ছবি: সংগৃহীত
ফিচার

হাওর ও নদীর মাছ বাজারে আনতেই উধাও

তিমির বনিক, মৌলভীবাজার

শীতের সকাল। লালচে আলোয় চারপাশ তখনো রঙিন। সারারাত হাওর–নদীতে মাছ ধরে ভোরের আলো ফুটতেই মাছের খলুই কাঁধে নিয়ে হাটের দিকে ছুটছেন মৎস্যজীবীরা। হাট শুরু হতেই চোখের পলকে ফুরিয়ে যায় হাওর–নদীর টাটকা মাছ।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের কাউয়াদীঘি হাওর ও কুশিয়ারা নদীর মাছ নিয়ে শীতের সকালে বসে দুই ঘণ্টার একটি হাট। স্থানীয়ভাবে পরিচিত ওয়াপদা–কাশিমপুর হাটের বয়স প্রায় অর্ধশতকের। তবে প্রতিদিন সকালে মাছের এই হাট বসছে প্রায় ২০ থেকে ২২ বছর ধরে।

প্রতিদিন সকালে লাখ টাকার মাছ কেনাবেচা হয় এখানে। মূলত কাউয়াদীঘি হাওর ও কুশিয়ারা নদীর দেশি মাছই এই বাজারে আসে। টাটকা হাওর–নদীর মাছের চাহিদা থাকায় ভোরবেলা মৌলভীবাজার শহরসহ দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা ছুটে আসেন।

সকাল ছয়টার দিকে হাট এলেই দেখা যায়, বাজার ইতোমধ্যে জমে গেছে। কেউ হাতে মাছভরা খলুই, কেউ আবার কাঁধে ডালা নিয়ে দ্রুত হাটের দিকে দৌড়চ্ছেন। আগে এলে আগে বিক্রির সুযোগ—এই তাড়াই তাঁদের চলার প্রেরণা।

হাটে ঢুকেই বিক্রেতারা দুই আড়তের যেকোনো একটিতে মাছ জমা দেন। এরপর শুরু হয় নিলাম। ক্রেতারা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে ডাক ওঠার অপেক্ষায় থাকেন। সর্বোচ্চ দাম বললেই মাছটি ক্রেতার হাতে চলে যায়। বিক্রেতারা টাকা গুনে বাড়ির পথে রওনা দেন।

হাটে শুধু নিজেদের খাওয়ার জন্য মাছ কিনতে আসা মানুষই নন, বড় অংশই খুচরা বিক্রেতা। তাঁরা এখান থেকে মাছ কিনে মৌলভীবাজার শহর, বিভিন্ন গ্রামীণ বাজার কিংবা গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেন। মাছের মধ্যে পাওয়া যায় কই, চ্যাং, পুঁটি, মখা, কাকিয়া, বোয়াল, গ্রাস কার্প, কার্ফু, রুই, চিংড়ি, চাঁদা ও নানা ধরনের দেশি মাছ।

মাছের পাশাপাশি হাটে হাঁস–মুরগি, সবজি, পান–সিগারেটের দোকানও বসে। চায়ের দোকানে কাপে কাপে ধোঁয়া উঠছে, প্লেটে ভরে পরিবেশন করা হচ্ছে পরোটা ও আখনি—হাটজুড়ে মেলা-মেলার পরিবেশ।

স্থানীয় বাসিন্দা আশিক মিয়া বলেন, “এই বাজারে সব হাওরের মাছ। কাউয়াদীঘি বা কুশিয়ারার মাছ ছাড়া অন্য কোথাও থেকে মাছ আসে না। এখানে একটাও চাষের মাছ নাই।”

সকালে ছয়টা থেকে শুরু হওয়া হাট আটটার মধ্যেই গুটিয়ে যায়। তবে শুক্রবারে ভিড় হয় বেশি। আশির দশকে মনু নদ সেচ প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পরই হাওরকে কেন্দ্র করে এই হাটের বিকাশ ঘটে। আগে মৎস্যজীবীরা দূরের হাটে মাছ বেচতে যেতেন, এখন প্রতিদিন সকালে এখানেই বিক্রি করে ফেলতে পারেন।

হাটের আড়তদার আকলু মিয়া বলেন, “হাটের দুই আড়তে প্রতিদিন লাখ টাকার মতো মাছ বিক্রি হয়। তবে সব মাছ আড়তে আসে না—অনেকেই আড়তের বাইরে সরাসরি বিক্রি করেন।”

হাওর–নদীর তাজা মাছের এই সকালের হাট শুধু বাণিজ্যই নয়, মানুষের জীবনযাত্রা আর শীতের সকালের এক অনন্য রঙিন অনুষঙ্গ।

● আমারবাঙলা/এফএইচ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

রসুন ক্ষেতে মুরগি যাওয়াকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ায় চাচাতো ভাইয়ের হাতে খুন

কুষ্টিয়ায় রসুন ক্ষেতে মুরগি ঢোকাকে কেন্দ্র করে পারিবারিক বিরোধের জেরে হাফিজুল...

নরসিংদীর মনোহরদীতে জুয়া খেলার অভিযোগে চারজন আটক 

জে,এম, শাহজাহান মোল্লা, মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি: মনোহরদী উপজেলার কাচিকাট...

কুষ্টিয়ায় ৮১ কিলোমিটার এলাকায় বিজিবির তৎপরতা

সাম্প্রতিক ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠে...

একই স্থানে সূর্যোদয়–সূর্যাস্ত দেখার অপার সৌন্দর্যের দ্বীপ রাঙ্গাবালী

পটুয়াখালীর সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী যেন লুকিয়ে থাকা এক টুকরো স...

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা আজও নির্ধারণ হয়নি: মিজানুর রহমান

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তিকে ধ্বংস করেছে উল্লেখ কর...

বান্দরবানে জেলা পরিষদের উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উদযাপন

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্...

ধোবাউড়ায় জামায়াতে ইসলামীর বিজয় দিবস উদযাপন

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার(১৬ ডিসেম্বর )বিকাল ২টায় ধোবাউড়া মোহাম্মদিয...

মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে সংবর্ধনা দিল কক্সবাজার জেলা প্রশাসন

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও...

মনোহরদীতে মহান বিজয় দিবস উদযাপন

১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় ও গৌরবময় দিন...

নিরাপত্তার শঙ্কায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন নারায়ণগঞ্জ প্রার্থী

নিরাপত্তাজনিত শঙ্কার কারণে আসন্ন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন নার...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা