বিশ্বের প্রায় সব তারকা খেলোয়াড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয়। অনুসরণ করা যায়-এমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (সাবেক টুইটার) ও ইউটিউব ব্যবহারকারীর সংখ্যাই বেশি। এসব প্ল্যাটফর্মে অনুসারী সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ক্রীড়াবিদ যদি বেছে নেওয়া হয়, তাহলে কেমন হবে তালিকাটা?
১০
শচীন টেন্ডুলকার (ক্রিকেট)
মোট অনুসারী: ১৩ কোটি ১৫ লাখ
ভারতের ব্যাটিং জিনিয়াসের ‘পূজারি’ ছিলেন অনেকেই। সব কাজ ফেলে মানুষ তাঁর ব্যাটিং দেখতে টিভির সামনে বসে যেতেন-এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ আছেন। তাই প্রায় এক যুগ আগে পেশাদার ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে টেন্ডুলকারের খোঁজখবর ঠিক রাখার চেষ্টা করেন ভক্তরা। বর্তমানে তাঁর অনুসারী ১৩ কোটি ১৫ লাখ।
৯
করিম বেনজেমা (ফুটবল)
মোট অনুসারী: ১৪ কোটি ১৭ লাখ
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সম্ভাব্য সব শিরোপা জিতেছেন। ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম দলে রাখতে ২০১৮ সালে বিশ্বকাপও জিততেন। দলীয় সেই সাফল্যের অংশ হতে পারেননি। কিন্তু ২০২২ সালে ব্যালন ডি’অর ঠিকই উঠেছে করিম বেনজেমার হাতে।
ইউরোপীয় ফুটবলের পাট চুকিয়ে ২০২৩ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমান বেনজেমা। যোগ দেন আল ইত্তিহাদে। তবে তারকা এই ফরোয়ার্ডের অনুসারীর সংখ্যা কমেনি। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স ও ইউটিউব মিলিয়ে তাঁকে অনুসরণ করেন ১৪ কোটি ১৭ লাখ জন। তালিকায় তিনি আছেন ৯ নম্বরে।
৮
ডেভিড বেকহাম (ফুটবল)
মোট অনুসারী: ১৪ কোটি ৫২ লাখ
এমনিতেই তিনি ফিটফাট ও পরিপাটি মানুষ। চাইলে হয়তো হতে পারতেন হলিউড তারকাও। তবে ফুটবলও ডেভিড বেকহামকে কম দেয়নি। ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা। বিয়ে করেছেন নকশাকার, সংগীতশিল্পী এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ভিক্টোরিয়া বেকহামকে। তাঁরা এখনো বিশ্বের সেরা সেলিব্রিটি জুটিগুলোর একটি। এ কারণে যেখানেই যান, আলোটা তাঁদের ওপর পড়ে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলান, পিএসজিতে খেলা ডেভিড বেকহাম খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলে দিয়েছেন ২০১৩ সালে। তবু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অনুসারীর অভাব নেই। সংখ্যাটা ১৪ কোটি ৫২ লাখ, যা তাঁকে এ তালিকায় রেখেছে আটে।
কিছুদিন আগে নাইটহুড পাওয়ায় ‘স্যার’ উপাধি পেয়েছেন বেকহাম। লিওনেল মেসি, লুইজ সুয়ারেজ, সের্হিও বুসকেতস, জর্দি আলবার মতো তারকারা তাঁর মালিকানাধীন ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে খেলেন।
৭
রোনালদিনিও (ফুটবল)
মোট অনুসারী: ১৫ কোটি ৪৬ লাখ
২০০২ সালে ব্রাজিলের সর্বশেষ বিশ্বকাপ জয়ে বড় অবদান রাখেন। ২০০৫ সালে জেতেন ব্যালন ডি’অর। আর ২০০৬ সালে বার্সেলোনার ১৪ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে এনে দেন উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা। ক্যারিয়ারে হয়তো আরও অনেক কিছুই জিততে পারতেন রোনালদিনিও। কিন্তু বেপরোয়া জীবনযাপনের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
তবু রোনালদিনিওকে ক্রীড়া অনুরাগীরা মনে রেখেছেন মূলত তাঁর ফুটবলশৈলীর কারণেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্তমানে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ১৫ কোটি ৪৬ লাখ, যা অবসর নেওয়া খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
পেশাদার ক্যারিয়ারকে ২০১৫ সালে বিদায় বলে দেন রোনালদিনিও। তিনি যখন সেরা সময় পার করছিলেন, তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। তবে পরে রোনালদিনিও ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স ও ইউটিউবে অ্যাকাউন্ট খোলার পর ভক্তরা ঠিকই তাঁকে খুঁজে নিয়েছেন।
৬
কিলিয়ান এমবাপ্পে (ফুটবল)
মোট অনুসারী: ১৫ কোটি ৮৫ লাখ
তালিকার ছয়ে থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পের অনুসারীর সংখ্যা মোট ১৫ কোটি ৮৫ লাখ। গত বছর পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন এমবাপ্পে। রিয়ালে নাম লেখানোর ঘোষণা আসার পর থেকেই ফরাসি তারকার অনুসারী হু হু করে বাড়তে থাকে।
অ্যানালিটিকস ব্লগের তথ্যমতে, স্প্যানিশ ক্লাবটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার দিনই ইনস্টাগ্রামে এমবাপ্পের অনুসারী বেড়েছে ২৭ লাখ। পিএসজিতে ক্যারিয়ারের শেষ কয়েক মাসেও নানা কারণে তিনি আলোচিত ছিলেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গড় অনুসারী বেড়েছে ২৫ হাজার ৪০০ জন।
৫
লেব্রন জেমস (বাস্কেটবল)
মোট অনুসারী: ২৩ কোটি ৯০ লাখ
একমাত্র বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবে এ তালিকায় আছেন লেব্রন জেমস। যুক্তরাষ্ট্রের এই বাস্কেটবল কিংবদন্তির অবস্থান পাঁচে। তাঁকে অনুসরণ করেন ২৩ কোটি ৯০ লাখ মানুষ। ৪০ বছর বয়সী লেব্রন জেমস বর্তমানে এনবিএ বাস্কেটবলের দল লস অ্যাঞ্জেলেস লেকার্সে খেলছেন। এনবিএর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি স্কোর (৪২১৮৪) করা খেলোয়াড় তিনিই।
৪
নেইমার (ফুটবল)
মোট অনুসারী: ৩৮ কোটি ৬১ লাখ
চোট, নারী আসক্তি, উদ্দাম পার্টি ও বেপরোয়া জীবনযাপনের কারণে মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরের কর্মকাণ্ডেই নেইমার খবরের শিরোনাম হন বেশি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অনুসারীর দিক থেকে নেইমার আছেন চারে। ব্রাজিলের এই তারকা ফরোয়ার্ডকে অনুসরণ করেন ৩৮ কোটি ৬১ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।
বিশ্ব ফুটবলে এখনো নেইমারের প্রভাব কতটা, একটা উদাহরণ থেকে বোঝা যাবে। নেইমার আল হিলাল ছাড়ার পর ইনস্টাগ্রামে কমপক্ষে ৬ লাখ অনুসারী হারিয়েছে ক্লাবটি। আবার তিনি সান্তোসে যোগ দেওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্লাবটির অনুসারী বেড়েছে ৭১ লাখ।
৩
বিরাট কোহলি (ক্রিকেট)
মোট অনুসারী: ৩৯ কোটি ২৮ লাখ
রোনালদোর-মেসির পরেই আছেন বিরাট কোহলি। ক্রিকেটারদের মধ্যে কোহলির অনুসারীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের এই তারকা ব্যাটসম্যানকে অনুসরণ করেন ৩৯ কোটি ২৮ লাখ জন।
ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপনের পোস্ট থেকে কোহলির আয়ও কম নয়। ‘ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হাব’-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, একেকটা বিজ্ঞাপনের পোস্ট থেকে তিনি প্রায় ১৭ কোটি টাকা পান।
২
লিওনেল মেসি (ফুটবল)
মোট অনুসারী: ৬২ কোটি ৭৭ লাখ
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউব মিলিয়ে লিওনেল মেসির অনুসারী ৬২ কোটি ৭৭ লাখ, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রেকর্ড আটবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মহাতারকার স্বীকৃত এক্স অ্যাকাউন্ট নেই। তবে ‘টিম মেসি’ নামে একটি স্বীকৃত পেজ আছে। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ায় এই পেজ চালায় ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস। পেজটি অনুসরণ করেন ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার জন।
‘ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হাব’-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইনস্টাগ্রামে একেকটা বিজ্ঞাপনের পোস্ট থেকে মেসির অ্যাকাউন্টে যোগ হয় ৩১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
মেসি ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন সেই ২০০৬ সালে। তবে ভিডিও শেয়ারিংয়ের এই প্ল্যাটফর্মে তিনি নিয়মিত নন। সর্বশেষ ভিডিও আপলোড করেছেন এক বছর আগে। ১৯ বছরে মোট ২০৭টি ভিডিও আপলোড করেছেন মেসি। সেগুলো দেখা হয়েছে ৬ কোটি ৬০ লাখ বার।
১
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (ফুটবল)
মোট অনুসারী: ১০৪ কোটি ৭ লাখ
অনুমিতভাবে সবার ওপরে আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। স্বীকৃত ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলের মালিক (৯৩৮*) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়েছেন বিশ্ব রেকর্ড। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি অনুসারীর মাইলফলক স্পর্শ করেছেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি। বর্তমানে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ১০৪ কোটি ৭ লাখ।
তবে সর্বাধিক ব্যবহৃত তিন প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও এক্স মিলিয়ে রোনালদোর অনুসারী ৯৪ কোটি ৭৮ লাখ। এই সংখ্যার ধারেকাছেও কেউ নেই। ইউটিউব, কুয়াইশু এবং ওয়েইবোর মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও নিয়মিত ব্যবহার করেন রোনালদো। এই ছয় প্ল্যাটফর্ম মিলিয়েই তাঁর অনুসারী ১০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
৪০ পেরোনো রোনালদো ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন এক বছরও হয়নি। অথচ এত অল্প সময়েই ইউটিউবে তাঁর সাবস্ক্রাইবার ৭ কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০৭টি ভিডিও আপলোড করেছেন সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরের এই ফরোয়ার্ড। সেসব ভিডিও ৮৭ কোটি ৭৮ লাখ বারের বেশি দেখা হয়েছে।
অবাক করা ব্যাপার হলো, ইনস্টাগ্রামের নিজেদের পেজের অনুসারীসংখ্যা ৬৯ কোটি ৩২ লাখ। আর এই প্ল্যাটফর্মে রোনালদোর একারই অনুসারীসংখ্যা ৬৬ কোটি ১২ লাখ। ব্যবধান দেখে মনে হচ্ছে, ব্যক্তি রোনালদো কোনো এক সময় ইনস্টাগ্রামকেই পেছনে ফেলবেন!
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং–বিষয়ক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হাব’-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপনের প্রতিটি পোস্ট থেকে ৩৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা আয় করেন রোনালদো।
আমারবাঙলা/জিজি