নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এখন পুরোটাই মশামুক্ত এলাকা। যেখানে বছর দুয়েক আগেও ছিলো মশার উৎপাত। তবে এখন সেখানে মশা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। মশা তাড়াতে বা মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে কয়েল, ব্যাট বা স্প্রে ব্যবহার করতে হয় না, মশারিও টানাতে হয় না।
ঢাকার পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব আবাসিক এলাকা বসুন্ধরা। চওড়া সড়ক, পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জায়গা থাকার পরও মশার উপদ্রব ছিল বেশ । ঘটনা অনুধাবন করে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিশেষ ব্যবস্থা নেয়। বসুন্ধরা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে খাল ও জলাশয় প্রবহমান রাখা এবং নিয়মিত পরিষ্কার করা, নর্দমাগুলো সচল রাখা ও নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে। খালি প্লটগুলোও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। সকালে মশার লার্ভা নিধন ও বিকেলে উড়ন্ত মশা নিধনের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে নিয়মিত। এতেই সুফল মিলেছে।
এ বছর এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সমানতালে আক্রান্ত হওয়ার ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২ অক্টোবরের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে সারা দেশে মারা গেছে ১ হাজার ১৩৫ জন। আক্রান্ত হয়েছে ৬ লাখ ২৮ হাজার ২৩১ জন। এ অবস্থার মধ্যেও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, বসুন্ধরায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
১৯৮৭ সালে গড়ে ওঠা এ আবাসিক এলাকায় প্রথমে চারটি ব্লক থাকলেও এখন ২০টিতে উন্নীত হয়েছে। এখানে প্রায় ৮ লাখ মানুষ বাস করছে।
এটা দৃশ্যমান যে, মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করলেও সফল হতে পারছে না। মশার লার্ভা মারতে তারা সকালে নর্দমা ও জলাশয়ে ওষুধ ছিটাচ্ছে। উড়ন্ত মশা মারতে বিকেলে ফগিং করছে। জলাশয় পরিষ্কারের নামে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করছে। কিছুদিন পরপর তারা ওষুধও পরিবর্তন করছে। নর্দমায় গাপ্পি মাছ, জলাশয়ে হাঁস, সড়ক ও ফুটপাতে কদম ফুলগাছ রোপণ, ড্রোন প্রযুক্তি দিয়ে মশার উৎসস্থল পরিদর্শন করেও কাজের কাজ হচ্ছে না। অথচ একই শহরে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বসুন্ধরা মশা নিয়ন্ত্রণে সফল হওয়ায় বিষয়টি এখন আলোচনায়।
১৫৯ বছর আগে ১৮৬৪ সালে ঢাকা পৌরসভা গঠিত হয়। সে সময় পৌরসভার মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ বা পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হতো। পৌরসভা গঠনের ১৩৬ বছর পর ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন গঠন করা হয়। ১৯৯০ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন হয়। নাগরিক সেবা সহজ করতে সরকার ২০১১ সালে করপোরেশনকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুই সিটিতে ভাগ করে। ঢাকার নগর সংস্থার ১৫৯ বছরে মশা নিয়ন্ত্রণের সফলতার গল্প তেমন নেই। শুধু গত শতকের চল্লিশের দশকে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাবীবুল্লাহ বাহার ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণ করে সাড়া ফেলেছিলেন। আর এখন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতার ঘটনা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন মশক-বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সব হাউজিং সোসাইটিকে বসুন্ধরার মতো মশা নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসতে হবে।
বসুন্ধরা আই-ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের ১৮৭ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা মিসেস রঞ্জনা কাশেম বলেন, ‘এক বছর আগেও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ থাকতাম। ব্যাট, কয়েল, স্প্রে ও মশারি ব্যবহার করেও নিস্তার মিলত না। গত তিন বছরে মশা নিয়ন্ত্রণে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে, যার সুফল এখন সবাই ভোগ করছে। এখন মশা নেই বললেই চলে।’
বসুন্ধরা ডি-ব্লকের ৭ নম্বর সড়কের ১২৯ নম্বর বাসার তত্ত্বাবধায়ক মো. আবদুল গনি বলেন, ‘প্রায় আট বছর ধরে এ বাসার দায়িত্ব পালন করছি। ২৪ ঘণ্টাই বাসায় থাকি। শুরুর দিকে অনেক মশা ছিল। কয়েল, স্প্রে, ব্যাট না থাকলে দল বেঁধে মশা হামলা দিত। প্রায় দুই বছর ধরে মশার উপদ্রব কমেছে। এ বছর মশা আছে বলে মনে হয় না।’
বসুন্ধরা ডি-ব্লকের বাসিন্দা গৃহবধূ সৈয়দা শাকিলা হায়দার বলেন, ‘দেড় বছর আগেও প্রচুর মশা ছিল বসুন্ধরায়। এখন নেই বললেই চলে। এখন স্বস্তিতে আছি।’
বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস এন্ড মিডিয়া উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, ‘প্রায় তিন বছর ধরে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকার অনুমোদিত ও পরিবেশবান্ধব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। মশার প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়াতে মিলেছে সাফল্য। সকালে লার্ভা ও বিকেলে উড়ন্ত মশা মারতে ওষুধ ছিটানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরায় মশার অন্যতম কারণ ছিল, এ প্রকল্পের ভেতরের খালগুলো প্রবহমান ছিল না। পর্যায়ক্রমে সেগুলোকে প্রবহমান করা হয়েছে। প্রবহমান খালে মশা ডিম পাড়ে না। খালি প্লটগুলোতে জঙ্গল ও জলাবদ্ধ পরিবেশ ছিল; প্লট মালিকদের চিঠি দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। যারা করেনি বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ সেগুলো পরিষ্কার করেছে। মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন। নিজে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন। এখন আমরা বাসায় মশারি ছাড়াই ঘুমাই।’
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে এটা ভালো সংবাদ। তাদের মতো অন্য হাউজিং সোসাইটিগুলোও উদ্যোগী হতে পারে। বসুন্ধরা কার্যক্রম অব্যাহত রাখুক। আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে কিউলেক্স মশার মৌসুম। তখনো বিশেষ তৎপর থাকতে হবে।’
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            