বাণিজ্য ডেস্ক: সরকারের প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব উচ্চ আদালতে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কর বিভাগের ১ হাজার ৫১টি মামলা জটে আটকে রয়েছে। আদালতে বিচারাধীন এসব মামলা দীর্ঘদিন ধরেই নানা জটিলতায় পড়ে আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিটের ওই মামলা জট খুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি।
বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) এ বিষয়টি আবারও সামনে আসে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সঙ্গে মতবিনিময় সভায়।
কর সংক্রান্ত মামলা জট কমাতে পৃথক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) লিগ্যাল ইউনিট গঠনেরও পরামর্শ এসেছে। পাশাপাশি আদালতের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে প্রতিটি কর অফিসে একজন ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টিও সামনে এসেছে।
এলটিইউ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে উচ্চ আদালতে এনবিআরের এলটিইউর শুধুমাত্র কর বিভাগের ১ হাজার ৫১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। যার বিপরীতে রাজস্ব আটকে আছে ১৮ হাজার ৯১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। মামলা জটের মধ্যে রিট মামলা রয়েছে ১১৬টি, রেফারেন্স মামলা ৮৭০টি, লিভ টু আপিল মামলা ৬৫টি। যার বিপরীতে রাজস্ব আটকে রয়েছে যথাক্রমে ৬১৬ কোটি ৩৩ লাখ, ১৭ হাজার ২৫৮ কোটি ৩৫ লাখ এবং ১ হাজার ৩৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
এলটিইউ’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব বিষয়ে বলেন, জট কমাতে বর্তমানে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তিতে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছরে এডিআরের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মামলা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। যার মধ্যে গত জুনে গ্রামীণ ফোনের সঙ্গে দীর্ঘদিন চলমান মামলা এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছিল। যেখানে সরকারি তহবিলে ৮০০ কোটি টাকা জমা করা সম্ভব হয়।
অপরদিকে এনবিআরের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ বলেন, উচ্চতর আদালতে রাজস্ব সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য বৃহৎ করদাতা ইউনিটের লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করা যেতে পারে। মামলা জট কমাতে ভবিষ্যতে দুদকের মতো পৃথক লিগ্যাল ইউনিট স্থাপন করতে হবে।
বৃহৎ করদাতা ইউনিটের আওতায় মোট ১ হাজার ৩১৩ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যাদের মধ্যে ৪৫৩টি কোম্পানি ও ৮৬০টি ব্যক্তি করদাতার রয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ৬৫টি ব্যাংক, সাধারণ বিমা কোম্পানি ৪৮টি, জীবন বিমা কোম্পানি ৩৫, মার্চেন্ট ব্যাংক ৮১, লিজিং এবং ইনভেস্টমেন্ট ৩৯, টেলিকমিউনিকেশনস ৬, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি ৭, গার্মেন্টন্স কোম্পানি ১৪, টেক্সাটাইল ২২, মাল্টিপল প্রোডাক্টস ৯, ফার্মাসিউটিক্যালস ১৪, ম্যানুফ্যাকচারিং ৭৪ ও অন্যান্য ৪৭টি।
এনবিআরের অডিট কর্মকর্তারা কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির তথ্য উদঘাটনের পর দাবিনামা জারি করলেই সাধারণত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। মূলত আদালতে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার সুযোগ নিতেই এটা করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তারা। অনেক ক্ষেত্রে মামলার বিচার প্রক্রিয়া যাতে দীর্ঘ হয় সেজন্য কোম্পানিগুলো আদালতে লবিস্ট নিয়োগ করে রাখেন।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে মূসক থেকে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা, আয়কর থেকে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ও আমদানি-রপ্তানি শুল্ক থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            