নিজস্ব প্রতিবেদক: যানজট রাজধানীবাসীর কপালের লিখন। এমন বিশ্বাস নিয়েই বসবাস করেন রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ। নিত্যদিনের ভোগান্তি কম বেশি তাদের সইতেই হয়। তার উপর রমজান মাসে এই ভোগান্তি আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রমজান মাসে এমনিতেই প্রতিদিন ইফতারের আগ মুহূর্তে ঢাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। তার উপর মঙ্গলবার বিকেলের দিকে বৃষ্টিপাতের কারণে যানজটের তীব্রতা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ফলে ঢাকায় বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও যানজটে অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হোন রাজধানীবাসী।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাতের ফলে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। আর জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন হওয়ায় সৃষ্টি হওয়ায় অসহনীয় যানজটের কবলে পড়তে হয় চলাচলকারীদের। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর রাজারবাগ, পল্টন, গুলিস্তান, শান্তিনগর, মগবাজার, মালিবাগ ও নিউমার্কেট এলাকায় ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেলের বৃষ্টির পর এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে ইফতারের আগে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকতে হয়। এসব এলাকা ঘুরে আরও দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট যানজট চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে রাজধানীর রাজারবাগ, পল্টন, শান্তিনগর ও গুলিস্তান এলাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা একেবারে থমকে ছিল যানবাহন। মালিবাগ রেলগেট এলাকায় রিকশয় আটকে থাকা হাসান নামে এক যাত্রী জানান তিনি যাবেন হাতিরপুল। রিকশায় যেতে সময় লাগে ২০-২৫ মিনিট, হেটে গেলে লাগে ৪০ মিনিট। অথচ বৃষ্টির কারণে প্রায় এক ঘন্টা ধরে তিনি বসে আছেন যাওয়ার কোন উপায় নেই। হেটে যাওয়ারও উপায় নেই। কারণ রাস্তা কাদা পানিতে একাকার। রাজারবাগ এলাকায় যানজটে আটকে থাকা যাত্রী জসিম উদ্দিন বলেন, বিকেলের বৃষ্টির পর থেকে রাজারবাগ এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে যানজট, আরেকদিকে জলাবদ্ধতার কারণে গাড়ি সামনের দিকে এগোচ্ছে না। প্রায় এক ঘণ্টা পার হয়ে গেল, অথচ গাড়ি নড়ছে না। শান্তিনগর এলাকায় যানজটে আটকা পড়া যাত্রী মো. আনোয়ার বলেন, ৪টা থেকে গাড়িতে বসে আছি। এখন ৫টা বাজতে চলল। কিন্তু যানজট কমার কোনো নামই নেই। রোজা শুরু হওয়ার পর থেকে এমনিতেই বিকেলের দিকে যানজট হয়। কিন্তু আজ বৃষ্টির কারণে যানজটের পরিমাণ আরও বেশি। রাস্তায় পানি থাকার কারণে যানবাহন এগোতে পারছে না। বৃষ্টির পর সৃষ্ট যানজট নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল ট্র্যাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ইমতিয়াজ বলেন, বিকেলের বৃষ্টির পর কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির শুরুতে যানচলাচল ধীরগতিতে ছিল। বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর যানবাহনের চাপ আরও বাড়তে থাকে। এর ফলে বর্তমানে রাস্তায় যানজট রয়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এদিকে দুপুরের পর হঠাৎ বৃষ্টিতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে নিউমার্কেট এলাকাজুড়ে। কিছু সড়কে জমেছে গোড়ালি সমান পানি। আবার পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় পানি ঢুকেছে ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটেও। এমন অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে নিউমার্কেট ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টি শেষ হওয়ার ৩ ঘণ্টা পরেও বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে ছিল। কেনাকাটা করতে আসা অনেককে বাধ্য হয়ে জুতা হাতে নিয়ে পানি মাড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায়। তবে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন ধানমন্ডি জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি সংলগ্ন আবাসিক এলাকার মানুষজন। ময়লা পানিতে পুরো সড়ক ডুবে থাকার কারণে হেঁটে কেউ নিজের বাসায় যেতে পারছেন না। অল্প একটু জায়গার জন্যও ঠিক করতে হচ্ছে রিকশা। পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে নিউমার্কেট কাঁচা বাজার এলাকায়ও। ফলে ইফতার কিনতে আসা ও বাজার করতে আসা মানুষজনকেও পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।
ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী আফসারুল ইসলাম বলেন, মৌসুমের প্রথম এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ড্রেন পরিষ্কার না করার কারণে ব্লক হয়ে আছে। সেজন্য পানি নিষ্কাশন হওয়ার জায়গা পায়নি। ফলে মার্কেটে পানি ঢুকেছে। আর ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট সড়ক থেকে অপেক্ষাকৃত নিচু জায়গায় হওয়ায় পানি দ্রুতই ভেতরের দিকে প্রবেশ করেছে। বৃষ্টি থামার পর আমরা কর্মচারীদের দিয়ে পানি পরিষ্কার করিয়েছি। তবে দ্রুতই এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যেন পানি মার্কেটের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। কেনাকাটা করতে আসা জিন্নুরাইন নামে এক ক্রেতা বলেন, এমন বৃষ্টি হবে ধারণা ছিল না। সেজন্য বাসা থেকে ছাতা নিয়ে আসিনি। ফলে বৃষ্টির সময় ভিজতে হয়েছে। আবার পানি জমেও সব রাস্তার অবস্থা খারাপ। কেনাকাটা করতে এসে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অপরদিকে, মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার দোকান-পাটের সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও ঈদের মার্কেট ধরতে মরিয়া ব্যবসায়ীরা মার্কেট খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী এখন থেকে চাঁদরাত পর্যন্ত সাপ্তাহিক ছুটিটর দিনেও খোলা থাকবে নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকা।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            