জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহরের কাঁচাবাজারের কাছে ছোট্ট একটি হোটেল; নাম রফিক হোটেল। বাইরে থেকে দেখলে অন্য দশটা হোটেলের মতো মনে হবে।
রমজান মাসজুড়ে হোটেল মালিক রফিকুল ইসলাম রফিক প্রতিদিন প্রায় ৩০০ রোজাদারকে বিনামূল্যে সাহরি ও ইফতার করান।
গত ১০ বছর রোজাদারদের জন্য এ আয়োজন করছেন তিনি। এ জন্য বছরের বাকি সময়ে উপার্জনের একটি অংশ সঞ্চয় করে রাখেন রফিক। তার এই মহতী উদ্যোগ শুধু স্থানীয় মানুষদেরই নয়, দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ী, যাত্রী, রোগীর স্বজনসহ অসংখ্য মানুষের উপকারে আসে।
রমজানে শহরের অনেক খাবারের দোকান বন্ধ থাকায় সাহরি ও ইফতারের জন্য অনেকেই সমস্যায় পড়েন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ১১ মাস ব্যবসা করি, আল্লাহর রহমতে লাভও হয়। সেই লাভের কিছু অংশ আলাদা করে রেখে রমজানে বিপদগ্রস্ত ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য বিনামূল্যে সাহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করি। এটিই আমার জন্য সবচেয়ে বড় শান্তির কাজ।
২০১৬ সালে শুরু করা এই মহতী উদ্যোগে তার ১২ জন কর্মচারী রমজান মাসে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেন। তারা একত্র হয়ে মানুষের সেবা করেন।
জানা গেছে, সাহরিতে খাবারের তালিকায় থাকে গরুর মাংস, মাছ, সবজি, ডাল ও এক গ্লাস দুধ। ইফতারে পরিবেশন করা হয় বিরিয়ানি, ছোলা বুট, বুন্দিয়া, মুড়ি, পিঁয়াজু, বেগুনি ও শরবত। খাবার শেষে কেউ টাকা দিতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন।
হোটেলের পাশেই হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে এসেছিলেন জাহানারা বেগম। তিনি বলেন, ‘ভাতিজাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি, রাতে কোথায় সাহরি খাবো বুঝতে পারছিলাম না। এখানে এসে দেখি সবাই সাহরি খাচ্ছে, আর টাকা দিতে গিয়ে জানলাম এখানে কোনো বিল লাগে না! সত্যিই অনেক উপকার হলো।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারী আলাউদ্দিন বলেন, ‘রাতে আমার ডিউটি ছিল। বাসায় গিয়ে সেহরি খাওয়া কষ্টকর হতো। এখানে এসে মাংস, শিম ভাজি, ডাল আর এক গ্লাস দুধ দিয়ে সেহরি করলাম, আলহামদুলিল্লাহ! তার জন্য দোয়া করি।’
রফিকুল ইসলামের হোটেলের কর্মচারী বুদা মিয়া বলেন, ‘মালিক যেখানে এক মাস ধরে তিনশর বেশি মানুষকে ফ্রিতে খাওয়াচ্ছেন, সেখানে একটু শ্রম দিলে সমস্যা কী? ১১ মাস তো বেতন পাই। এক মাস শুধু খাবার দেন, তা ছাড়া ঈদে বেশি বোনাসও দেন। এই কাজ করতে পেরে ভালোই লাগে।’
আক্কেলপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোমেন বলেন, ‘রফিক একজন সামান্য হোটেল ব্যবসায়ী হলেও তার হৃদয় অনেক বড়। সমাজের অনেক বিত্তবান রয়েছেন কিন্তু তারা এমন উদ্যোগ নেন না। শুধু টাকা থাকলেই হয় না, মানবতার মনও থাকতে হয়। রফিক আসলে মানবতার ফেরিওয়ালা।’
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            