গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার পরিদর্শক-তদন্ত খোকন চন্দ্র সরকার প্রতিদিন ঢাকা থেকে থানায় আসেন ব্যক্তিগত কোটি টাকা দামের পাজেরো গাড়িতে। থানায় অফিস করেন শিল্পপতির স্টাইলে। তার অফিসের কার্যক্রমের ধরন নিয়ে থানার পুলিশ সদস্য সহ এলাকাবাসীর মাঝে কৌতুহল জেগেছে। কে এই রাজপুত্র, কীভাবে এত দ্রুত বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন?
অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশের এসআই পদে ২০১০ সালে নিয়োগ পাওয়া খোকন চন্দ্র সরকার বিগত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেশিরভাগ সময় চাকরি করেছেন নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায়। বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, ব্যবসায়ীদের নির্যাতন করে টাকা আদায় ও আন্তঃজেলার মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের একচ্ছত্র ক্ষমতা ছিল তার হাতে। মোটা অংকের টাকা কামিয়ে দিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা ও ক্ষমতাশীলদের। নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর গোয়েন্দা পুলিশের মূর্তিমান আতঙ্ক এই খোকন চন্দ্র সরকার।
২০২২ সালে এসআই থেকে পরিদর্শক পদে পদোন্নতির পরেই তাকে পোস্টিং করা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে নরসিংদী জেলায়। পদোন্নতি পাওয়ার পরেই নরসিংদীতে তাকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়; অনেক সিনিয়রকে বাদ দিয়ে। ৫ আগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত সশস্ত্রভাবে তিনি লড়ে যাযন ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে। বিরোধীদলীয় এমন কোনো নেতা-কর্মী নেই, তার হাতে লাঞ্ছিত, অপমাণিত কিংবা নির্যাতনের শিকার হননি। ৫ আগস্ট রাতের বেলায় ছদ্মবেশে নরসিংদী থেকে পালিয়ে যান তিনি। তার বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ অবস্থা দেখা দিলে কৌশলে আন্দোলনরত বহু লোককে নির্যাতন করে নেওয়া টাকা ফেরত দিয়ে মাফ চেয়ে রক্ষা পাযন তিনি। এতকিছুর পরও নরসিংদী থেকে গাজীপুরের একটি থানায় পোস্টিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মামলা হওয়ার কথা এবং তিনি এখন বরখাস্ত থাকার কথা; কিন্তু বিপরীতে তিনি বহাল তবিয়তে পোস্টিং পেয়ে থানায় আছেন; এসব নিয়ে চলছে জোড় আলোচনা।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার ড. জাবেদ সাদেক জানান, সম্প্রতি তাকে গাজীপুর জেলায় পোস্টিং করা হলে শূন্য পদে তাকে পরিদর্শক-তদন্ত হিসেবে কাপাসিয়া থানায় পদায়ন করা হয়। তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরো জানান, নরসিংদী থেকে গাজীপুর জেলায় পোস্টিং অর্ডার করেছে ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ।
এ বিষয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আওলাদ হোসেন বলেন, আমরা নরসিংদী থেকে অন্যত্র পোস্টিং করে দিয়েছি নিয়মিত বদলি হিসেবে। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। যেহেতু অভিযোগের বিষয়টি এখন আমরা শুনেছি, আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়া পদায়ন বিষয়ে তিনি বলেন, পোস্টিং করতে গিয়ে অনেক সময় যাচাই-বাছাই করা হয় না। আমরা জেলায় পাঠিয়ে দেই। পোস্টিং দেওয়া এবং যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব জেলা পুলিশ সুপারের। প্রয়োজনে আপনারা পুলিশ সুপারের কাছ থেকে এ বিষয়ে তথ্য নিতে পারেন।
এদিকে পুলিশ কর্মকর্তা খোকনচন্দ্র সাহার বিশাল সম্পদ নিয়ে কৌতুহলী হয়ে হয়ে উঠেছে নরসিংদী ও কাপাসিয়ার সংশ্লিষ্টরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাকে দুইটি পাজেরো ও একটি দামি প্রাইভেট কার ব্যবহার করতে দেখা যায়। কাপাসিয়া থানার একজন পুলিশ সদস্য জানান, স্যার একেক দিন একেক গাড়ি দিয়ে অফিস করেন। তিনি তিনটি দামি গাড়ির ব্যবহার করে থানায় আসছেন। তিনি দুপুর বেলায় অফিসে এসে কাজ-কর্ম করে রাতের বেলায় আবার ঢাকায় চলে যান। আর কাজকর্মের ধরন ভিন্ন। জমিদারপুত্র কিংবা শিল্পপতি আদলে তার চলাফেরা।
তার ঘনিষ্ঠরা জানান, অল্প কয়েক দিনের জন্য তিনি এ থানায় এসেছেন। খুব তাড়াতাড়ি ওসি হিসেবে তাকে অন্য থানায় বসানো হবে। সরকারের উপরে তার জোর আছে।
পুলিশ কর্মকর্তা খোকনের অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের কথা শুনে অনেকেই হতবাক। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে তার ও তার পরিবারের স্বজনদের নামে-বেনামে রয়েছে অনেক প্লট, ফ্ল্যাট, বাড়ি ও গাড়ি।
তার হাতে চরমভাবে নির্যাতিত ও অপমানিত নরসিংদীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ব্যবসায়ী মনজুর এলাহী জানান, পুলিশ কর্মকর্তা খোকন চন্দ্র সরকার একজন অত্যাচারী নিষ্ঠুর ধরনের। তার হাতে নরসিংদীর রাজনৈতিক নেতা ব্যবসায়ী সহ অনেকেই নির্যাতিত হয়েছেন। আমাকে ধরে নিয়ে জোরপূর্বক ৩০ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। টাকা দিতে অস্বীকার করায় চরমভাবে অপমানিত ও নির্যাতন করেছেন। তিনি প্রথমে নরসিংদীতে এসআই হিসেবে যোগদান করেন। তখন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারের ঘনিষ্ঠ কেশিয়ার হিসেবে পুরো জেলায় দাপিয়ে বেড়ান। তার নেতৃত্বেই নরসিংদী জেলা থেকে মাদক বাণিজ্য নিরাপদে চলছিল। কিছুদিনের মধ্যে আবার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি হিসেবে দায়িত্ব পান। এত জুনিয়র কর্মকর্তা দায়িত্ব পাওয়া ছিল নজিরবিহীন। ৫ আগস্ট রাত পর্যন্ত সমগ্র জেলার মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন এই খোখন চন্দ্র সরকার। তার হাতে নির্যাতিত অনেকেই মামলার প্রস্তুতি নিলেও অদৃশ্য শক্তিতে খোকন এগুলো ম্যানেজ করেছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার এসআই হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন তার বিরুদ্ধে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ীদের নির্যাতন করে মোটা অংকের টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
সামগ্রিক সকল অভিযোগ বিষয়ে জানতে খোকন চন্দ্র সরকারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            