জেলা প্রতিবেদক: নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় মৃত্যুর ৩৬ দিন পর মো. আলাউদ্দিন (২৬) নামে এক যুবকের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাটইয়া গ্রামের একটি কবরস্থান থেকে গলিত লাশটি উত্তোলন করা হয়। এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমৃত দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন।
নিহত আলাউদ্দিন উপজেলার বাটইয়া গ্রামের মহিন উদ্দিনের ছেলে। এর আগে, গত ০১ মে উপজেলার যাদবপুর গ্রামে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান একেএম সিরাজ উল্যার বাড়িতে আলাউদ্দিন নামে ওই যুবককে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, এ ঘটনায় গত ০৩ জুন নিহতের মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজ উল্যাকে প্রধান আসামি করে তার সহযোগী নিশান (২২) ও কবির (৩০) নামে তিনজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ নম্বর আমলি আদালতে সিআর মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতে নির্দেশে কবিরহাট থানার পুলিশ হত্যা মামলা রুজু করেন।
নিহতের বাবা মহিন উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বাড়ির জায়গা নিয়ে সমস্যা হলে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ উল্যার কাছে বিচার প্রার্থনা করি। এরপর তিনি নিজেই জায়গাটি কিনে নিতে চান। ওই জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ০১ মে রাত ৯টার দিকে চেয়ারম্যান সিরাজ আমার ছেলে আলাউদ্দিনকে তার বাড়িতে ডেকে নেন। এরপর সেখানে দুদিন আটকে রেখে তার সহযোগী নিশান ও কবিরসহ তারা আমার ছেলেকে লোহার রড, জিআই পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে মাথা, হাঁটু ও চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন। পরে কে বা কারা গুরুতর আহতাবস্থায় আলাউদ্দিনকে কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
ছেলের অবস্থার অবনতি হলে ৫ মে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ৬ মে ভোরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলাউদ্দিনের মৃত্যু হয়। ৭ মে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মহিন উদ্দিন আরও বলেন, আমার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ সিরাজ চেয়ারম্যানের বড় ভাই ডা. জাফর উল্যাহকে জানালে তিনি বিষয়টি বাড়িতে এসে সুরাহা করবেন বলে জানান। এরপর তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে চিকিৎসার কাগজপত্র না দিয়ে শুধুমাত্র আমার ছেলের মৃত্যুর সনদ দিয়ে রিলিজ করে দেন। মামলার ১ নম্বর আসামি চেয়ারম্যান সিরাজের বড় ভাই ডা. জাফরের কালক্ষেপণের কারণে আমাদের মামলা করতে বিলম্ব হয়। তিন বছর আগে এই সিরাজ চেয়ারম্যান আমাকেও তুলে নিয়ে মারধর করেছিলেন।
এদিকে অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয় জানিয়ে ডা. জাফর উল্যাহ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার কাছে কোনো কাজে এলাকার কেউ এলে, আমি সহযোগিতা করি।
নরোত্তমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম সিরাজ উল্যাও অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এক সময় তারা জমি বিক্রি করতে চাইলে আমি ক্রয় করিনি। আমি এক একজন জনপ্রতিনিধি, আমার কাজ হচ্ছে মানুষের জানমাল রক্ষা করা। আমি কোনোভাবেই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। ইনশাআল্লাহ -একদিন এটা প্রমাণ হবে।
কবিরহাট থানার ওসি হুমায়ন কবির জানান, নিহতের মা আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত থানায় মামলাটি রুজু করার নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশে তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তের স্বার্থে কবর থেকে ভিকটিমের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি ও ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            