মোঃ সুমন পারভেজ: অর্থনৈতিক মুক্তির তাগিদে নিত্যদিন ঘরে-বাইরে পুরুষের যেমন নিরলস সংগ্রাম চলছে স্বাবলম্বী হওয়ার দৌড়ে তেমনি পিছিয়ে নেই নারীরাও। নারী উদ্যোক্তা রোখসানা খাতুনও সেই সংগ্রামীদের একজন। ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ায় জন্ম ও বড় হয়েছেন তিনি। শৈশব থেকেই তার ইচ্ছে ছিল নিজের পায়ে দাড়ানো ও স্বাবলম্বী হওয়া। হাঁস-মুরগী, কবুতর ইত্যাদি শখের বসে তিনি পালন করতেন ও মাকে সহায়তা করতেন। বাবাকে হারান ছোট বেলায়। বড় ভাই এর কাছে মানুষ হন। তাই সংসার খরচের কিছু সহায়তা এতে হতো।
এইচএসসি পাস করার পর তার বিয়ে হয় চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা উপজেলার দর্শনাতে। তার দুটি সন্তানের জন্ম হয়। এক সময় সে তার স্বামী ও সন্তানদেরকে নিয়ে ঝিনাইদহে চলে আসেন এবং একটি বে-সরকারী সংস্থাতে চাকুরী শুরু করেন এবং পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে জান।
২০১৫ সালে তার স্বামীর মৃত্যু হয়। তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। সামান্য চাকুরীর বেতনে তার সংসার চালানো ও সন্তানদের পড়ালেখা চালানো দুস্কর হয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে তার বড় ছেলে মারাত্মক রোড এক্সিডেন্ট করে। ২০১৯ সালে রোখসানা করোনায় আক্রান্ত হন। ২০২০ সালে রোখসানা অফিসে যাবার পথে রিক্সা এক্সিডেন্ট করে মারাত্মক ভাবে আহত হন এবং মাথা ফেটে যায়। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে অফিসে পড়ে যেয়ে রোখসানার পা ভেঙ্গে যায়। বিপদ যেন তার পিছু ছাড়ছেনা। এতকিছুর পরও সে থেমে যায়নি।
চাকুরীর পাশাপাশি অর্থনৈতিক কিছু কাজ করার কথা ভাবেন। তিনি একটি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে একটি দোকান ঘড় ভাড়া নেন এবং সামান্য কিছু পাটজাত পন্য ও কসমেটিকস সামগ্রী তুলে চাকুরীর পাশাপাশি সন্ধার পরে রাত ১০টা/১১টা পর্যন্ত দোকান চালান। সে নিজেও হাতের কাজ জানে। পাটজাত দ্রবের ব্যাগ তৈরি ও বিক্রি করেন। দুই ছেলের লেখাপড়া খরচ, সংসার চালানো এত কিছুর পরও স্বচ্ছলতা ফেরেনি। আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ও সুযোগ সুবিধা ও পরিবারের প্রয়োজনেই রোখসানার এই সংগ্রাম। ইতিমধ্যে তার প্রতিষ্ঠান নিউ বধু সাজ সিটিগোল্ড এ্যান্ড কসমেটিকস “জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেটিপিসি)’র” নিবন্ধিত উদ্যোক্তা।
সরকারী/ বেসরকারী অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সহায়তা পেলে সে আরো কিছু স্বামী পরিত্যাক্ত, বিধবা ও নিম্নমধ্যবিত্ত নারীদেরকে তার ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত করে তাদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে বলে সে আশা ব্যক্ত করেন। তার স্বপ্ন ঝিনাইদহ শহরের একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হয়ে নারী অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তিতে বিশেষ অবদান রাখা।
গল্পের মতই এই কথাগুলো বলছিলেন রোখসানা। তার অদম্য স্পৃহা, আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতাই তাকে এতো দুর এগিয়ে নিয়ে আসতে পেরেছে। আমরাও চাই রোখসানা সরকারী / বেসরকারী প্রতিষ্ঠান হতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা পেয়ে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হোক এবং নারী অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তিতে বিশেষ অবদান রাখুক।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            