সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: এলজিইডি’র টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের হাজিরা শীটে মৃত ব্যক্তির নাম ও স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করায় স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকাসহ বেশ কিছু টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশের পর, গত ৩ আগষ্ট এলজিইডি কর্তৃপক্ষ পাবনা থেকে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে খাল খনন এলাকায় তদন্ত করে গত ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর প্রধান প্রকৌশলী ঢাকা, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রাজশাহী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এলজিইডি সদর দপ্তর ঢাকা, প্রকল্প পরিচালক টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পাবনা বরাবর দুটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ তাড়াশের উত্তর ভদ্রাবতী ও দক্ষিণ ভদ্রাবতী খাল খননে শ্রমিক দিয়ে কাজ করার কথা ৩০ শতাংশ এবং বেকু দিয়ে কাজ করার কথা ৭০ শতাংশ। অথচ সম্পূর্ণ কাজই করা হয়েছে বেকু দিয়ে। বেকুর দরের চেয়ে শ্রমিকের মজুরি দর বেশি, তাই বিলও প্রদান করা হয়েছে শ্রমিকের মজুরি দরে। বিভিন্ন নামে বেনামে এমনকি মৃত শ্রমিকদের নাম ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। যন্ত্র ব্যবহার করে, শ্রমিকের মজুরির দরে বিল প্রদান করার ফলে সরকারের ৪১ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত লোকসান হয়েছে। এছাড়া প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেন, এই অতিরিক্ত অর্থ বিল প্রস্তুত ও প্রদানের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের নিকট থেকে আদায় যোগ্য। বিল প্রদানে নির্বাহী প্রকৌশলীর সতর্কতার প্রয়োজন ছিল।
এখন জেলা জুড়ে প্রশ্ন উঠেছে, খাল খননের অতিরিক্ত টাকা গেল কোথায় ???
খাল খননের প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, এলজিইডি’র টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের হাজিরা সিটে নাম ও স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ পাওয়ায় তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে আমরা প্রকল্পে নয় ছয়ের ঘটনার সত্যতা পেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি পরবর্তী কার্যক্রম করার জন্য উর্দ্ধতন অফিসে প্রক্রিয়া চলমান আছে।
তিনি আরও জানান, আমি খাল খনন এলাকায় গিয়ে এলসিএস গ্রুপের তদন্ত করেছি। এতে দেখা যায় খাল খননের কিছু কাজ হয়েছে বেকু দিয়ে অথচ বিল উত্তোলন করা হয়েছে মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর দিয়ে। প্রকল্পে এলসিএস গ্রুপের জীবিত সদস্যরাও কোনো টাকা উত্তোলন করেনি, অথচ তাদের স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
এর আগে ৭ আগষ্ট সিরাজগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসে থেকে ১২নং এলসিএস গ্রুপের ২০নং মৃত কাজেমের জন্য ৬ জনকে শোকজ করা হয়েছে।
শোকজ হওয়া সোসিওলজিস্ট হেমন্ত কুমার, ১৩ আগষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বরাবর শোকজের জবাব দাখিল করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, এ প্রকল্পের কোনো কাজের সঙ্গে তাকে রাখা হয়নি বরং এ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত না তারেক এবং হাফিজ কে দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম সব কাজ করেছেন, এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেক বার মৌখিক ও লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। এছাড়া মৃত কাজেমের ব্যাপারে কিছুই জানেনা।
এরপর গত ২৩ আগষ্ট সোসিওলজিস্ট হেমন্ত কুমার জবাব দাখিলের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক, টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের ঢাকা অফিস বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২১ আগষ্ট সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। মতবিনিময় কালে সোসিওলজিস্ট হেমন্ত কুমারের ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষা হয়নি, যেমন ( তার পরিচিত ভেকু মেশিন ব্যবহার করতে চেয়েছিল, সমিতি কর্তৃপক্ষ রাজি না হওয়ায় তা করতে পারেনি, আরো উল্লেখ করেন , তার স্বার্থ বিঘ্ন হওয়ায় পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সুকৌশলে কোন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেনি।
এ জন্য বর্তমান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যার জন্য তিনি এককভাবে দায়ী, তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য যে, গত ৩ আগষ্ট তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পাবনা ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। যার সিরাজগঞ্জ এলজিইডির জেলা প্রতিনিধি হিসেবে সাবেক সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সাবের আলী কে ২নং সদস্য করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। অথচ তদন্ত শুরুর পূর্বেই ভূত পূর্ব ভাবে ৯ আগষ্ট প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে বদলি করা হয়েছে। ১২ নং এলসিএস গ্রুপের চুক্তিপত্রের ৬ ধারায় দেখা যায়, ব্যক্তি দিয়ে কাজ করার কথা লেখা আছে, এবং সেখানে আরও দেখা যায়, নির্বাহী প্রকৌশলী ও এলসিএস গ্রুপের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে, অথচ নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস থেকেই ব্যক্তি দিয়ে কাজ না করে যন্ত্রের ব্যবহার করা হয়েছে , অথচ মৃত ব্যক্তি কাজেমের জন্য জেলার অধীনস্থ ৬ কর্মকর্তাদের শোকজ করা হয়।
এর আগে এই প্রকল্পে গত (১৭ জুলাই) সোমবার সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের জন্তিপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দুদক কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে প্রকল্পে নয় ছয়ের ঘটনার সত্যতা পায়, পরবর্তী কার্যক্রম করার জন্য দুদকের উর্দ্ধতন অফিসে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান আছে।
এবি/ওশিন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            