আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় সদ্য প্রাণ হারিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতা আকাশপথে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। বিশ্বনেতাদের এমন মৃত্যু দুর্ঘটনা হলেও জনগণের মধ্যে অধিকাংশ সময় এসব মৃত্যুকে ঘিরে নানা জল্পনা আর ষড়যন্ত্রতত্ত্বের খবর ছড়ায়। বিভিন্ন সময় আকাশপথে দুর্ঘটনায় নিহত এমন কিছু বিশ্বনেতা সম্পর্কে যা জানা যায়।
ইব্রাহিম রাইসি
২০২১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসেছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। মাত্র তিন বছরে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক মহলে। এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা কেড়ে নিল তার প্রাণ। গত রোববার রাইসি একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে আজারবাইজান সীমান্তবর্তী এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনটি হেলিকপ্টারের বহর নিয়ে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন। ফেরার পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। এতে হেলিকপ্টারে থাকা প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ানসহ সকল আরোহী নিহত হন। এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ঘন মেঘ, কুয়াশা ও জলীয় বাষ্পের কারণেই হয়তো এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
লেচ কাকজিনস্কি
২০১০ সালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত হন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট লেচ কাকজিনস্কি। রাশিয়ার স্মোলেনস্কের কাছে ওই দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ও সঙ্গে থাকা অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় পোলিশ কর্মকর্তারা নিহত হন।
ইব্রাহিম নাসির
২০০৮ সালে মালদ্বীপের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম নাসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন। মালদ্বীপের একটি জনবসতিহীন দ্বীপে ব্যক্তিগত সফরে যাওয়ার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
হাফিজ আল-আসাদ
২০০০ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল-আসাদ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত হন। দেশটির দামেস্কের কাছে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। এই দুর্ঘটনার কারণ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল আসাদের হার্ট অ্যাটাকের কারণে উড়োজাহাজ জরুরি অবতরণ করাতে চাইলে বিধ্বস্ত হয়। তবে অনেকে দাবি করেন, এটি ষড়যন্ত্র ছিল।
র্যামন ম্যাগসেসে
১৯৫৭ সালে ফিলিপাইনের সপ্তম প্রেসিডেন্ট র্যামন ম্যাগসেসে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত হন। দেশটির সেবু শহরের মাউন্ট মানুংগালে পার্বত্য এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। ম্যাগসেসে তাঁর শক্তিশালী কমিউনিস্ট বিরোধী নীতি এবং গণতন্ত্রের প্রতি চেতনার জন্য সুপরিচিত ছিলেন।
জুভেনাল হাব্যারিমানা ও সাইপ্রিয়েন এনটারিয়ামিরা
১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট এবং বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট সাইপ্রিয়েন এনটারিয়ামিরা উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত হন। তারা দুজনে একই উড়োজাহাজে ছিলেন। উড়োজাহাজাটি রুয়ান্ডার কিগালিতে অবতরণ করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই রুয়ান্ডা গণহত্যার সূত্রপাত বলে মনে করেন অনেকে।
সামোরা ম্যাচেল
১৯৮৬ সালে মোজাম্বিক-দক্ষিণ আফ্রিকা সীমান্তের কাছে একটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট নিহত হন। বিধ্বস্তের নেপথ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
লিওন এমবা
১৯৬৭ সালে গ্যাবনের প্রথম প্রেসিডেন্ট লিওন এমবা উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় মারা যান। গ্যাবন উপকূলে দুর্ঘটনার শিকার হয় উড়োজাহাজটি।
মুহাম্মদ জিয়াউল হক
১৯৮৮ সালে ১৭ আগস্ট এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ জিয়াউল হক। সে সময়ে বিমানটিতে ছিলেন ৩০ জন আরোহী। এর মাঝে ছিলেন পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্নল্ড রাফায়েল, পাকিস্তানে মার্কিন আর্মি মিশনের প্রধান, এবং পাকিস্তানের কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব নিহত হওয়ার কারণে গুজব রটে যে তা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল।
সঞ্জয় গান্ধী
ভারতের এককালের জাঁদরেল প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কনিষ্ঠ পুত্র সঞ্জয় গান্ধী নিজেও ছিলেন শক্তিশালী এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সে সময়ে ভারতের বেশকিছু নীতির পেছনে তার প্রভাব ছিল। ১৯৮০ সালের ২৩ জুন দিল্লীর সফদরজং এয়ারপোর্ট থেকে উড্ডয়ন করে তাকে বহনকারী একটি বিমান। এর কিছু সময় পরই তা বিধস্ত হয় এবং নিহত হন সঞ্জয়।
বিপিন রাওয়াত
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ভারতের সুলুরে এক মিলিটারি হেলিকপ্টারে ওঠেন দেশটির সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত, গন্তব্য ওয়েলিংটং টাউনের ডিফেন্স সার্ভিসেজ স্টাফ কলেজ। একই হেলিকপ্টারে ছিলেন জেনারেল রাওয়াতের স্ত্রী, আরও সাতজন সেনা কর্মকর্তা, এবং পাঁচজন ক্রু। উড্ডয়নের পর হঠাৎ বৈরি আবহাওয়া দেখা দেয়। তামিল নাড়ুর এক পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত হয় হেলিকপ্টারটি।
ডাগ হ্যামারশল্ড
জাতিসংঘ প্রধান এবং সুপরিচিত সুইডিশ কূটনীতিবিদ ডাগ হ্যামারশল্ড ১৯৬১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এক যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। ট্রান্সএয়ার সুইডেনের ওই বিমানটি ব্যবহার করছিল জাতিসংঘ, তা বিশ্বস্ত হয় জাম্বিয়ায়। এই দুর্ঘটনায় নিহত হন জাতিসংঘের তৎকালীন প্রধানসহ ১৬ জন। সে সময়ে কঙ্গোয় যুদ্ধ সংক্রান্ত আলোচনায় যোগ দিতে আফ্রিকা গিয়েছিলেন হ্যামারশল্ড। পরবর্তীতে এক অনুসন্ধানে জানা যায়, খুব কম উচ্চতায় ওড়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানটি। সূত্র: ফার্স্ট পোস্ট, পলিটিকো।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            