সংগৃহীত
লাইফস্টাইল

ভজন কুমারের পেঁয়াজু ২০ বছর ধরে ১ টাকাই!

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌর সদরের গিরিশ ধর্মশালা এলাকায় ভজন কুমার দাসের খাবারের দোকান। সকাল-বিকাল-রাতে নানা খাবার বিক্রি করেন তিনি। মচমচে ও গরম পেঁয়াজু পাওয়া যায় তার দোকানে দিনে একবার বিকালে। এমনটিতো দেশের প্রায় সব খাবারের দোকানে করা হয়। ভজনের বিশেষত্ব হলো ২০ বছর আগে তিনি পেঁয়াজু এক টাকা বিক্রি করতেন। এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির বাজারে এখনো তাই করেন তিনি। এও কী সম্ভব? করোনার আগে পরেই অর্থের মানে ব্যাপক তারতম্য হয়েছে। আর ২০ বছর আগে পরে তা কেমন হবে একটু ভাবলেই বুঝা যায়।

ভজনের দোকানের পেঁয়াজু একটু আলাদা ধরনের। তার দোকানের পেঁয়াজুতে ৮০ শতাংশই পেঁয়াজ থাকে। স্বাদের কারণে ইতোমধ্যে এ পেঁয়াজু ভজনের পেঁয়াজু নামে পরিচিতি পেয়েছে।

এই পেঁয়াজুর স্বাদ নিতে গেলে সীতাকুণ্ড পৌর সদর বাসস্ট্যান্ড থেকে মন্দির সড়ক হয়ে পূর্ব দিকে অন্তত দুই কিলোমিটার পথ যেতে হবে।

সম্প্রতি বিকাল পাঁচটার দিকে ভজনের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, টিনের তৈরি ছোট্ট একটি চা–নাশতার দোকান। বেশ কয়েকজন ক্রেতা দোকানের ভেতরে বসে অপেক্ষা করছেন পেঁয়াজুর জন্য। ফুটন্ত গরম তেলে ছোট ছোট করে ছাড়া হচ্ছে পেঁয়াজুর মণ্ড। কিছুক্ষণ পর একটু লালচে বর্ণ ধারণ করতেই তা ছাঁকনি দিয়ে নামানো হচ্ছে। ক্রেতাদের কেউ কেউ দোকানে বসে গরম–গরম পেঁয়াজু খাচ্ছিলেন, আবার অনেকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন।

পেঁয়াজু বানাতে বানাতে কথা বলছিলেন ভজন কুমার দাস। তিনি বলেন, ২০০৪ সালে এক টাকা দিয়ে দুটি পেঁয়াজু বিক্রি করতেন। হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা হয়। লোকসান কমাতে তিনি পেঁয়াজুর দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। প্রতিটি পেঁয়াজুর দাম ধরেন এক টাকা। সেই থেকে এই দামেই পেঁয়াজু বিক্রি করছেন তিনি।

দোকানে কথা হয় ক্রেতা অসীম সাহার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাধারণত নাশতার দোকানে পেঁয়াজুর নামে যা খাচ্ছি, তা মূলত ডালের বড়া। পেঁয়াজু নাম হলেও সেখানে পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। কিন্তু পেঁয়াজুর আসল স্বাদ পাওয়া যাবে ভজনের এ পেঁয়াজুতে। দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজুর গুণগত মান ঠিক রেখেছেন ভজন। ফলে বিকাল হলে মানুষ তার পেঁয়াজু খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন।’

চাঁদপুর থেকে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ ধামে বেড়াতে আসা পর্যটক সোহেল বিশ্বাস বলেন, ‘সচরাচর এ ধরনের পেঁয়াজু পাওয়া যায় না। দাম অত্যন্ত সস্তা। এক প্লেট পেঁয়াজুর জন্য অবশ্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।’

ভজন কুমার দাস জানান, তাদের একটি চা-নাশতার দোকান ছিল সীতাকুণ্ড ডিগ্রি কলেজ এলাকায়। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি বাবার সঙ্গে ওই দোকানে কাজ শুরু করেন। এভাবে তার ৫০টি বছর কেটে যায়। বাবার সঙ্গে থেকে থেকে তিনি বিভিন্ন নাশতা বানানো শিখে ফেলেন। তিনি যখন থেকে দোকানে কাজ শুরু করেন, তখন এক টাকায় আটটি পেঁয়াজু বিক্রি করতেন। এরপর বিভিন্ন সময় দাম বেড়েছে।

যেদিন ভজনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, সেদিন সীতাকুণ্ড বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়। তেল ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। তাহলে এক টাকা দামে কী করে বিক্রি করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ভজন জানান, পেঁয়াজের দাম স্থির নয়। কখনো পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৭০ টাকা বিক্রি হয়, আবার কখনো ১৫০ টাকা। কিন্তু পেঁয়াজুর দাম এক টাকা থেকে দুই টাকা করলে মানুষ তা কিনবে না। ২০ বছর বেশির ভাগ সময়ে লাভ করেছেন তিনি। এখন লোকসান হচ্ছে। অন্য নাশতা বিক্রি করে লোকসান পুষিয়ে নেন। তার দোকানে সকালে রুটি, পরোটা, ডালসহ অন্যান্য নাশতা বিক্রি হয়। আর পেঁয়াজু বিক্রি করেন দিনে এক বেলা। বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে পেঁয়াজু বিক্রি।

ভজন কুমার দাসের এক ছেলে ও এক মেয়ে। এই দোকানের আয়ে বাড়ি করেছেন এবং একমাত্র মেয়ে আঁখি দাসকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে আকাশ দাস পলিটেকনিকে পড়াশোনা করছেন।

চন্দ্রনাথ ধাম তীর্থ পরিচালনা কমিটি সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটির সদস্য মৃদুল অধিকারী বলেন, ভজন কুমার দাস অত্যন্ত বিনয়ী ও মিষ্টভাষী। দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছেন তিনি।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

শহীদ আবু সাঈদ ছিল আশার আলো — নতুন ঘরে নেই শান্তি, কেবল হাহাকার

বছর দেড়েক আগেও তিনি ছিলেন শুধুই এক মেধাবী ছাত্র,...

‘পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্র করার সময় বিশ্বাস করেছি, আমিই পুলিশ’

‘আমি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমার পারফরম্যান্স (অভিনয়) একই র...

গোপালগঞ্জে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় আটক ১৪

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় ব...

এনসিপির উপর হামলা,ইবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ 

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ ও তার বিভি...

গোপালগঞ্জের লঞ্চ ঘাট এলাকায় এখনো আতঙ্ক, চলছে সেনা-পুলিশের টহল

গোপালগঞ্জ শহরের লঞ্চ ঘাট এলাকায় বুধবার (১৬ জুলাই) হামলা-সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনার...

‘পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্র করার সময় বিশ্বাস করেছি, আমিই পুলিশ’

‘আমি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমার পারফরম্যান্স (অভিনয়) একই র...

 ট্রল থেকে লিটনের ঘুরে দাঁড়ানো ‘সহজ ছিল না’

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির স্কোয়াড থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন। লিটন দাসকে ওয়ানডেতে ফেরানো হ...

পুকুরে মিললো বন্দুক, কার্তুজ ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার একটি পুকুর থেকে দুটি বন্দুক ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জা...

বগুড়ায় দুই নারী খুন, জানা গেল নেপথ্য কাহিনী

বগুড়া সদর উপজেলায় ঘরে ঢুকে দুই নারীকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। একই ঘটনায় ছুরি...

‘আমার সংসার বাঁচাবার মতো আর কেউ নাই’

টিনের ছোট ঘর। সেই ঘরজুড়ে সংসারের অভাবের ছাপ। সামনের ছোট উঠান ভরে গেছে স্বজন&n...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা