চায়ের রাজ্য হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজার এবার গ্যাসসম্পদেও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করেছে। পেট্রোবাংলার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে মোট আনুমানিক ৩০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুতের মধ্যে মৌলভীবাজারের গ্যাসক্ষেত্রে রয়েছে প্রায় ২০ বিসিএফ—অর্থাৎ শতকোটি ঘনফুট গ্যাস।
পেট্রোবাংলার ২০২৪ সালের ১ জুলাই প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, দেশে সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা হয়েছিল ২০১০ সালে। তখন বিদেশি কোম্পানির করা হিসাব অনুযায়ী উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুত ছিল ২৮ দশমিক ৭৯ টিসিএফ। ২০২২–২৩ অর্থবছর পর্যন্ত উত্তোলন করা হয় ২০ দশমিক ৩৩ টিসিএফ, এতে অবশিষ্ট থাকে সাড়ে ৮ টিসিএফের মতো গ্যাস।
পেট্রোবাংলা ২০২৩ সালে নতুন করে সব গ্যাসক্ষেত্রের মজুত পর্যালোচনা করে। তাতে দেখা যায়, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে মোট মজুত দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ টিসিএফ। সে সময় পর্যন্ত উৎপাদিত গ্যাস ছিল প্রায় ২২ টিসিএফ। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে প্রায় ০.৭৫ টিসিএফ গ্যাস উৎপাদন করা হয়। এ হিসাবে মজুত গ্যাস দিয়ে আরও প্রায় ১১ বছর দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, খনির শেষ পর্যায়ে থাকা গ্যাস বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন করা সম্ভব হয় না। তাই কার্যত গ্যাস মজুত আরও কম পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই হিসাবে দেশের গ্যাস আরও সর্বোচ্চ আট বছর চলতে পারে।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ২৯টি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে ২০টি এখন উৎপাদনে রয়েছে। বাকি চারটি গ্যাসক্ষেত্র—ভোলার ইলিশা ও ভোলা নর্থ, সিলেটের জকিগঞ্জ এবং কুতুবদিয়া—আবিষ্কৃত হলেও অবকাঠামো না থাকায় উত্তোলন শুরু হয়নি। এ ছাড়া রূপগঞ্জ, ছাতক, কামতা, ফেনী ও সাংগু গ্যাসক্ষেত্রে ৬৬১ বিসিএফ গ্যাস অবশিষ্ট থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য না হওয়ায় উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের ১ জুলাইয়ের হিসাব বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাসে রয়েছে প্রায় ২ টিসিএফ গ্যাস। হবিগঞ্জের বিবিয়ানায় রয়েছে ১ দশমিক ৬৬ টিসিএফ। মৌলভীবাজারে অবশিষ্ট রয়েছে প্রায় ২০ বিসিএফ গ্যাস। জালালাবাদে ৭০০ বিসিএফের কম। সিলেটের কৈলাসটিলা, রশিদপুর, বাখরাবাদসহ অন্যান্য গ্যাসক্ষেত্রেও মাঝারি পরিমাণে মজুত রয়েছে।
দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদায় মৌলভীবাজারসহ পূর্বাঞ্চলের গ্যাসক্ষেত্রগুলো এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
● আমারবাঙলা/এফএইচ