ট...

 ইউনিয়ন পরিষদে তালা, বিএনপি নেতাসহ আটক ৬

‎ঝিনাইদহের শৈলকুপার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদে তালা লাগিয়ে সচিবকে জোরপূর...

নারায়ণগঞ্জে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পাঠাগারের শুভ উদ্বোধন

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দাতা সড়ক এলাকায় স্থানীয়দের উদ্যো...

রাজনৈতিক অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

রাজনীতি ফায়দা হাসিল করতে নরসিংদী জেলা বিএনপির ত্রান ও দূর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ম...

ভৈরব নদীর পানিতে ডুবে গেছে হাজার হাজার বিঘা ফসলের মাঠ

চুুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কৃষকদের কৃষিকাজে সেচ, মৎস্য চাষ বৃূ্দ্ধি ও এলা...

জামায়াত আমিরের হার্টের বাইপাস সার্জারি চলছে

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের হার্টের বাইপাস সার্জারি শুরু হয়েছে।...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা