আগামীকাল শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত। এবার বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বে তিনটি আখেরি মোনাজাত হবে। প্রথম পর্বে জুবায়েরপন্থীরা অংশগ্রহণ করবেন দুই ভাগে। বিরতী দিয়ে দ্বিতীয় পর্বে অংশগ্রহণ করবেন সাদপন্থীরা। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) শুরায়ে নেজামের মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান এ তথ্য জানান।
এদিকে নিরাপত্তার স্বার্থেই সবার মতামত নিয়ে বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বের মধ্যে সময় বেশি রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহা পরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
তিনি জানান, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাত হাজার সদস্য থাকবেন। ময়দান এলাকায় র্যাবের হেলিকপ্টার টহল ছাড়াও বোম ডিসপোজাল ইউনিট এবং ডগ স্কোয়াড থাকবে। সাদা পোশাকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া ১৬টি ওয়াচ টাওয়ার থাকবে, সেখান থেকে বাইনোকুলার দিয়ে পুরো মাঠ দেখা যাবে। ১৫টি সাব কন্ট্রোল কক্ষ থাকবে, সাব কন্ট্রোল কক্ষে যে কোনো রিপোর্ট করলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুরায়ে নেজাম বা যুবায়েরপন্থীদের আয়োজনে ৩১ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এই পর্ব ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম দফা শেষ হবে। আবার ৩-৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শুরায়ে নেজামার প্রথম পর্ব শেষ হবে। ৬ ফেব্রুয়ারি প্রশাসন মাঠ বুঝে নিবে।
তারপর ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে সাদপন্থীদের ইজতেমা। ফলে এবারই প্রথম দুই পর্বে তিনটি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা।
হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, ৬৪ জেলার মুসল্লিরা আলাদাভাবে আসবেন। ফলে প্রথম পর্বে প্রথম ধাপে যে জেলার মুসল্লিরা আসবেন তারা একটি মোনাজাতের মাধ্যমে মাঠ ত্যাগ করবেন। বাকী জেলার মুসল্লিরা ৩-৫ ফেব্রুয়ারি আরেকটি আখেরি মোনাজাত করে ইজতেমা মাঠ ছাড়বেন।
সাদপন্থীদের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি আমরা ইজতেমা করব। তবে আগামী বছর ইজতেমা মাঠে ইজতেমা করব না বলে সরকার যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে তা সত্য নয়। আমরা আগামী বছর ইজতেমা করব না বলে সরকারকে জানাইনি। এই বিষয়ে একটি চিঠি সরকারকে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ১৬০ একর জমির উপর নির্মিত সুবিশাল প্যান্ডেলের কাজ, খুঁটিতে নম্বর প্লেট, খিত্তা নম্বর, জুড়নেওয়ালি জামাতের কামরা, তাশকিল কামরা, হালকা নম্বর বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদের পূর্বপাড়ে নামাজের মিম্বর ও উত্তর-পশ্চিম কোণে বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্ধারিত কামরার পাশে বয়ান মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ছামিয়ানা টানানো, বিদ্যুৎ ও মাইক সংযোগের জন্য তার টানানোসহ তাশকিল কামরা ও বধিরদের বয়ান শোনার জন্য পৃথক কামরা তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্ব ইজতেমায় ইতোমধ্যেয়ই দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি ময়দানে এসে তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন।
নিরাপত্তার স্বার্থেই দুই পর্বের মধ্যে সময় বাড়ানো হয়েছে: আইজিপি
নিরাপত্তার স্বার্থেই সবার মতামত নিয়ে বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বের মধ্যে সময় বেশি রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহা পরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
তিনি বলেছেন, প্রথম পর্বে অংশগ্রহণকারীরা মাঠ বুঝিয়ে দেওয়ার পর পুরো ইজতেমা এলাকা আমরা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেব। পরে যখন বুঝবো কোনো ধরনের বিপদ বা সমস্যার সম্ভাবনা নাই-তখন আমরা দ্বিতীয় পর্বের ওনাদেরকে ময়দানে আসার আমন্ত্রণ জানাব। এ জন্যেই এবার বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বের মাঝে বেশি স্পেস রেখেছি। সবার মতামত নিয়েই আমরা এ স্পেস বাড়িয়েছি।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি পরিদর্শনে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় ইজতেমা মাঠে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আইজিপি।
পরে দুপুরে ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের কাছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোল রুমের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ইজতেমা ঘিরে নেওয়া নিরাপত্তার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
আগের চেয়ে এবারের ব্যবস্থাপনা অনেক উন্নত, নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক বেশি সুদৃঢ় হবে বলে জানান আইজিপি।
তিনি জানান, পুরো মাঠ ৩৩৫টি সিসি ক্যামেরার আওতাধীন থাকবে, ৩৫টি রুফটফ থাকবে, স্থির ব্রিগেড থাকবে ৫৩টি, ২০টি মোবাইল পার্টি সার্বক্ষণিক ডিউটিতে থাকবে, ২০টি চেকপোস্ট থাকবে- তাদের কাজ হবে যেন দুষ্কৃতকারী ময়দানে প্রবেশ করতে না পারে।
নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি আরো বলেন, পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করে নিরাপত্তাকে সাজানো হয়েছে। র্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই, জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশন, সড়ক জনপথ, ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সমন্বয় সভা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি।
তুরাগ তীরের এ ময়দানকে ঘিরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি বলেন, ফুটপাত উচ্ছেদ করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে, ট্রাফিক ব্যবস্থা সুন্দর হওয়ার জন্য ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক এ সড়ক দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। মোনাজাতের দিন কোনো গাড়ি চলতে দেব না ইজতেমা এলাকায়, সেখানে গাড়ি চলাচল মুক্ত রাখবো, যেন মুসুল্লীদের কোনো সমস্যা না হয়।
এবারের ইজতেমায় কোনো অঘটন ঘটবে না আশা করে তিনি বলেন, মাওলানা মাহফুজও জানিয়েছেন তাদের ১০ হাজার ভলান্টিয়ার থাকবেন। তারা নেতৃত্ব দিবেন, তাদের ঈমানী দায়িত্ব। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করবো। রাষ্ট্রের বাহিনী হিসেবে আমাদের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব আছে। আমার বিশ্বাস যেকোনো ধরনের নাশকতা আপনাদের (সকলের) সহযোগিতায় আমরা মোকাবেলা করতে পারব।
তিনি আরো বলেন, মুসলমানরা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে দ্বীন এবং দুনিয়ার কামিয়াব হাসিলের জন্য ইজতেমায় আসেন। মতদ্বৈততা মানুষের মধ্যে থাকে। কিন্তু কিছুদিন আগে একটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষ অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত আইজিপি মো. আকরাম হোসেন, গাজীপুর মহানগরের পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান, অতিরিক্ত ডিআইজি জাহিদুল ইসলাম ভূইয়া, গাজীপুর মহানগরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জাহিদুল হাসান, তাহেরুল হক চৌহান, গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী জাবের সাদেক উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া তাবলীগ জামাতের মুরব্বি মাওলানা মাহফুজুল হক ও গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মনজুরুল করিম রনিসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            