ভোলার চরফ্যাসনের আলোচিত ‘জ্যাকব টাওয়ার’ নিয়ে সমালোচনা থামছেই না। মসজিদের মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা পরিবর্তন করে বিশাল টাওয়ার নির্মাণ এবং তা তৎকালীন সংসদ সদস্যের নামে নামকরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগ রয়েছে, টাওয়ার থেকে আয়ের ২৫ শতাংশ মসজিদের জন্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাছাড়া, নির্মাণ ব্যয়ের হিসাব-নিকাশে স্বচ্ছতার ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুউচ্চ টাওয়ার হিসেবে জ্যাকব টাওয়ার উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এটি ছিলো আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে ভোলার সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, এমপিসহ দেশবরেণ্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রাথমিকভাবে ২০১৩ সালে চরফ্যাসনের খাসমহল জামে মসজিদের একটি মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। সৌদি আরবের মক্কার শায়েখ আল্লামা আবদুল হাফিজ মক্কী ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সৌদি সরকারের তহবিল এবং জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে ২০১৫ সালের মধ্যে মিনারের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো।
তৎকালীন সংসদ সদস্য ও বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব মসজিদের মিনারের পরিবর্তে সেখানে টাওয়ার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। পৌরসভার তহবিল থেকে অতিরিক্ত ২০ কোটি টাকা খরচ করে ২২৫ ফুট উচ্চতার জ্যাকব টাওয়ার নির্মাণ করা হয়। পরে মসজিদ কমিটির কাছ থেকে একটি রেজুলেশন করিয়ে প্রভাব খাটিয়ে টাওয়ার নির্মাণের বৈধতা দেওয়া হয়।
রেজুলেশন অনুযায়ী, টাওয়ার থেকে আয়ের ২৫ শতাংশ মসজিদের জন্য বরাদ্দ করার কথা থাকলেও সেটি দেয়া হয়নি। মসজিদের মুসল্লিরা অভিযোগ করেন, টাওয়ার নির্মাণের আড়ালে সরকারি অর্থ লুটপাট এবং আত্মসাৎ করা হয়েছে।
টাওয়ারটির পরিবর্তে মসজিদের মিনার হিসেবে ব্যবহারের দাবি জানিয়েছেন মুসল্লি রফিকুল ইসলাম, মো. ছাদেক, ইউনুছ আলীসহ অনেকেই। এ ছাড়া টাওয়ারটি মসজিদের প্রবেশপথে অবস্থিত হওয়ায় মুসল্লিদের পবিত্রতা ও সুবিধা বিবেচনার কথাও উল্লেখ করেন তারা।
সরকার পরিবর্তনের পর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় টাওয়ারের উদ্বোধনী ফলক ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধ মানুষ। পরে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে এর নাম পরিবর্তন করে ‘চরফ্যাসন টাওয়ার’ রাখা হয়। তবে টাওয়ারটির আয়-ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান পৌরকর্তৃপক্ষ।
চরফ্যাসন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হাসান জানান, আগের অনিয়ম দূর করে এখন নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনার চেষ্টা চলছে।
বরিশাল বিভাগের কমিশনার মো. রায়হান কাওছার বলেন, ‘এটি মূলত দুই প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি- মসজিদ ও পৌরসভা। মসজিদকে আয়ের একটি অংশ দেয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ভবিষ্যতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ডিসি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আয়ের নির্দিষ্ট অংশ মসজিদের জন্য আলাদা অ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হবে।’
তুমুল সমালোচনার পরও জ্যাকব টাওয়ার শীত মৌসুমে প্রতিদিন সহস্রাধিক দেশি-বিদেশি পর্যটককে আকর্ষণ করে।
আমারবাঙলা/জিজি
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            