ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার গ্রাহাম থর্প মৃত্যুর আগে তাঁর স্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন, তাঁকে যেন সুইজারল্যান্ডের একটি ক্লিনিকে মৃত্যুবরণে সহায়তা করেন। এই হৃদয়বিদারক তথ্য উঠে এসেছে তাঁর মৃত্যুর তদন্তে। ২০২৪ সালের আগস্টে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় থর্পের। তখন থেকেই তাঁর পরিবারের দাবি ছিল, এটি আত্মহত্যা।
বুধবার (২৩ জুলাই) সারের করোনোস আদালতে তদন্তের শুনানিতে বলা হয়, ২০২২ সালে ইংল্যান্ড দলের ব্যাটিং কোচের চাকরি হারানোর পর তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। সে বছর একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন থর্প।
থর্প ২০১৮ সাল থেকেই উদ্বেগ ও বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। তবে তাঁর স্ত্রী আমান্ডা থর্প জানান, তখনো তিনি স্বাভাবিকভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় একটি ভিডিও ফাঁসের ঘটনার পর পরিস্থিতি বদলে যায়।
ফাঁস হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, তাসমানিয়ার পুলিশ ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুট, জিমি অ্যান্ডারসন ও অস্ট্রেলিয়ার নাথান লায়ন, অ্যালেক্স ক্যারি এবং ট্রাভিস হেডের একটি ড্রিঙ্কিং সেশনে বাধা দেয়। ভিডিওটি থর্প নিজেই করেন এবং তাতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আইনজীবীদের জন্য ভিডিও করছি।’ ধারণা করা হয়, থর্প তখন ঘরের ভেতর সিগার খাচ্ছিলেন, যা তাসমানিয়ার আইনে নিষিদ্ধ এবং এর কারণেই পুলিশ সেখানে গিয়েছিল।
পরে এই ভিডিও অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেই সঙ্গে অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের ৪-০ ব্যবধানে পরাজয়ের পর তাঁর চাকরি চলে যায়। স্ত্রীর ভাষায়, চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া ছিল তাঁর জন্য একটা ‘বড় ধাক্কা’, এরপর থেকেই থর্পের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে শুরু করে।
চাকরি হারানোর পর থর্প আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এবং দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এরপর তাঁর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা আরও বাড়তে থাকে। তদন্তে থর্পের স্ত্রী বলেন, ‘মৃত্যুর আগে কয়েক সপ্তাহ সে আমাকে বারবার বলেছে, সে বাঁচতে চায় না। থর্প আমাকে অনুরোধ করেছিল আমি যেন তাকে মৃত্যুবরণে সহায়তা করি। সে বলেছিল, সে সুইজারল্যান্ডে যেতে চায়। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম।’
গত বছর ৪ আগস্ট সকালে থর্প বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান এবং আর ফেরেননি। স্ত্রী প্রথমে ভেবেছিলেন, তিনি কুকুর নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছেন। পরে খেয়াল করেন, কুকুরটি বাড়িতেই ছিল। এরপর তার শ্বশুর জিওফ থর্প ফোন করে জানান, ‘সে আর নেই।’
আমান্ডা আরো বলেন, ‘সে আসলে কখনোই তার প্রথম আত্মহত্যার চেষ্টার ধাক্কা থেকে পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেনি।’
থর্পের বাবা জিওফ থর্প এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ভিডিওর ঘটনাটি তার ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছিল।’
থর্পের চিকিৎসক ডা. জোয়ান মুনেলি জানান, ২০২২ সালের আত্মহত্যার চেষ্টা থর্পের মস্তিষ্কে বড় প্রভাব ফেলে। এর পর থেকে তিনি আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। ইংল্যান্ডের হয়ে থর্প টেস্ট খেলেছেন ১০০টি। আছে ১৬টি টেস্ট সেঞ্চুরি। এ ছাড়া তিনি ৮২টি ওয়ানডেও খেলেছেন।
আমারবাঙলা/জিজি