সবে চার দিন হলো মুক্তি পেয়েছে ‘সাইয়ারা’। এর মধ্যেই মোহিত সুরির পরিচালিত এই ছবি রেকর্ড গড়ে ফেলেছে বক্স অফিসে। অভিনয়ে আছেন দুই নবাগত-আহান পান্ডে ও অনীত পাড্ডা। মুক্তির প্রথম উইকেন্ডেই ভারতে ছবিটির আয় ৮৫ কোটি রুপি-অভিষেক হওয়া অভিনেতাদের নিয়ে তৈরি কোনো ভারতীয় ছবির ক্ষেত্রে এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। সব ঠিক থাকলে ছবিটি অভিষেকভিত্তিক সিনেমার ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড গড়তে চলেছে। তবে সেটি শুধুই মোট আয় হিসেবে। বাস্তব চিত্র পেতে হলে হিসাব করতে হবে টিকিট বিক্রি আর মুদ্রাস্ফীতির সমন্বয়ে। সেই হিসাবে এখনো এক পুরোনো ছবি অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
নবাগত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে ভারতের সর্বোচ্চ আয় করা ছবি
১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া রাজ কাপুরের ‘ববি’। ঋষি কাপুর ও ডিম্পল কাপাডিয়ার এই অভিষেক তাঁদের রাতারাতি তারকা বানিয়েছিল। মাত্র ১ কোটি রুপি বাজেটে নির্মিত ছবিটি ওই বছর ভারতের সবচেয়ে আয় করা সিনেমা ছিল, যার দেশীয় আয় ছিল ১১ কোটি রুপি। তথ্যসূত্র অনুযায়ী, ভারতে শুধু ‘ববি’র টিকিট বিক্রি হয়েছিল ৫ কোটি ৩৫ লাখ রুপি। মুদ্রাস্ফীতির ভিত্তিতে এখন সেই আয় দাঁড়াত প্রায় ১ হাজার কোটি রুপিতে।
হৃতিক রোশন ও আমিশা প্যাটেলের অভিষেক ছবি ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’-এর দেশে টিকিট বিক্রি ছিল ৩ কোটির কিছু বেশি। মুদ্রাস্ফীতির হিসাবে যার আয় এখন দাঁড়াত প্রায় ৬০০ কোটি রুপি। আর ‘সাইয়ারা’, সব সাফল্য সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত ভারতে টিকিট বিক্রি করতে পেরেছে মাত্র ৫০ লাখ। যদিও ধারণা করা হচ্ছে, এটি ২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে সহজেই, তবে ৩ কোটির কাছে পৌঁছানো কঠিনই হবে। বর্তমান কোভিড-পরবর্তী সময়ে এ–ও এক বিশাল কৃতিত্ব।
বিশ্বজুড়ে ‘ববি’র অভাবনীয় সাফল্য
শুধু ভারতে নয়, সোভিয়েত ইউনিয়নেও ‘ববি’ ছিল দারুণ হিট। সেখানে ৬ কোটি ২৬ লাখের বেশি টিকিট বিক্রি হয় এবং আয় করে ১ কোটি ৫৬ লাখ রুবল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো-ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরেও ছবিটি দারুণ জনপ্রিয় হয়।
অবাক করা ব্যাপার, এসব দেশে দর্শকদের বড় একটি অংশ ভারতীয় নন, তবু তাঁরা সাবটাইটেল ছাড়াই ছবিটি দেখেছেন। বিদেশি বাজারে ‘ববি’র মুদ্রাস্ফীতিসম্পন্ন আয়ের পরিমাণ আনুমানিক ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি রুপির মধ্যে।
নতুন অভিনেতাদের নিয়ে তৈরি কোনো ভারতীয় সিনেমা এ পর্যন্ত বিদেশে এমন সাফল্যের মুখ দেখেনি।
প্যান ইন্ডিয়া ব্লকবাস্টারদেরও পেছনে ফেলেছে ‘ববি’
‘ববি’র ১১ কোটি রুপি দেশীয় আয় ১৯৭৩ সালে ছিল এক নজিরবিহীন ঘটনা। পরবর্তী দুই বছরে ‘শোলে’ এই রেকর্ড ভেঙে ১৫ কোটি রুপি আয় করেছিল। বিদেশে এই রেকর্ড ভেঙেছিল ১০ বছর পরের ‘ডিস্কো ড্যান্সার’। তবে মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয় করলে ‘ববি’র দেশি ও বিদেশি আয় মিলে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ কোটি রুপিতে, যা সাম্প্রতিক ‘আরআরআর’, ‘জওয়ান’ কিংবা ‘কাল্কি ২৮৯৮ এডি’র চেয়ে বেশি।
‘ববি’ নিয়ে আরো কিছু তথ্য
‘ববি’ ছবিটি তৈরি করেছিলেন রাজ কাপুর মূলত নিজের ছেলে ঋষি কাপুরকে চলচ্চিত্রে সুযোগ দিতে। এ ছাড়া আগের ছবি ‘মেরা নাম জোকার’–এর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেয়েছিলেন তিনি। অর্থের অভাবে তৎকালীন সুপারস্টার রাজেশ খান্নাকে না নিয়ে বাধ্য হয়ে পুত্র ঋষিকেই নেন প্রধান ভূমিকায়। আরকে ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত এই ছবিতে ২০ বছর বয়সী ঋষি এবং মাত্র ১৬ বছর বয়সী ডিম্পল অভিনয় করেছিলেন দুই তরুণ প্রেমিক-প্রেমিকার ভূমিকায়, যারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। অবাক করা ব্যাপার, মুক্তির সময় সমালোচকদের রিভিউ ছিল মাঝারি মানের, কিন্তু দর্শকেরা পছন্দ করায় তাত্ক্ষণিকভাবে সুপারহিট হয়ে যায়।
আমারবাঙলা/জিজি