ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদসহ (ডাকসু) ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোতে প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ার পর সংগঠন পুনর্গঠনের কথা ভাবছিল গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)। এবার সে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সংগঠনটি। নাম বদলে ফের ‘ছাত্রশক্তিতে’ ফিরছে তারা। একই সঙ্গে নেতৃত্বেও আসছে পরিবর্তন। এখন থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আদর্শিক সহযোগী ছাত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করবে তারা।
সংগঠন সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল ২৩ অক্টোবর শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বাগছাসের জাতীয় সমন্বয় সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নতুন নাম ও নেতৃত্ব ঘোষণা করা হবে। সেদিন নতুন নামের পাশাপাশি কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এবং ঢাকা মহানগর শাখার কমিটি ঘোষণা করা হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি হতে পারে সর্বোচ্চ ১০১ সদস্যবিশিষ্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটকে বিশেষ শাখার মর্যাদা দিয়ে সুপার ফোর (কেন্দ্রীয় এবং ঢাবির শীর্ষ চার নেতা) কাঠামোতে সংগঠন পরিচালিত হতে পারে। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়াও অঞ্চলভিত্তিক সাংগঠনিক সম্পাদক ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
সূত্র আরও বলছে, সংগঠন নিয়ে এখন পর্যন্ত তিনটি নাম আলোচনায় আছে—গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি, জাতীয় ছাত্রশক্তি ও বাংলাদেশ ছাত্রশক্তি। এই তিন নাম থেকে একটি বেছে নেওয়া হবে। তবে জাতীয় ছাত্রশক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারির আলোচনায় আছেন বাগছাসের বর্তমান আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার ও সদস্য সচিব জাহিদ আহসান। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের আলোচনায় আছেন ঢাবি শাখার বর্তমান সদস্য সচিব মহির আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব আবু তৌহিদ মো. সিয়াম ও কেন্দ্রীয় সহ-মুখপাত্র ফারদিন হাসান এবং ঢাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক লিমন আহসান। এ ছাড়া সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্বের আলোচনায় আছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ, কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক তাহমীদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী, ঢাবি শাখার সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব আল আমিন সরকার এবং সদস্য সচিব মোহাম্মদ সাকিব ও ঢাবি শাখার সাবেক মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম।
জাতীয় সমন্বয় সভার সদস্য সচিব মহির আলম বলেন, ডাকসু নির্বাচনের পর আমরা সংগঠন পুনর্গঠনের কথা ভাবছিলাম। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সমন্বয় সভার মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ পুনর্গঠন হবে। নতুন নাম ও নেতৃত্ব নিয়ে আমরা নতুন করে শুরু করতে চাই। সেদিন নতুন নাম ঘোষণা, কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এবং ঢাকা মহানগরের নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি কিছু আদর্শিক বিষয় এবং পলিটিক্যাল মটো ও ভিশন নিয়ে আলোচনা হবে।
বাগছাসের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদে কিছু অনুপ্রবেশকারী সংগঠনের শৃঙ্খলা নষ্ট করেছে। বিশেষ করে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা প্রবেশ করে স্যাবোটাজ করেছে। এবার সর্বোচ্চ যাচাই-বাছাই করেই নেতৃত্বে আনা হবে। যাদের বিরুদ্ধে অন্য সংগঠনের আদর্শে ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা থাকবে তাদের সংগঠনে রাখা হবে না। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা এবং গত এক বছরে বাগছাসের কার্যক্রমে সম্পৃক্ততার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। সরাসরি এনসিপির ছাত্র সংগঠন ঘোষণা না হলেও আদর্শিক ছাত্র সংগঠন হিসেবে পথ চলবে ছাত্রশক্তি।
বাগছাসের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, আমরা আদর্শিক এবং বাংলাদেশ পন্থাকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন রূপে আসব। শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র করেই পরিচালিত হবে আমাদের কার্যক্রম। তবে ওয়েলফেয়ার পলিটিকস আমরা করব না। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আমরা প্রত্যাশিত ফল পাইনি। তবে আগামীতে ইমেজ বাড়িয়ে আগামী ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোতে আমরা ভালো করার চেষ্টা করব। বাংলাদেশ পন্থা আদর্শকে আমরা সর্বোচ্চ বিবেচনা করব। যাচাই-বাছাই করেই সংগঠনের নেতৃত্বের বিষয় ভাবা হচ্ছে, যাতে কেউ ফের স্যাবোটাজ না ঘটাতে পারে। গুপ্ত আদর্শ ধারণকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকবে।
এর আগে শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তি, পরিসর ও সংস্কৃতি নির্মাণ, শিক্ষার্থী কল্যাণ, ছাত্র-নাগরিক রাজনীতি নির্মাণকে এবং রাষ্ট্র-রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর আত্মপ্রকাশ করেছিল ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’। ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলো, সেই আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতারা। তবে প্রতিষ্ঠার এক বছর না পেরোতেই অভ্যুত্থানের পর ১৩ সেপ্টেম্বর ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও এনসিপির বর্তমান সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সব কমিটি ও কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়। পরে এই সংগঠনের কয়েকজন নেতাকে সামনে রেখেই গঠন করা হয় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) নামে স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠন। তবে এতে প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়ায় ফের ছাত্রশক্তিতেই ফিরছে তারা।
এরই মধ্যে এনসিপির অঙ্গসংগঠন হিসেবে জাতীয় যুব শক্তি এবং জাতীয় শ্রমিক শক্তি আত্মপ্রকাশ করেছে। তারই প্রেক্ষাপটে ধারণা করা হচ্ছে ছাত্র উইং হিসেবে জাতীয় ছাত্রশক্তি নামকেই বেছে নেওয়া হতে পারে।
আমারবাঙলা/এফএইচ