বিকেলের আলো তখনো পুরোপুরি মাটিতে নামেনি। বান্দরবান–কেরানীহাট সড়কে সেই সময়টাতে ছিল ফিরতি পথের ব্যস্ততা। ঠিক সেই মুহূর্তেই সাতকানিয়ার কেওচিয়া ইউনিয়নের বায়তুল ইজ্জত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টারের সামনে ঘটে গেল এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা—যা শেষ করে দিল দুই তরুণের সমস্ত স্বপ্ন, থমকে দিল তিনটি পরিবার।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা তিনটার দিকে বান্দরবান পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আর্মিপাড়ার দুই বন্ধু—নাজমুল ইসলাম (৩০) ও তওহীদ (২৪)—আরো একজন সঙ্গীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে ছুটছিলেন কেরানীহাটের দিকে। তিনজনের হাসিমুখে শুরু হওয়া সেই যাত্রা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পরিণত হয় চিরবিদায়ে।
চোখেমুখে স্বস্তির ভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসা মোটরসাইকেলটি হঠাৎই গ্রামীণ পথ থেকে উঠে আসা আরেকটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ব্যালান্স হারিয়ে ছিটকে পড়েন তিনজনই। এর পরের মুহূর্তটি ছিল সবচেয়ে দুঃস্বপ্নের—বান্দরবানগামী পূবালী পরিবহনের একটি বাস দ্রুতগতিতে এগিয়ে এসে চাপা দেয় নাজমুল ও তওহীদকে। ঘটনাস্থলেই একজন মারা যান। অন্যজনকে স্থানীয়রা দৌঁড়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি—চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তৃতীয় তরুণটি গুরুতর আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর নাম–পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
দুর্ঘটনাস্থলের দিকে তাকালে এখনো দেখা যায় মোটরসাইকেলের ভাঙা অংশ, রক্তমাখা মাটি আর স্থানীয় মানুষের আতঙ্ক–বিহ্বল চোখ। এলাকাবাসীর কেউ কেউ বলছিলেন, “রাস্তার এই অংশটাতে দুর্ঘটনা লেগেই আছে; গতিরোধক নেই, নজরদারিও কম।”
সাতকানিয়া থানার উপপরিদর্শক মামুন হোসেন বলেন, “মৃতদেহ দুটি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে, প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মফিজের ছেলে নাজমুল—যিনি পরিবারের হাল ধরে রেখেছিলেন—আজ আর বাড়ি ফিরবেন না। একই এলাকার ইউনুসের ছেলে তওহীদ—যার হাসিমুখে প্রাণ জুড়াত প্রতিবেশীদের—তাকেও ফিরে পাওয়া যাবে না। পরিবারের কান্না আর শোকগ্রস্ত জনপদ জানিয়ে দিচ্ছে, এক মুহূর্তের অসতর্কতা কিভাবে নিয়ে নেয় বহু জীবনের শান্তি।