উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের তিন দিন পর এখনো ১৩ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। যাদের বেশিরভাগই শিশু।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে ৫৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি—৪৫ জনই ভর্তি আছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। সেখানে ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানানো হয়েছে। তাঁরা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
সশস্ত্র বাহিনীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি রয়েছেন ৯ জন, এর মধ্যে ৪ জন আইসিইউতে। কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং হিউম্যান এইড রিসার্চ ল্যাব অ্যান্ড হাসপাতালে একজন করে রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। হিউম্যান এইড হাসপাতালে থাকা রোগীও আইসিইউতে আছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গতকাল ১৩ জন রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। একই দিনে একজন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।

বার্ন ইনস্টিটিউট জানায়, আইসিইউতে থাকা রোগীদের বাইরে আরও ১৩ জনের অবস্থা "গুরুতর" এবং বাকি রোগীদের অবস্থাকে মাঝারি মাত্রার জটিলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এর আগে ইনস্টিটিউট কর্তৃক গঠিত এক আন্তঃবিভাগীয় বোর্ড রোগীদের অবস্থা অনুযায়ী তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে—জটিল, গুরুতর ও মধ্যম। ওই বৈঠকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের এক জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও অংশ নেন।
সংবাদমাধ্যমকে ব্রিফিংয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাসির উদ্দিন বলেন, সিঙ্গাপুরের বার্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার চং সি জ্যাক চিকিৎসা পর্যালোচনা ও চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নে সহায়তা করছেন।
রোগীদের বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনো সে ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”
একটি স্বাভাবিক দিন বদলে গেল ট্র্যাজেডিতে
সোমবার সকালে একটি সাধারণ স্কুল দিন মুহূর্তেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় রূপ নেয়, যখন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান মাঝআকাশে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। দুই তলার ওই ভবনের নিচতলায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস চলছিল। বিমানটি সরাসরি তৃতীয় শ্রেণির একটি শ্রেণিকক্ষে আঘাত করে।
মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি
গতকাল (বৃহস্পতিবার) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) নিহতের নতুন কোনো সংখ্যা প্রকাশ করেনি। তবে মঙ্গলবার সংস্থাটি নিহতের সংখ্যা ৩১ বলে জানায়। এরপর বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৯ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হলে সেই সংখ্যা বেড়ে ৩২ হয়।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ পর্যন্ত ২৯ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। সংখ্যাগত এই গরমিলের কারণ হিসেবে একাধিকবার কাউন্ট হওয়াকে দায়ী করে মন্ত্রণালয়। এখনো ছয়টি মরদেহ শনাক্ত হয়নি। এখন পর্যন্ত কেবল এক দম্পতি ডিএনএ নমুনা জমা দিয়েছেন। ঢাকার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন,
তালিকা তৈরিতে স্কুল কর্তৃপক্ষের কমিটি
নিহত, আহত এবং নিখোঁজদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির জন্য মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়,
“এই দুর্ঘটনায় আমাদের অনেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকেই আহত হয়েছেন, কেউ কেউ প্রাণ হারিয়েছেন। সঠিকভাবে কারা মারা গেছেন, কারা আহত বা নিখোঁজ, তাদের তালিকা তৈরি করতেই এ কমিটি কাজ করবে।”
কমিটির প্রধান করা হয়েছে অধ্যক্ষকে। অন্য সদস্যরা হলেন—উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন) মো. মাসুদ আলম, প্রধান শিক্ষক খাদিজা আজহার, কো-অর্ডিনেটর লুতফুন্নেসা লোপা, অভিভাবক প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মোল্লা এবং দুই শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।
এই কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এই কমিটি গঠনের আগে গত বুধবার শিক্ষার্থীরা এক বিক্ষোভে অংশ নিয়ে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশের দাবি জানিয়েছিল।
আমারবাঙলা /এফএইচ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            