ঐতিহ্য ও কৃষ্টি

১২ডিসেম্বর, নরসিংদী হানাদার মুক্ত দিবস পালিত

নরসিংদী প্রতিনিধি:

হাবিব আহম্মদ মোল্লা: নরসিংদী হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে নরসিংদীতে এক বিজয় র‌্যালি বের করা হয়। নরসিংদী জেলা প্রশাসন আয়োজিত এই র‌্যালিতে নেতৃত্বদেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন। বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি কর্মকতা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ অন্যান্যরা এতে অংশগ্রহণ করেন। র‌্যালিটি নরসিংদী জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়।
জানা গেছে,বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বাঙালির অহংকার ও গৌরবের মাস। আজ থেকে ঠিক ৫৪ বছর আগে ১২ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয়েছিল নরসিংদী। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয় ও আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে গোটা নরসিংদী শত্রুমুক্ত হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এ দিনটি তাই নরসিংদীবাসীর কাছে অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ও স্মরণীয় দিন ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। ওই খণ্ড যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয়ে শহীদ হয়েছেন জেলার ১১৬ জন বীর সন্তান। এর মধ্যে নরসিংদী সদরের ২৭, মনোহরদীর ১২, পলাশে ১১, শিবপুরের ১৩, রায়পুরায় ৩৭ ও বেলাবো উপজেলার ১৬ জন। সশস্ত্র যুদ্ধে জেলার বিভিন্ন স্থানে শত শত নারী-পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করে গণকবর দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা মনে হলে এখনও শিউরে ওঠে এলাকাবাসী। এ ছাড়া বহু মা-বোনের নীরব আত্মত্যাগের বিনিময়ে নরসিংদী হানাদারমুক্ত হয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধে ঢাকার সন্নিকটে অবস্থিত নরসিংদীতেও মুক্তিযোদ্ধারা পিছিয়ে থাকেনি। দেশ মাতৃকার ডাকে সাড়া দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জেলার আপামর জনসাধারণ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে রুখে দাঁড়িয়েছিল তারা স্বাধীন মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মার্চ মাস থেকেই সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে পাকবাহিনীর অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দেয় তারা। মুক্তিবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে ৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর পরাজয় ও আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে নরসিংদী পাক হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের মার্চে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে নরসিংদীতে ইপিআর, আনসার ও পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয় এবং এ সময় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা তাদের স্বাগত জানায়। নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে শত শত যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়; কিন্তু এ খবর পৌঁছে যায় পাকবাহিনীর কাছে।

৪ এপ্রিল পাকবাহিনীর বোমারু বিমান নরসিংদী শহরে বোমাবর্ষণ শুরু করে। গোটা শহরে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ পরিস্থিতি। বিমানবাহিনীর বোমা বর্ষণে শহীদ হন আবদুল হক ও নারায়ণ চন্দ্র সাহাসহ নাম না জানা আরও আটজন।
২৩ মে তৎকালীন মুসলীম লীগ নেতা মিয়া আবদুল মজিদ মুক্তি সেনাদের গুলিতে নিহত হন। পরে শুরু হয় প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও চোরাগুপ্তা হামলা। এরমধ্যে পাকবাহিনী নরসিংদী টেলিফোন ভবনে ঘাঁটি স্থাপন করে। স্থানীয় টাউট, দালাল ও রাজাকারদের যোগসাজশে হানাদার বাহিনীরা প্রতিদিন চালায় ধর্ষণ, নরহত্যা ও লুটতরাজ। অন্যদিকে বাংলার স্বাধীনতাকামী তরুণরা প্রতিরোধের প্রস্তুতি নেয় এবং আঘাত হানে শত্রু শিবিরে। নরসিংদী সদর উপজেলায় নেহাব গ্রামের নেভাল সিরাজের নেতৃত্বে হানাদার প্রতিরোধ দুর্গ গড়ে তোলা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী জেলা ছিল ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তৎকালীন মেজর জেনারেল সফিউল্লাহ। নরসিংদীকে ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে নেওয়া হলে কামান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ব্রিগেডিয়ার (অবসরপ্রাপ্ত) এ এন এম নুরুজ্জামান। নরসিংদীকে মুক্ত করতে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা যেসব স্থানে যুদ্ধ করেছে, সে স্থানগুলো হলো-নরসিংদীর সদর উপজেলার বাঘবাড়ী, পালবাড়ী, আলগী, পাঁচদোনা, পুটিয়া, চলনদীয়া, মনোহরদী উপজেলার হাতিরদীয়া বাজার, রায়পুরা উপজেলার শ্রীরামপুর বাজার, রামনগর, মেথিকান্দা, হাঁটুভাঙ্গা, বাঙালীনগর, খানাবাড়ী, বেলাব উপজেলার বেলাব বাজার, বড়িবাড়ী, নারায়ণপুর ও নীলকুঠি।

এ সময় আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে বেলাব বড়িবাড়ীর নীলকুঠির যুদ্ধে হানাদারদের হাতে শহীদ হন সুবেদার আবুল বাশার, মমতাজ উদ্দিন, আব্দুস সালাম ও আব্দুল বারী। এ ছাড়া পাক হানাদার বাহিনীরা বড়িবাড়ী বাজনাবরের নিরীহ ৮ থেকে ১০ জনকে ধরে এনে এক সঙ্গে গুলি করে হত্যা করে এবং বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ স্থানটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হলেও এখন তা অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে।

আমার বাঙলা/আরএ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ফেসবুকে মালয়েশিয়ার স/ন্ত্রা/সী গোষ্ঠীর কার্যকলাপ প্রচারের দায়ে ১  বাংলাদেশির ১০ বছরের কারাদণ্ড।

মো:নুরুল ইসলাম সুজন, মালয়েশিয়া: কুয়ালালামপুর হাইকোর্টে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর...

দীর্ঘ ৩০ বছর পর মসজিদের দখলকৃত জমি উদ্ধার ও সীমানা নির্ধারণ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার মিশন চৌমুহনী বায়তুল আমান জামে মসজি...

ওসমান হাদির উপর হামলার প্রতিবাদে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হ...

রহস্যঘেরা বাংলো বাড়ি পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারিতে

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের পাহাড়ি জনপদ কাশেমনগরের...

৪০ ফুট গভীর পর্যন্ত খুঁড়েও মিলল না শিশু সাজিদের সন্ধান

রাজশাহীর তানোরে ৩০–৩৫ ফুট গভীর একটি গর্তে পড়ে যাওয়া শিশু স্বাধীনকে উদ্ধ...

টেকনাফে বিপুল ইয়াবা ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক ১

কক্সবাজারের টেকনাফে কোস্ট গার্ডের অভিযানে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও দেশীয়...

রাবিপ্রবিতে উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা" বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট -সিজিডি'র উদ্যোগে রাঙ্গামাটি বিজ্...

ওসমান হাদির উপর হামলার প্রতিবাদে ও দোষীদের বিচার চেয়ে ইবিতে বিক্ষোভ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী...

ওসমান হাদির উপর হামলার প্রতিবাদে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হ...

ফেসবুকে মালয়েশিয়ার স/ন্ত্রা/সী গোষ্ঠীর কার্যকলাপ প্রচারের দায়ে ১  বাংলাদেশির ১০ বছরের কারাদণ্ড।

মো:নুরুল ইসলাম সুজন, মালয়েশিয়া: কুয়ালালামপুর হাইকোর্টে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা