সংগৃহীত
ঐতিহ্য ও কৃষ্টি

ফিলিপাইনে মানুষের মৃত্যুর আগেই শুরু হত মমি তৈরির প্রক্রিয়া

আমার বাঙলা ডেস্ক

মিশরের মমি এক বিস্ময়। কিন্তু ফিলিপাইনের মমির রহস্য অনেকেরই অজানা। জীবিত অবস্থায় শুরু করা হত এই মমি তৈরির প্রক্রিয়া; যেখানে মৃতদেহ সংরক্ষণের মূল উপাদান ছিল আগুন আর ধোঁয়া।

উত্তর ফিলিপাইনের বেঙ্গুত প্রদেশের কাবাইয়ান অঞ্চলে বাস করে ইবালোই গোত্র। এই উপজাতির পূর্বপুরুষেরা মৃতদেহ সংরক্ষণের এক বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করত; যা আজও তাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে। তারা মৃতদের মমি করত আগুন আর ধোঁয়া ব্যবহার করে। এই প্রক্রিয়ায় তৈরি মমিরা পরিচিত আগুন মমি নামে।

এই প্রক্রিয়ার সূচনা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে ভিন্নমত আছে। ধারণা করা হয় এটি ১২০০ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয়েছিল। মৃত্যুর আগে মুমূর্ষু ব্যক্তিকে লবণাক্ত পানীয় খাওয়ানো হত, যাতে তার শরীরের পানি দ্রুত বেরিয়ে যায়। তবে আধুনিক বিজ্ঞান এই পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। মৃত্যুর পর শুরু হত আসল প্রক্রিয়া। মৃতদেহকে ধুয়ে কোলেবাও নামে এক বিশেষ কম্বলে মুড়ে বসানো হতো চেয়ারে, আর তার চারপাশে জ্বালানো হতো আগুন। আগুনের তাপের ধোঁয়া শরীর থেকে সমস্ত পানি বের করে দিত; যা সংরক্ষণ করা হতো বোতলে। এই প্রক্রিয়া কয়েক সপ্তাহ ধরে চলত, আর শেষে শুকিয়ে যাওয়া দেহকে কাঠের কফিনে মায়ের পেটে শিশু যেভাবে কুণ্ডলি পাকিয়ে থাকে সেভাবে শায়িত করে পাহাড়ের গুহায় রেখে আসা হতো।

স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে ১৫০০ শতকের দিকে ফিলিপাইনে খ্রিষ্টধর্ম প্রচার শুরু হয়, আর হারিয়ে যেতে থাকে এই প্রাচীন প্রথা। তবে আগুন মমিরা তাদের আকর্ষণ হারায়নি। ১৯১৯ সালে আপো আন্নু নামে এক বিখ্যাত মমি চুরি হয়ে যায়। ইবালোইদের কাছে তিনি ছিলেন একজন নেতা এবং শিকারী। তার মমি চুরি হওয়ার পর, ইবালোইরা এটিকে অভিশাপ বলে মানতে শুরু করে, কারণ এর পরপরই এলাকায় নানা দুর্যোগ নেমে আসে।

শেষমেশ, ১৯৮৪ সালে আপো আন্নুর মমি পুনরুদ্ধার করা হয় এবং ইবালোইদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আজও এই গুহাগুলোতে আগুন মমি দেখতে যাওয়ার জন্য কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়, আর সরকার সেগুলোকে রক্ষার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে।

ইবালোইদের জন্য আগুন মমি শুধু একটি প্রথা নয়, এটি তাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে এক গভীর সংযোগের প্রতীক। আজও তারা গুহার মমিদের জন্য খাবার ও পানীয় উৎসর্গ করে, আর মমিদের কোনো পরিবর্তন করতে হলে আগে তাদের নেতাদের অনুমতি নিতে হয়। এই গুহায় প্রবেশ করে গবেষণা করতেও লাগে তাদের অনুমতি।

এ যেন এক প্রাচীন গুহা, ভেতরে লুকিয়ে আছে অতীতের ছোঁয়া, আর সেই ছোঁয়ায় জীবিত এক ইতিহাস—এমনই এক রহস্যের নাম ‘আগুন মমি।’

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ই-সিগারেট উৎপাদন নিষিদ্ধের নির্দেশনায় সরকারের প্রতি বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের কৃতজ্ঞতা

দেশে ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ENDS) উৎপাদনের অনুমতি...

‘একজন শিল্পীকে ভীষণভাবে অসম্মানিত করা হচ্ছে’

দুই দশক আগে ‘হাজার বছর ধরে’ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক। সিনেমায় নিজের...

রংপুরে হিন্দুপাড়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, জানাল প্রশাসন   

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগকে কেন্দ্র করে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি...

ব্যয়বহুল উন্নয়ন, পানিতে ভাসছে চট্টগ্রাম

১০ হাজার কোটি টাকা খরচের পরও চট্টগ্রাম নগর রক্ষা পেল না জলাবদ্ধতা থেকে। সোমবা...

আর্থিক সংকট, রাইফেল-পিস্তল লকারে, বন্ধ এসএ গেমসের ক্যাম্প

চার ইভেন্টের ২০ শুটার নিয়ে ১ জুলাই বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনে শুরু হয়েছ...

বুবলীর চমক,অন্য রকম জীবন

গানচিল মিউজিকের নতুন প্রজেক্ট ‘বাংলা অরিজিনালস’ শুরু হলো ‘ম...

মুহূর্তে বয়স কমে যায় মেয়েটার...

ফরিদা আক্তার পপি তাঁর আসল নাম। সত্তরের দশকের অন্যতম সেরা এই অভিনেত্রী আজ ৭১ ব...

এমবাপ্পেই রিয়ালের নতুন ‘১০ নম্বর’

কিলিয়ান এমবাপ্পে না আরদা গুলের-জার্সিটি উঠবে কার গায়ে? এ প্রশ্নের উত্তরের অপে...

উরুগুয়েকে উড়িয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিল

ছেলেদের ফুটবলে সময়টা ভালো না গেলেও মেয়েদের ফুটবলে দাপট ধরে রেখেছে ব্রাজিল। কু...

ডুবে গেছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু

টানা বৃষ্টি ও আর পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়ায় ডুবে গেছে রাঙামাটির আইক...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা