ছবি: সংগৃহীত
রাজনীতি

কিভাবে শেখ হাসিনা স্বৈরশাসক হলেন

উত্তম কুমার ঘোষ

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মাস্টার মাইন্ড মাহফুজ আলম এক সেমিনারে বলেছিলেন প্রতিটি মানুষের মাঝেই ফ্যাসিবাদী চরিত্র থাকে। এর থেকে উত্তোরনের কোনো উপায় তিনি সেখানে বলেননি। বর্তমানে শ্রম বা কাজ শরীরের চেয়ে বুদ্ধি বা মেশিন দিয়েই বেশি করা হয়। রিকশাও দেহ বা দেহজ সীমা ছাড়িয়ে মেশিন নির্ভর হয়ে পড়ছে। অতীতে শ্রম দেহ-কেন্দ্রিক থাকায় আইন কানুন থেকে শুরু করে সব কিছুই শরীরকে প্রাধান্য দিয়েই করা হতো। শারীরিকভাবে যে ফিটফাট বিয়ে বা চাকরি সব কিছুতেই তাকেই প্রাধান্য দেওয়া হতো। বেশ কয়েক বছর আগে চট্রগ্রামের মেয়ে সাবরিনা ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়ে সারা শরীর অবস থাকলেও হাতের আঙুল দিয়ে কম্পিউটারে জার্মান ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল ডয়সে ভেলেতে লিখে সারাবিশ্বে সাড়া ফেলেছিলেন। এমনকি জগদ্বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং জীবনভর হুইল চেয়ারে কাটিয়েই অত্যাশ্চর্জনক সব গানিতিক সমাধান করলেন।

সুতরাং শ্রম এখন শরীর নির্ভর না থেকে বুদ্ধি নির্ভর হয়ে পড়ছে। তাই আইন কানুন সবকিছুই কি আজ ঢেলে সাজানোর সময় আসেনি?

সমাজ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র রাষ্ট্র, পরিবর্তনের ধারায় আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা আরও বেশি কেন্দ্রীভূত হয়েছে। প্রায় সমগ্র মানব সমাজ এক দিকে থাকলেও দানবীয় কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রকাঠামো মানবীয় সমাজের বিরুদ্ধে দাড়ায় ( যেমন আমেরিকা-ইসরাইলের গাজা আক্রমণ, অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের পতিত সরকার )।

কিছুদিন আগে ৩৭% আমেরিকান ইহুদি তরুণ জনগোষ্ঠী ফিলিস্থিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে সমর্থন করে। অপরদিকে বর্তমান জাতীয়তাবাদী দর্শনও অনেক ক্ষেত্রে মানব সমাজের বিরুদ্ধেই দাড়াই। যেমন উন্নত দেশগুলো নিজেদের স্বার্থে কার্বণ নিঃসরণ করেই যাচ্ছে, যা মানব সমাজ বা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের জন্য ক্ষতিকর। কার্বণ নিঃসরণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা করার জন্য গঠিত তহবিলে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকাকে মহান করতে বা খরচ বাচাতে ( জাতীয়তাবাদ ) জলবায়ু তহবিলে টাকা দিবে না বলছে। পুতিন, শি জিন পিং নিজের দেশকে ( জাতীয়তাবাদ ) সামনে রেখে সংবিধান সংশোধন তথা আইন-কানুন পরিবর্তন করে জনগন চাক বা না চাক দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছেন এবং প্রতিবেশি দেশগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। ভারতের ফারাক্কা বাঁধ আমাদের গলার কাঁটা হয়ে আছে। ভারত নিজের দেশের নিরাপত্তার অজুহাতে প্রতিবেশি দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। তাই জাতীয়তাবাদ নিয়েও ভাবার সময় কি আসেনি?

এই কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রকাঠামোর বলে বলিয়ান হয়ে শেখ হাসিনা স্বৈরশাসক বা সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন। কেন্দ্রের বলে বলিয়ান হয়ে বিকেন্দ্র তথা জনগনকে, তরুণ যুব সমাজকে অগ্রাহ্য করে দেশের সমগ্র জনসমাজকে দুই ধারায় বিভক্ত করেছিল। যার প্রধানতম শিকার ছিলো ছাত্র, যুব ও তারুণ্য। ইতিহাস বলে মানুষ বেশিদিন এই ধরনের নিষ্পেষন মেনে নেয় না। তাই আপামর জনতার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতন তথা জুলাই বিপ্লব সফল হয়েছে। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছিলেন- একটা পিলার নির্মাণ করলে যদি শেখ হাসিনার কৃতিত্ব হয় তাহলে তার দলের সকল অপকর্মের দায়ও তাকে নিতে হবে। সেটাই হওয়া উচিৎ।

বিপ্লব পরবর্তীতে পূর্বের সংকট সমাধানের প্রসঙ্গ চলে আসে। বিপ্লব অর্থই আমূল পরিবর্তন। বিপ্লবী সরকারের দায়িত্ব থাকে সংকট চিহ্নিত ও তা নিজেই বাস্তবায়ন করা। অথচ সরকার নিজে না করে কমিশন গঠন করেছে সুপারিশ তুলে ধরার জন্য যা বিপ্লবী সরকারের সাথে যায় না। যাই হোক, কমিশনগুলোর সুপারিশকৃত সংকটগুলো বিপ্লবী সরকারই বাস্তবায়ন করুক। যাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সংস্কারকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করলে দেশ অনেকটা স্থিতিশীল ধারায় ফিরবে বলে আশা করা যায়।

তবে মূল সংকট সমাধানে অবশ্যই কেন্দ্রীভূত দানবীয় রাষ্ট্রকাঠামোর বিপরীতে মানবীয় বিকেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রকাঠামো প্রতিস্থাপন করতে হবে। অর্থাৎ ক্ষমতাকে কেন্দ্র বা কিছু মানুষ ছেড়ে বিকেন্দ্র বা ব্যাপক মানুষের মধ্যে নিয়ে যেতে হবে। দেশের সবচেয়ে ক্ষুদ্র প্রশাসনিক ইউনিট ওয়ার্ড, ক্রমান্বয়ে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা এভাবে কেন্দ্র এবং অবশ্যই ওয়ার্ডকে প্রাধান্য দিয়েই তা হতে হবে। কারণ সকল ওয়ার্ডের মানুষের মতামত নিলেই দেশের সকল মানুষের মতামত নেওয়া হয়ে যায়। কেননা দেশের সকল মানুষ কোনো না কোনো ওয়ার্ডেই বসবাস করেন। এভাবে জনগণ এখন আর শুধু সরকার গঠনই করবে না, মতামত দেওয়ার মাধ্যমে সরকার পরিচালনাও করবে।

আর তা পারে কেবল ছাত্র-যুব-তরুণরাই-- যেমন জাপানের ছাত্র-যুব-তরুণরা স্বদেশকে সামনে রেখে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এক আধুনিক জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি তথা জ্ঞানতত্ত্বে সমৃদ্ধ হয়ে নিজেদের স্বদেশে ফিরে গড়ে তোলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত জাপানকে- আজকের আধুনিক জাপানে।

আমার বাঙলা/ এসএ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নরসিংদীর মনোহরদীতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

আজ ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। উদয়ের পথে শুনি কার বাণী—

চট্টগ্রামে ছাত্রদল কর্মী হত্যায় আরেক ছাত্রদল কর্মী গ্রেপ্তার

মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাটে ছাত্রদলকর্মী তাহমিদ উল্যাহ (১৮) হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযো...

বান্দরবানে বুদ্ধিজীবী দিবসে জেলা পুলিশের শ্রদ্ধা

মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বান্দরবা...

নোয়াখালীতে মঞ্জু হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে একাধিক মামলার আসামি ফখরুল ইসলাম মঞ্জু ওরফে বলি (৩৭) হত্যা...

কক্সবাজার-১ আসনে প্রকাশ্যে ঝুলছে পোস্টার–ব্যানার, নীরব প্রশাসন

নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়—৪৮ ঘণ্টার...

বিজয় দিবসে জিয়াউর রহমানের প্রথম মাজারে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি'র শ্রদ্ধা

মহান ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রথম মাজা...

একই স্থানে সূর্যোদয়–সূর্যাস্ত দেখার অপার সৌন্দর্যের দ্বীপ রাঙ্গাবালী

পটুয়াখালীর সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী যেন লুকিয়ে থাকা এক টুকরো স...

ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে নগরবাসীর সচেতনতা জরুরি: চসিক মেয়র

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত রোগের বিস্তার রোধে নগরবাসীকে আরও সচেতন হওয়ার...

মানবিক সমাজ গঠনে প্রতিবন্ধীদের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে: মেয়র ডা. শাহাদাত

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অর্থবহ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত ক...

সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে এভারকেয়ার ছাড়লেন ওসমান হাদি

শরিফ ওসমান বিন হাদিকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা