নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদে সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও সরকার তা নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় এমপি শহীদুজ্জামান সরকারের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সংসদ অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে সরকার নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান আন্তর্জাতিক সংকটেও দেশে খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত আছে। কোভিড অতিমারি ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বে খাদ্যপণ্যসহ সব ক্ষেত্রে জোগান ব্যবস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট মোকাবিলার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ সরকার প্রতিনিয়ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে।
খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ ও কৃষি ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উপকরণ ও নীতি সহায়তার ফলে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছে।
মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ এখন ২৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৪১টি কোম্পানি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। বিভিন্ন জোনে ৫০টি শিল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব শিল্প থেকে এ পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য উৎপাদন হয়েছে এবং ২৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি রয়েছে। এই শিল্পগুলোর প্রায় ৫০ হাজার জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকগুলো দেশ নিজ নিজ দেশের গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানায়। পরে আলোচনার মাধ্যমে ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। যেহেতু ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন হয়ে আসছে সেহেতু একই বিষয়ে আরও একটি আন্তর্জাতিক দিবস পালনের প্রস্তাবটি সমীচীন হবে না।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষযক মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও কয়েকজন শহীদ পরিবারের সদস্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, গণহত্যা নিয়ে কাজ করে এমন ব্যক্তি ও সংগঠনও বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে কাজ করে যাচ্ছে।
গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় পৃথিবীতে সংঘটিত অন্য যেকোন গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় প্রক্রিয়ার মতই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে, বন্ধুরাষ্ট্রসহ, গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের স্বীকৃতি আদায় এবং বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি প্রদানের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তোলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় সহজ হবে। এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ হতে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিন মেয়াদে ৮৫৪ কি.মি. সড়ক চার লেন-
জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে ৮৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, ১২ হাজার ৪৩৪ কিমি মহাসড়ক উন্নয়ন এবং এক লাখ ২৩ হাজার ২৫৪ মিটার দৈর্ঘ্যের এক হাজার ১৩১টি সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে ৫৭৪ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, ৪ হাজার ৬৩৪ কিমি মহাসড়ক উন্নয়ন এবং ৬৪ হাজার ৮৪৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ৭৫০টি সেতু নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
সৈয়দা রুবিনা আক্তারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশের ৫৫ লাখ ৬১৭টি পরিবার অর্থাৎ প্রায় ২৮ লাখ মানুষকে ঘর প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
২০২৫ সালের মধ্যে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু-
মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২৮ হাজার ১৩৪ মেগাওয়াট। ১১ হাজার ৬০৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০২৩ হতে ২০২৬ সালের মধ্যে এগুলো পর্যায়ক্রমে চালু হবে। ২ হাজার ৪২৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এটি চালু হবে বলে আশা করা যায়।
এবি/ওশিন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            