জাতীয়
ফাইভ-জি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ

আটকে দিয়েছিলেন নাহিদ, তোড়জোড় করছেন ফয়েজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ফাইভ-জি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি প্রকল্পের কেনাকাটার প্রক্রিয়া আটকে দেন এবং দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের ব্যবস্থাও করেন।

তবে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান শেষ হওয়ার আগেই এখন সেই প্রকল্পে যন্ত্রপাতি কেনার তোড়জোড় করছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। যে কারণে তার বিরুদ্ধে দুদককে প্রভাবিত করার অভিযোগও উঠেছে।

বিটিসিএলের ওই প্রকল্পে দুদক গত ৯ জানুয়ারি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য দুদকের পরিচালক এস এম এম আকতার হামিদ ভূঁইয়াকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি কাজ করছে। অনুসন্ধান চলার মধ্যেই যাতে কেনাকাটা করা যায়, সে জন্য দুদকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছেন ফয়েজ আহমদ। তাঁকে চিঠিও দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এই প্রকল্পে কেনাকাটা করতে বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

বিটিসিএলের প্রকল্পটির নাম ‘৫-জি উপযোগীকরণে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’, যা ফাইভ-জি রেডিনেস প্রকল্প নামে পরিচিতি। বিটিসিএল সারা দেশে অপটিক্যাল ফাইবার (বিশেষ তার) ও যন্ত্রপাতি বসিয়ে তা ইন্টারনেট সেবাদাতাদের কাছে ভাড়া দেয়। নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে তারা সেই সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছিল।

বিটিসিএল ও দুদক সূত্র জানায়, প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে যন্ত্রপাতি কেনার ব্যয় ৪৬৩ কোটি টাকা। সেই সময় দরপত্রে অংশ নেওয়া তিনটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রস্তাব মাত্র চার দিনে মূল্যায়ন করে চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে টেকনোলজিসকে ৩২৬ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়। তখন অভিযোগ উঠেছিল যে দরদাতাদের কেউই দরপত্রের শর্ত পূরণ করতে পারেনি। তারপরও কারিগরি কমিটি সবাইকে যোগ্য ঘোষণা করে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সমীক্ষা অনুসারে অনুমোদিত ডিপিপি (প্রকল্প প্রস্তাব) ভঙ্গ করে প্রয়োজনের চেয়ে পাঁচ গুণ সক্ষমতার যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নিয়ে অর্থ অপচয় চেষ্টার অভিযোগও ওঠে। এ ছাড়া মূল্যায়নের গোপন তথ্য ফাঁস করে তৎকালীন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও তৎকালীন সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের ঘটনাও ঘটে। বিটিসিএলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান এসব কারণে প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী নতুন করে দরপত্রের সিদ্ধান্ত দেন। গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে প্রভাব বিস্তারের দায়ে দুই চীনা প্রতিষ্ঠানের দরপত্রও বাতিল করেন।

মোস্তাফা জব্বার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) পর্যালোচনা সভায় দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত মেনে নেন। এ নিয়েই মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে তখনকার টেলিযোগাযোগসচিবের বিরোধ তৈরি হয়। সচিব বিটিসিএলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে পর্ষদের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামানের ওপর চাপ দেন। ব্যর্থ হয়ে শেষমেশ তাঁকে অপসারণ করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দেন। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করে চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েকে কাজ দেন।

নথিপত্রে দেখা যায়, তৎকালীন যুগ্ম সচিব তৈয়বুর রহমান ই-মেইল করে প্রকল্প পরিচালক থেকে দরপত্রের সর্বশেষ পরিস্থিতির একটি চিঠি আনান। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে সেই চিঠি পরিচালনা পর্ষদে উত্থাপনের নির্দেশ আসে। পর্ষদের মাধ্যমে আসাদুজ্জামানের ওপর চাপ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে আবু হেনা মোরশেদ জামান ও তৈয়বুর মিলে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্মার্ট বাংলাদেশের অদম্য অভিযাত্রা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নামে একটি বই লিখে তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎসর্গ করেন।

২০২৪ সালের জুনে আবু হেনা মোরশেদ জামানকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হিসেবে পদায়ন করা হয়। বর্তমান সরকার তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে। তৈয়বুর বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের যুগ্ম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং পাশাপাশি ইডিজিই (এনহ্যান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমি) প্রকল্পের পরিচালক ও জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।

ফয়েজের তৎপরতা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন নাহিদ ইসলাম। নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে তিনি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। পরে ৫ মার্চ ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী করা হয়। দায়িত্ব নিয়ে তিনি ফাইভ-জি প্রকল্পের জন্য আওয়ামী লীগ আমলে কেনা সরঞ্জামাদি আমদানির উদ্যোগ নেন। দরপত্রের নিয়মানুযায়ী, কোনো কোম্পানি থেকে যন্ত্রপাতি আমদানির আগে কারখানায় গিয়ে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। চুক্তি অনুযায়ী চারজন প্রকৌশলীকে চীনে হুয়াওয়ের কারখানায় পাঠানোর কথা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব দায়িত্ব নেওয়ার ২০ দিনের মাথায় হুয়াওয়ে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কারখানা পরিদর্শনের জন্য চিঠি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিটিসিএল একটি বেসরকারি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দুদকের অনুসন্ধানাধীন প্রকল্পের বাকি কাজ এগিয়ে দিতে আইনগত মতামত নেয় (২৭ মার্চ, ২০২৫)। যদিও এ ধরনের আইনগত মতামত দেওয়ার জন্য বিটিসিএলের নিজস্ব আইনজীবী প্যানেল রয়েছে।

বিটিসিএলের একটি সূত্র জানায়, বেসরকারি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে অতীতে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানানো হয়নি। ফলে তাদের মতামত যন্ত্রপাতি কেনাকাটার পক্ষে আসে। কিন্তু পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যখন প্রকল্পের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি জানতে পারে, তখন তারা আইনগত মতামত সংশোধন করে। নতুন করে (৮ এপ্রিল, ২০২৫) তারা বলে যে, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তাধীন প্রকল্পের ক্ষেত্রে সেকশন ৬৪, পিপিএ ২০০৬ এবং পিপিআর (২০০৮) ১২৭ রুল প্রযোজ্য হবে।

সরকারি ক্রয় বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও সরকারের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) সাবেক মহাপরিচালক ফারুক হোসেন বলেন, পিপিএ ও পিপিআরের এসব ধারায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগের কথা বলা হয়েছে। আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের মতামতে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিটিসিএলকে সতর্ক করেছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তারা সাধারণত কেনাকাটার দিকে এগোন না।

দুদককে ফয়েজের চিঠি

ফয়েজ আহমদ অবশ্য থেমে থাকেননি। তিনি ১৩ এপ্রিল দুদকে গিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁকে একটি চিঠিও দেন। দুদক সূত্র বলছে, ফয়েজ আহমদ প্রকল্পের কেনাকাটা এগিয়ে নিতে দুদকের ইতিবাচক মতামতের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। যদিও দুদক জানিয়ে দেয় (১৮ জুন, ২০২৫), প্রাথমিক অনুসন্ধানে ক্রয় আইনের লঙ্ঘন পাওয়া গেছে। তাই কেনাকাটার কার্যক্রম এগিয়ে নিলে আইনের ব্যত্যয় হবে এবং অর্থ ব্যয় আইনসিদ্ধ হবে না বলে অনুমেয় হয়েছে।

দুদকের মতামত পাওয়ার চার দিনের (২২ জুন) মাথায় ফয়েজ আহমদ আবার সংস্থাটির চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন। এতে তিনি নানা যুক্তি তুলে ধরে বলেন, বিটিসিএলের প্রকল্পটির কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত মনোযোগ ও আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানতে ১৬ জুলাই ফয়েজ আহমদ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ই-মেইলে প্রশ্ন পাঠানো হয়। পরে ফয়েজ আহমদকে ফোন ও খুদেবার্তা পাঠানো হয়। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ফোনে বিষয়টি জানানো হয়। গত রোববার আইসিটি বিভাগে গেলে অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে জানানো হয়, ফয়েজ আহমদ অফিসে উপস্থিত নেই। তখন আইসিটি বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) মুহম্মদ জসীম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠাবেন বলে জানান। যদিও গতকাল শনিবার পর্যন্ত বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জসীম উদ্দিন গত সোমবার বলেন, বিষয়টি নিয়ে ৭ জুলাই ফয়েজ আহমদ সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সেটাই তাঁর বক্তব্য।

ওই দিন ফয়েজ আহমদ বলেছিলেন, বিটিসিএলের সক্ষমতা সম্প্রসারণ করা দরকার। না হলে প্রতিষ্ঠানটি বাজারে টিকে থাকতে পারবে না। তিনি আরো বলেছিলেন, তিনি দুদক চেয়ারম্যানের আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। এর বাইরে কোনো নির্দেশ দেননি।

ফয়েজ আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে আরো নানা কথা বলেন। অবশ্য সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। সেগুলোর উত্তর পাওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, দুদক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মধ্যে চিঠি-চালাচালি চলার মধ্যে (১৬ এপ্রিল, ২০২৫) বিটিসিএল হুয়াওয়ের কারখানা পরিদর্শনের জন্য আবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে চিঠি লেখে। সেই চিঠিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে চারজনের জায়গায় পাঁচজনকে কারখানা পরিদর্শনে পাঠানোর জন্য জিও জারির অনুরোধ করা হয়। নতুন দলে বিটিসিএলের প্রকৌশলী রাখা হয় দুজন, আর টেলিযোগাযোগ বিভাগের তিনজন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টেলিযোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তাদের খুশি রাখতে তাঁদের চীন সফরে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। যদিও তাঁদের চীন যাওয়া হয়নি। কারণ, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জিও (সরকারি আদেশ) জারির বিষয়টি আটকে দেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন মেম্বারস ইন বাংলাদেশ নামের অপরিচিত একটি সমিতির খরচে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব তাঁর একান্ত সচিবসহ ৬ মে থেকে ৪ দিন চীন সফর করেন। জিওতে বলা হয়, তিনি আইসিটি অবকাঠামো নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে যাবেন।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ মে হুয়াওয়ে বিটিসিএলকে দেওয়া একটি চিঠিতে জানায়, কারখানা পরিদর্শনের অনুমতি সরকারের সর্বোচ্চ মহল দেয়নি বলে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে জেনেছে। তাই তারা নিজেরাই যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে সনদ জমা দেবে। আবার ১৯ মে জানায়, যেহেতু কারখানা পরিদর্শন হচ্ছে না, তাই এ বাবদ বরাদ্দ অর্থ সমন্বয় করা হবে। হুয়াওয়ে পণ্য জাহাজীকরণের অনুমতির অনুরোধও জানায়।

নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, হুয়াওয়ে ১৫ মে তারিখের যে স্মারকের চিঠির কথা উল্লেখ করেছে, তা বিটিসিএল ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মধ্যে আদান-প্রদান করা। এ চিঠি কীভাবে হুয়াওয়ে পেল, তা জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ কার্যালয় থেকে লিখিত বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। তারা দাবি করেছে, তারা গত ১৫ মে প্রকল্প দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে (ফরোয়ার্ডিং) একটি চিঠি পায়। সেই চিঠির মাধ্যমেই তারা জানতে পারে যে কারখানা পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

বিটিসিএলের দাপ্তরিক চিঠি কীভাবে হুয়াওয়ের কাছে গেল, তা জানতে বিটিসিএলের কাছে লিখিত প্রশ্ন পাঠানো হয় ২১ জুলাই। গতকাল পর্যন্ত তার জবাব পাওয়া যায়নি।

এদিকে বিটিসিএল যন্ত্রপাতি জাহাজিকরণের অনুমতি চেয়ে হুয়াওয়ের চিঠির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মতামত চায়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ গত ২৫ মে বিটিসিএলকে দেওয়া এক চিঠিতে ফয়েজ আহমদের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যন্ত্রপাতি ফাইভ-জির উপযোগী কি না এবং ১২ বছর সেবা দেবে কি না, তা বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে যাচাই করা হবে। আবার হুয়াওয়ের দেওয়া প্রস্তাব মেনে নিয়ে চুক্তির জিসিসি ক্লজ ৩৮ দশমিক ৪ (কারখানা পরিদর্শন ছাড়া সরবরাহ-সংক্রান্ত) অনুযায়ী পণ্য জাহাজীকরণ করবে বলে জানান। নিয়ম হলো, কারখানায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা অসম্ভব হলেই কেবল বিটিসিএল ক্রেতা হিসেবে কারখানায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে সরঞ্জাম জাহাজীকরণের অনুমতিপত্র দেবে। কিন্তু তারা তা দেয়নি; বরং ফয়েজ আহমদের নির্দেশনা সমন্বিত ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের চিঠিটি সরাসরি হুয়াওয়েকে পাঠিয়ে দেন প্রকল্প পরিচালক (২৬ মে)।

এ সুযোগে হুয়াওয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে সরঞ্জাম পাঠিয়ে দেয়। বিষয়টি চিঠি পাঠিয়ে বিটিসিএলকে জানায় তারা (১৬ জুন। হুয়াওয়ের চিঠি অনুযায়ী, যন্ত্রপাতি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর সম্ভাব্য দিন ছিল ২২ জুন। অবশ্য সরঞ্জাম চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে কি না, নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, তাদের কাছে আমদানির কোনো নথি জমা পড়েনি। ফলে টাকা ছাড় করার কোনো প্রশ্ন এখনো আসেনি। দুদক এর আগে তাদের কাছ থেকে নথিপত্র সংগ্রহ করেছে। এমন অবস্থায় আমদানির নথিপত্র জমা পড়লে টাকা ছাড় করবে কি না, তা নিয়ে দোটানায় রয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

‘দুর্নীতি সহায়ক’

বিটিসিএল এখন যদি যন্ত্রপাতি গ্রহণ না করে, তাহলে আইনি জটিলতার মুখে পড়তে হতে পারে। অন্যদিকে গ্রহণ করলে তাতে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় ও দুর্নীতির আশঙ্কা রয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে প্রকল্পের কেনাকাটা দুদক অনুসন্ধান করছে, সেই কেনাকাটার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া দুর্নীতি সহায়ক। সরকার বলছে, সরঞ্জাম না কিনলে বড় লোকসান হবে। সে ক্ষেত্রে কি কোনো কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস (ব্যয়ের বিপরীতে সুফল পর্যালোচনা) হয়েছে? তিনি বলেন, উচিত ছিল সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে প্রকল্পটি পর্যালোচনা করা। সেটা না করে কেনাকাটার দিকে এগিয়ে যাওয়ায় সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক যে, এ ক্ষেত্রে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে।

আমারবাঙলা/জিজি

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে চাঁদাবাজি, নোমানসহ ২ নারী গ্রেফতার

উত্তরায় ‘সমন্বয়ক পরিচয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে নোমানসহ ২ নারীক...

জাকসুর ভিপি জিতু, জিএস মাজহারুল

অবশেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্...

নির্বাচনের আগেই সংবিধান সংস্কার 

সাংবিধানিক সংস্কার কার্যকরে আগামী ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের আগেই জুলাই জাত...

এখন ইয়ামাল মায়ের মুখে শুধু হাসিই দেখেন

সাক্ষাৎকারে ফুটবল ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনের কিছু দিকও সামনে এনেছে...

হিজাব পরায় মাঠে হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন খাজার মা!

ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির সবগুলো ম্যাচই ছিল উত্তেজনায় ঠ...

ডিজিটাল অর্থনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণে বাড়ছে প্রবৃদ্ধির গতি

গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি এক অবিশ্বাস্য রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে...

রাস্তা অবরোধ করার অধিকার কারো নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ফরিদপুরের সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাস্তা অবরোধের ঘট...

শহীদ রফিক হত্যা: নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাকিব গ্রেপ্তার

মানিকগঞ্জের শিবালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ রফিক হত্যা মামলার অন্যত...

কক্সবাজারে স্ত্রীকে ধর্ষণের পর তার সামনে স্বামীকে হত্যা, ঘাতক আটক

কক্সবাজার শহরের উত্তরণ আবাসিক এলাকায় এক চাকমা যুবককে জবাই করে হত্যার পর তার স...

সোনা চোরাচালানে জড়াচ্ছেন বিমানের ক্রুরা, ‘লঘু শাস্তিতে’ রেহাই

আকাশপথে সোনা চোরাচালান চক্রে জড়াচ্ছেন রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা