বাণিজ্য ডেস্ক: আজ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য শুরু হচ্ছে সিয়াম-সাধনার মাস মাহে রমজান। রোজাকে ঘিরে আদা-রসুনের দাম না বাড়লেও পেঁয়াজের বাজার অস্থির রয়েছে মাসখানেকের বেশি সময় ধরে।
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকা বাজার অস্থির হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, প্রত্যেকবারই রমজান মাস এলে সকল পণ্যের দাম বাড়াতে সক্রিয় হয় সিন্ডিকেট।
এদিকে নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়ে পেঁয়াজ আমদানির তোড়জোড় শুরু করলেও তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি। যার ফলে পেঁয়াজের বাজার সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তবে অন্যান্যবারের তুলনায় আদা-রসুনের দামে কিছুটা স্বস্তি রয়েছে বলে জানান সাধারণ ভোক্তারা।
রোববার বড় মগবাজারের পাইকারি বাজার থেকে আদা-রসুন-পেঁয়াজ কিনছিলেন অমিত হাসান নামে একজন ক্রেতা। আসন্ন রমজান উপলক্ষে মসলাজাতীয় এ পণ্যগুলো আগেভাগেই কিনতে বাজারে এসেছেন তিনি। আদা-রসুনে স্বস্তির কথা বললেও পেঁয়াজের দামে ক্ষুব্ধ তিনি।
তিনি বলেন, কোনোভাবেই সরকার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আবার আমদানিও করতে পারছে না। এর আগে কখনো এত দামে মুড়ি পেঁয়াজ কিনিনি। এজন্য এবার দুই কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। তবে আদা-রসুনের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী কিনতে পেরেছি।
নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সরকারের আরও কঠোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
এসময় আরেক ক্রেতা বলেন, বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ায় রমজান ও ঈদের সময় বাড়তি আয়োজন থাকে দেশের জনগণের। খবরে দেখি বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশে রমজান ও ঈদ উপলক্ষে পণ্যের দাম বাড়ে না। অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো রমজান ও ঈদ উপলক্ষে পণ্যের উপর উল্টো বিশাল ছাড় দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা।
তিনি আরও বলেন, দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে ঈদ ও রমজানের আগে বাজারের দৃশ্য পাল্টে যায়। যার প্রভাবে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস ওঠে। তবে এবার ব্যবসায়ীদের তুলনায় বেশি দায়ী সরকার। কোনো পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সরকার পেঁয়াজ আমদানিও করতে পারছে না, আবার দামও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। পেঁয়াজ আমদানিতে আমাদের সবসময়ই ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। অথচ অন্য আরও অনেক দেশ আছে, যাদের কাছ থেকে আমরা পেঁয়াজ আমদানি করতে পারি। নিত্যপণ্যের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
বাজারের আদা, রসুন ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মনির বলেন, বর্তমানে বাজারে ভারতের পেঁয়াজ নেই। আমরা দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। পাইকারি বাজার থেকে আমরা ৮০-৮৫ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনছি। আমাদের লাভ আগের মতোই আছে। কিন্তু ক্রেতাদের পেঁয়াজ কিনতে কষ্ট হচ্ছে। আগে আমার যেই ক্রেতা ৫ কেজি করে পেঁয়াজ নিতো এখন তারা সর্বোচ্চ দুই কেজি পর্যন্ত নেয়। অতিরিক্ত দামের কারণে ক্রেতারাও পেঁয়াজ কেনা কমিয়ে দিয়েছে।
আদা-রসুনের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে আদা ও রসুনের দাম কমই আছে। আমরা বর্তমানে দেশি রসুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করছি। চায়না রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এছাড়া, ভারত ও চায়নার আদা ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এর বাইরেও মিয়ানমারের আদা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করছি।
শ্যামবাজারের পেঁয়াজ-রসুন মালিক সমিতির প্রচার সম্পাদক মো. শহিদল ইসলাম বলেন, ‘এই মূহূর্তে পেঁয়াজের দাম কমার কথা। এই সময়ে পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা হওয়ার কথা। সরকারের মন্ত্রী গত দেড় মাস ধরে বলছে, ভারতের ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসবে। কিন্তু সেই পেঁয়াজ বাংলাদেশে ঢুকেছে এখন পর্যন্ত আমরা এমন কোনো খবর পাইনি। ভারতের পেঁয়াজ ঢুকলে বাজার সহনীয় পর্যায়ে চলে আসত। ভারতের পেঁয়াজ যে বাংলাদেশে ঢোকেনি, সেটি দেশের কৃষকরা জানতে পেরেছে। এজন্য কৃষকরা তাদের কৌশল অবলম্বন করেই দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ৩৬ লাখ টন। এর মধ্যে ১০ লাখ টন উৎপাদন হয় মুড়িকাটা পেঁয়াজ। আর ২৬ লাখ টন উৎপাদন হয় হালি পেঁয়াজ। কিন্তু মুড়িকাটা মৌসুমেই ৩ লাখ টন ঘাটতি হয়ে গেছে। আর হালি পেঁয়াজে আরও ৭ লাখ টন ঘাটতি হবে। সব মিলিয়ে এবার প্রায় ১০ লাখ টন পেঁয়াজ ঘাটতি রয়েছে। সরকারের আশ্বাস অনুযায়ী ভারত থেকে যদি এক লাখ টন পেঁয়াজও আসত তাহলে বাজারটা সহনীয় পর্যায়ে থাকত।
তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজের ঘাটতি সমস্যার সমাধান একমাত্র সরকারই করতে পারে। এই মূহূর্তে তুরস্ক, মিসর, পাকিস্তান ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল করতে পারে সরকার। এই চার দেশে পেঁয়াজের দাম কম আছে। এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ এনে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করলে বাজার সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। কিন্তু যদি সরকার আমদানি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু এখন পর্যন্ত ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজ আসেনি, সেহেতু এই রমজানে পেঁয়াজ আসবে বলে আমার মনে হয় না।
এ বিষয়ে কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির সহসভাপতি হাজী মো. মাজেদ বলেন, বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসার কারণেই দেশের বাজার অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। যদি ভারত থেকে পেঁয়াজ আসতো তাহলে বাজারে পেঁয়াজের দাম হতো সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ টাকা। তা ছাড়া, অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আনার ক্যাপাসিটি নেই আমাদের। কারণ, ভারত ছাড়া অন্য দেশে পেঁয়াজের দাম বেশি। এজন্য ওইসব দেশ থেকে কেউ পেঁয়াজ আনতে চায় না। তবে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ভারতের পেঁয়াজ দেশে ঢুকতে পারে।
তিনি বলেন, ‘বাজারে যখন পেঁয়াজের দাম বেশি থাকে তখন কৃষকরা ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করেন। তবে দাম কমে গেলে কৃষকরা পেঁয়াজ তোলেন না। এজন্য পেঁয়াজের দাম এতো বেশি। কারণ কৃষকদের তো নিয়ন্ত্রণের কোনো সুযোগ নেই। ক্ষেতের পেঁয়াজ পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই বেশি দামের আশায় কৃষকরা ছোট পেঁয়াজ তুলে ফেলছে। এর ফলে আগামী কোরবানি ঈদের সময় বা তার পরে দেশীয় পেঁয়াজের একটা সংকট সৃষ্টি হবে। তবে ভারত পেঁয়াজ ছাড়লেই দাম কমে যাবে।
রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে পেঁয়াজ, আদা, রসুনের কোনো সংকট হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘আদা-রসুনের দাম বাড়বে না। বর্তমানে দেশি রসুন ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চায়না রসুন ১৬০-১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এবং ভারতীয় বা চায়না আদা ১৪৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকা এবং বার্মা আদা ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত দেড় মাস ধরে আদা এই দামেই বিক্রি হচ্ছে। তবে ডলার সংকটের কারণেও আমদানি-রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ‘আমি এখানে মাত্র নতুন এসেছি। আপনি টিসিবির চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন।’
আইআইটির অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার বিষয়ে আলোচনা চলছে। আলোচনা শেষ হলে তারপর বলতে পারবো বলে জানান তিনি।’
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            