নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অস্ত্রের জোরে সংবিধান লংঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারিরা দেশের কোন উন্নয়নই করেনি।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার খন্ডচিত্র তুলে ধরে তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট প্রদানের জন্য জনগণের প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, “একমাত্র নৌকা ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় আর অবৈধভাবে সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতা দখলকারিরা দেশকে কিছুই দিতে পারেনি।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে আয়েজিত এক বিশাল নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া ভাষণে একথা বলেন।
তিনি বলেন, নূহ নবী একদা নৌকায় করে মহাপ্লাবনের সময় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইশারায় মানব জাতিকে রক্ষা করেছিলেন। আপনারা এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। এই নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলেই দেশের মানুষের উন্নতি হয়। অস্ত্র হাতে অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলকারীরা দেশের কোন উন্নতি করে না। তাদের সময় দেশের কোন উন্নতি হয় নাই, উন্নতি হয়েছে একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে। আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগ থেকে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র যেখানে ২৫ ভাগ ছিল সেখানে আজকে হতদরিদ্রের হার মাত্র ৫ দশমিক ৬ ভাগ। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের মাটিতে কেউ হতদরিদ্র থাকবে না।
দরিদ্র ও ভূমিহীন সকল শ্রেনী পেশার মানুষ এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে ঘর করে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ খেয়ে পড়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করবে, সে ব্যবস্থা আমরা করে দেব। আর একমাত্র নৌকা ক্ষমতায় থাকলে এটা সম্ভব।
তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি আর ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন তারুণ্যে সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ। এটা হবে সেই ‘সোনার বাংলা’ যে বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন জাতির পিতা একদিন দেখেছিলেন। আমাদের জনগণ প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ হয়ে স্মার্ট জনশক্তি হবে এর অর্থনীতি স্মার্ট হবে এবং আমাদের সমাজ ব্যবস্থা স্মার্ট হয়ে গড়ে উঠবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে তরুণ ও যুবকেরা এবং যে শিশুটা আজকে জন্মগ্রহণ করলো সেও যেন একটি সুন্দর জীবন পায় তার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি, জলবায়ুর অভিঘাত থেকে বাংলাদেশ যেন মুক্ত থাকতে পারে এর জন্য শতবর্ষ মেয়াদী ‘ডেল্টা পরিকল্পনা -২১০০’ আমরা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। অর্থাৎ ২১০০ সালের বাংলাদেশের উন্নয়ন কিভাবে হবে সেই পরিকল্পনাও আমরা প্রণয়ন করেছি। যাতে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে।
তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নৌকায় তাঁর প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য সমাবেশ স্থলে আগতদের ওয়াদা চান। জনতা যখন সমস্বরে দু’হাত তুলে প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন জানায়।
প্রধানমন্ত্রী জনসভায় ফরিদপুর, রাজবাড়ী এবং মাগুরার নির্বাচনী আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে জনগণকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং এবং তাদের জন্য ভোট প্রত্যাশা করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুর রহমান, মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হক সভায় বক্তব্য রাখেন।
বিকেল সোয়া ৩ টায় শেখ হাসিনা যখন জনসভা মঞ্চে তখন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠ ছাপিয়ে জনতার ব্যাপ্তি বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা নেড়ে জনতাকে শুভেচ্ছা জানালে জনগণও প্রতিউত্তর দেয়।
এরআগে পদ্মাসেতু পাড়ি দিয়েই ফরিদপুর পৌঁছান প্রধানমন্ত্রীর। তাঁর সফরকে কেন্দ্র করে ফরিদপুর যেন উৎসবের নগরীর রূপ লাভ করে।
গত ২০ ডিসেম্বর সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহ পরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত এবং এরপর সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্বাচনী জনসভার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
এরপর ৩০ ডিসেম্বর, শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় জনসভায় ভাষণ দেন, যেটি তার নির্বাচনী এলাকাও এবং ঢাকায় ফেরার পথে মাদারীপুরের কালকিনিতে আরেকটি জনসভায় ভাষণ দেন। আগের দিন তিনি বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এব বিশাল নির্বাচনী সভায় ভাষণ দান শেষে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি সৌধে পুস্তসতবক অর্পণ করে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত এই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাঁর পৈত্রিক নিবাসে রাত্রিযাপন করেন।
তিনি ২৬ ডিসেম্বর রংপুর সফর করেন এবং তারাগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের তেজগাঁও কার্যালয় থেকে তিনি বেশ কয়েক দফায় বিভিন্ন জেলার নির্বাচনী সভায় ভার্চুয়ালি বক্তব্য প্রদান করেন।
গতকাল ইংরেজী নববর্ষের প্রথম দিনে তিনি রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়া চক্র মাঠে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ প্রদান করেন।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, আগামী ৪ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে জনসভার মধ্য দিয়ে দলীয় প্রধানের নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করার কথা রয়েছে।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            