এস.এম রবি, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঝিনাইদহ পৌর এলাকার ক্যাসেল ব্রীজ সংলগ্ন আরাপপুর মাস্টার পাড়া নিবাসী মৃত শিশির বিশ্বাসের ছেলে দেবব্রত বিশ্বাস (৪২)নিজেকে ৮ম শ্রেণী পাশ দাবী করলেও ক্লাস সিক্স থেকেই বখাটেপনার জন্য চাচা বীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ঝিনাইদহ পুরাতন কাঁচা বাজfরে (ট বাজার) তাকে মুদি দোকানে বসিয়ে দেন, দেবব্রত'র বাবা আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে দূর্বৃত্তের হাতে ছুরিকাঘাতে নিহত হলে চার সন্তান নিয়ে চরম অভাব অনটনে দিন যায় দেবব্রত'র মায়ের,চাচাদের সহযোগিতায় চলত তাদের সংসার, ৯০ এর দশকে দেবব্রত'র আরেক চাচা জীবন কুমার বিশ্বাস ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে খুব বেশি টাকা পয়সা উপার্জন করতে পারেননি।
২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে জীবন কুমার বিশ্বাস ভারতে পালিয়ে যান, এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে জীবন কুমার বিশ্বাস বাংলাদেশে ফিরে আসেন তবে দীর্ঘদিন দেশে না থাকায় এবং আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা না রাখায় তৎকালীন নেতৃত্ব তাকে তেমন পাত্তা দেয়নি। কয়েক বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে ২০১২ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলে প্রচার সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়ে তিনি আলোচনায় আসেন। একই সময়ে ঝিনাইদহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বনে যান,এরপর তাকে আর তার ভাতিজা দেবব্রত কে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
২০১৪ সালে নৌকা প্রতীক পান শফিকুল ইসলাম অপু কিন্তু তার বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের আরেক নেতা স্বতন্ত্র ভোট করলে জীবন কুমার বিশ্বাস স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হলে ঝিনাইদহের সেকেন্ড এমপি হিসাবে পরিচিতি পান জীবন কুমার বিশ্বাস। চাচার পাওয়ারে ও মদদে দেবব্রত হয়ে উঠেন ক্ষমতার অংশ, শহরে গড়ে তোলেন তার নিজস্ব বলয়। এই বলয় শহরে ভাস্তে লীগ হিসাবে পরিচিতি পায়, তাকে সবাই গুরু বলে ডাকা শুরু করেন,ট্রুকলার এ্যাপসে তার নাম্বার সার্চ দিলে দেবব্রত গুরু বলে ভেসে উঠে, ঝিনাইদহ সাবরেজিস্টার অফিস থেকে দলিল লেখক সমিতির মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে ১২ লাখ টাকা চাঁদা উঠানো হত। এই টাকার অর্ধেক হাতিয়ে নিতেন দেবব্রত, মাসিক হিসাব করলে শুধু সাবরেজিস্টার অফিস থেকেই দেবব্রত ২৪ লাখ টাকা নিতেন। টেন্ডারবাজির সমন্বয়ক ছিলেন দেবব্রত। ঝিনাইদহের অধিকাংশ ঠিকাদার ছিলো তার কাছে জিম্মি। নিজেও গড়ে তুলেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঝিনাইদহ নতুন হাটখোলা থেকেও মাসিক মোটা অংকের চাঁদা নিতেন । এই সকল টাকা সে আবার সুদে ব্যবসায় ইনভেস্ট করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন। ঝিনাইদহ শহরে ভিআইপি'দের জন্য গোপনে অবৈধ বিদেশী মদের একটা ব্যবসা চলে এই ব্যবসারও অংশীদার ছিলেন দেবব্রত বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করে।
শালিস বিচার করেও নিতেন মোটা অংকের টাকা যার কারনে জীবন কুমার বিশ্বাসের রাজনৈতিক অফিস শালিস তলা হিসাবে পরিচিতি পায়। দেবব্রত ঝিনাইদহ শহরে নামে বেনামে গড়েছেন অঢেল সম্পদ কিন্তু এতটাকা কোথায় রাখবেন বাংলাদেশে এত সম্পদ করা ঠিক হবেনা বিবেচনা করে পারিবারিক ভাবে প্লান করে দেবব্রত'র চাচা বীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস কে ২০১৯ সালে পরিবার'সহ ভারতে পাঠিয়ে দেন, বীরেন্দ্রনাথ পরিবারসহ কলকাতার বারাসাত এলাকায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি ভারতীয় নাগরিক হন ,জমি কিনে তৈরী করেন আলিশান বাড়ি। এরপর দেবব্রত ভারতে তার চাচার কাছে কয়েক কোটি টাকা পাচার করেন, দেবব্রত'র নামে কয়েকটি ব্যাংকে একাধিক একাউন্টে কয়েক কোটি টাকা আছে বলে অসমর্থিত একটি সূত্র থেকে জানা যায়।
গত ৪ আগস্ট ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের মিছিল থেকে একটি অংশ বিএনপির পার্টি অফিস ও জেলা বিএনপির সভাপতির বাড়িতে আগুন দেয়।উক্ত ঘটনায় পরপর দুটি মামলা হয়, ঐ মিছিলে দেবব্রত নেতৃত্ব পর্যায়ে থাকলেও কোন এক অদৃশ্য কারনে দেবব্রত'র নামে কোন মামলা হয়নি। ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর দেবব্রত'র চাচা বর্তমান ঝিনাইদহ সদর পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি জীবন কুমার বিশ্বাস ভারতে পালিয়ে যান। দেবব্রত ঢাকায় এসে দুমাস পালিয়ে থেকে কিছু লোককে টাকা পয়সা দিয়ে এলাকায় অবস্থান করছেন বলে তিনি কয়েক জনের নিকট জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে দেবব্রত'র নিকট জানতে চাওয়া হলে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অমারবাঙলা/ ইউকে
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            