নেপালের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি অভিযোগ করেছেন, ভারতবিরোধী অবস্থান নেওয়ার কারণেই তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) নিজের দলের মহাসচিব বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, সীমান্ত ইস্যুতে প্রশ্ন তোলা এবং ধর্মীয় বিষয়ে স্পর্শকাতর মন্তব্য করায় তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কেপি শর্মা ওলি বলেন, “আমি যদি লিপুলেখ নিয়ে প্রশ্ন না তুলতাম, অযোধ্যা ও ভগবান রামকে নিয়ে মন্তব্য না করতাম, তাহলে হয়তো এখনো প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতাম। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভারতের অযোধ্যাকে রামের জন্মস্থান হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণেই আমাকে ক্ষমতা হারাতে হয়েছে।” তিনি আরও দাবি করেন, রামের জন্মস্থান ভারতের অযোধ্যা নয়, বরং নেপালের বীরগঞ্জ।
সূত্র জানায়, পদত্যাগের পর ওলি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে গুঞ্জন উঠলেও তিনি বর্তমানে রাজধানী কাঠমান্ডুর শিবপুরি সেনা ব্যারাকে অবস্থান করছেন।
উল্লেখ্য, নেপাল ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে লিপুলেখ গিরিপথ ও কালাপানি অঞ্চল নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। ১৮১৬ সালের সুগৌলি চুক্তির পরও কালী নদীর উৎসস্থানকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ রয়ে গেছে। নেপালের দাবি, নদীর উৎপত্তি লিম্পিয়াধুরা থেকে, আর সে কারণেই লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরা তাদের ভূখণ্ডের অংশ।
২০২০ সালে ওলির নেতৃত্বাধীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই এলাকাগুলোকে নেপালের অবিচ্ছেদ্য অংশ ঘোষণা করে এবং ভারতকে ওই অঞ্চলে রাস্তা নির্মাণ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানায়। তবে ভারত জানায়, ১৯৫৪ সাল থেকে ওই পথ তারা চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য ব্যবহার করে আসছে।
একই বছর জুলাইয়ে ওলি আরও বিতর্ক সৃষ্টি করেন, যখন তিনি দাবি করেন, ভগবান রাম ভারতের নয়, নেপালের নাগরিক ছিলেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, ভারতের অযোধ্যা ভুয়া এবং প্রকৃত অযোধ্যা অবস্থিত নেপালের পূর্ব বীরগঞ্জে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “ভারতে জন্মানো রাম কীভাবে নেপালের জনকপুরের সীতাকে বিয়ে করলেন? প্রাচীনকালে তো দূরবর্তী বিয়ের প্রচলন ছিল না। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকলে এমন বিয়ে সম্ভব হলো কীভাবে?”
ওলির এসব মন্তব্য ভারতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ভারতীয় রাজনীতিক ও সংবাদমাধ্যমগুলো তার বক্তব্যকে ইতিহাস বিকৃতি ও রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে উল্লেখ করে।
ক্ষমতা হারানোর পরও ওলি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি। বরং তিনি আরও দৃঢ়ভাবে বলেছেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াই ছিল তার প্রধান ‘অপরাধ’। বিশ্লেষকদের মতে, তার সাম্প্রতিক অভিযোগ নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
আমারবাঙলা/এফএইচ