উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) যুক্তরাজ্যের লন্ডন যাচ্ছেন। দেশটিতে পৌঁছানোর পর সরাসরি তাকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হবে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নেওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মঙ্গলবার রাত ১০টায় কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তিনি ঢাকা ছেড়ে যাবেন।
বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, চিকিৎসার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
রবিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশানের বাসায় দেখা করেন। এরপর মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, আল্লাহতালার অশেষ রহমতে জনগণের সবচেয়ে প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্যে ৭ জানুয়ারি রাতে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। পরম করুণাময় আল্লাহতালার কাছে এই দোয়া করেছি, আল্লাহ তাকে সুস্থ করে আবার যেন আমাদের মাঝে, দেশের মানুষের মাঝে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন এবং গণতন্ত্রের জন্য আমাদের যে সংগ্রাম চলছে, সেই সংগ্রামে তিনি যেন নেতৃত্ব দিয়ে সংগ্রামকে সফল করতে পারেন। বাংলাদেশের মানুষেরও সেই প্রত্যাশা।
তিনি বলেন, আমরা দোয়া করছি, তার (খালেদা জিয়ার) যাত্রা যেন সফল হয় এবং তিনি সুচিকিৎসা নিয়ে আবার ফিরে আসতে পারেন। কবে নাগাদ বেগম জিয়া ফিরবেন জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটি তো চিকিৎসকরা বলতে পারেন। আমরা তো বলতে পারি না। আমরা আশা করি, উনি চিকিৎসা শেষে খুব শিগগিরই দেশে ফিরে আসবেন।
বিদেশে যাওয়ার প্রাক্কালে খালেদা জিয়া কোনো নির্দেশনা কিংবা বার্তা দিয়েছেন কিনা- জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ম্যাডাম নির্দেশনা দিয়েছেন যে, একসঙ্গে কাজ করো, জনগণের পক্ষে কাজ করো, গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করো।
তার সঙ্গে আরো ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও এজেডএম জাহিদ হোসেন।
এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সস্ত্রীক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনিও তার চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেন।
৭৯ বছর বয়সী প্রবীণ এই রাজনীতিকের এবারের বিদেশযাত্রা উন্নত চিকিৎসার জন্য হলেও গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তন-পরবর্তী এ যাত্রা নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতূহল রয়েছে। সাত বছর পর লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেখা হবে। ছেলের বউ জোবাইদা রহমান ও নাতনি জাইমা রহমানও খালেদা জিয়ার অপেক্ষায় আছেন।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, চিকিৎসক, বিএনপি নেতারা, ব্যক্তিগত কর্মী ও দুজন গৃহকর্মী থাকবেন।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।
২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তার অসুস্থতা বাড়ে। এর মধ্যে কয়েকবার তিনি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পড়েন। একাধিকবার তার মৃত্যুর গুজবও ছড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লিভার প্রতিস্থাপনের পর পুরো চিকিৎসায় কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা শেষ হলে বিএনপির চেয়ারপারসন আবার লন্ডনে যাবেন। সেখান থেকে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করে তারপর দেশে ফিরতে পারেন।
খালেদা জিয়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবের ভিসা নিয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। ২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তৎকালীন সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি পান তিনি। মূলত সাময়িক কারামুক্তির পর থেকেই খালেদা জিয়া বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবার এবং দল থেকে একাধিকবার দাবি জানানো হচ্ছিল।
২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার শরীরে রক্তনালিতে সফল অস্ত্রোপচার হয়। পরে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই হাসপাতালেই লিভার প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেয়।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            