এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: বিশ্ব ঐতিহ্য পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে বর্তমানে ভালো নেই ম্যানগ্রোভ সুন্দবনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবী চিত্রল হরিণ, জাতিসংঘের ঘোষিত রামসার এলাকার জলভাগের মৎস্য সম্পদ।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। শুধু বন্যপ্রাণী ও মৎস্য সম্পদই নয়, নাশকতার আগুনেও পুড়ছে সুন্দরবন।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ‘স্মার্ট প্রেট্রোলিং’ আর জেলে-বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ঠেকানো যাচ্ছে না বাঘ, হরিণ হত্যা। বন্ধ হচ্ছে না খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার। আগুন দস্যুদের নাশকতার আগুনের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না সুন্দরবনকে।

এই অবস্থার মধ্যে অক্সিজেনের অফুরান্ত ভান্ডার দেশের ফুসফুস খ্যাত ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবন এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। চোরাশিকারি, বন্যপ্রাণী পাচারকারী, বিষ ও আগুন দস্যুদের এই তাণ্ডব থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সুন্দরবনের ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইডও।
সুন্দরবন বিভাগের দেয়া তথ্যে এ চিত্র ফুটে উঠেছে। সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনে আয়তন ছিল বর্তমানের দ্বিগুন। কমতে কমতে বর্তমানে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন এখন দাড়িয়েছে ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার, যা দেশের সংরক্ষিত বনভূমির সর্বমোট ৫১ ভাগ।
২৪ ঘন্টায় ২ বার সমুদ্রের জোয়ারের লবণাক্ত পানিতে প্লাবিত হয় সুন্দরবন। একই সাথে দিন বারত ২৪ ঘন্টা ৬ বার তার রূপ পাল্টানো সুন্দরবনের মোট আয়তনের ৬৮ .৮৫ ভাগ অর্থাৎ ৪২৪২.৬ বর্গ কিলোমিটার হচ্ছে স্থল ভাগ।
সংরক্ষিত এই বনের ৩ টি এলাকাকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ৭৯৮ তম ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড ঘোষণা করে, বর্তমানে যা সমগ্র সুন্দরবনের ৫২ ভাগ এলাকা।
সুন্দরী, গেওয়া, গরান, পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এছাড়া ৩৭৫ প্রজাতির বন্য প্রাণীর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হরিণসহ ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, লোনা পানির কুমির, গুইসাপ, কচ্ছপ, ডলফিন, অজগর, কিংকোবরাসহ ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৩১৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে।

সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইডের পাশাপাশি বিশ্বের বৃহৎ জলাভূমিও। সুন্দরবনের জলভাগের পরিমান ১৮৭৪.১ বর্গ কিলোমিটার, যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১.১৫ ভাগ। ১৯৯২ সালে সমগ্র সুন্দরবনের এই জলভাগকে রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।
এছাড়া সুন্দরবনের সমুদ্র এলাকার পরিমান ১৬০৩.২ বর্গ কিলোমিটার। এই জল ভাগে ছোট বড় ৪৫০ টি ছোট-বড় নদী ও খালে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মলাস্কা ও ১ প্রজাতির লবস্টার।
ইতিমধ্যেই সুন্দরবন থেকে হারিয়ে গেছে ১ প্রজাতির বন্য মহিষ, ২ প্রজাতির হরিণ, ২ প্রজাতির গন্ডার, ১ প্রজাতির মিঠা পানির কুমির। জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
এছাড়া চোরাকারবারিদের বাঘ শিকার, লোকালয়ে আসা বাঘকে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনাও ঘটছে মাঝে মধ্যেই। চোরাশিকারিরা নানা রকম অখাদ্য কুখাদ্য ও নেশাদ্রব্য খাইয়ে বাঘকে ক্রমেই দুর্বল করে ফেলে।
এমনকি দূর থেকে বাঘের দেহে বিষাক্ত ইনজেকশন ছুড়ে মারার মতো নৃশংস কাজও করছে তারা। সুকৌশলে হত্যার পর বাঘের চামড়া, মাংস, হাড়, দাঁত ও চর্বি উচ্চমূল্যে বিক্রি করে অবৈধ অর্থ উপার্জনের উন্মত্ত নেশায় মেতে ওঠে চোরাশিকারিরা।
সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ নদী ও খালে রয়েছে ১২০ প্রজাতির মাছ। জাহাজের প্রপেলারের আঘাতে ডলফিনের মৃত্যু ঘটছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া রাতে চলাচলের সময় টর্চ লাইটের তীব্র আলো ও শব্দ হরিণ এবং নিশাচর প্রাণীসহ সুন্দরবনের পশু-পাখির জীবনচক্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

জাতিসংঘের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘের ১৮০০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানব কর্মকাণ্ডের কারণে প্রাণী ও উদ্ভিদের ৮০ লাখ প্রজাতির মধ্যে ১০ লাখ বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। এর মধ্যে অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে কয়েক দশকের মধ্যেই।
গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ৫০ টি দেশের ১৪৫ জন বিজ্ঞানী। তাতে ব্যবহার করা হয়েছে গত এক দশকের প্রায় দেড় হাজার গবেষণাপত্র (রেফারেন্স ম্যাটারিয়াল)। এগুলোর মধ্যে সুন্দরবন নিয়েও কয়েকটি গবেষণাপত্র ছিল। সেগুলো সমন্বয় করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিয়ে একটি ভবিষ্যদ্বাণী দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বিজ্ঞানীরা।
যেসব গবেষণার ভিত্তিতে জাতিসংঘ এ আশঙ্কার কথা বলছে, সেগুলোর মধ্যে একটি বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার যৌথভাবে করা। সেখানে বলা হয়েছে, চার হাজার বর্গমাইলের সুন্দরবনের ৭০ শতাংশ অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক ফুট ওপরে রয়েছে। ২০৭০ সালের মধ্যে সেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বাসযোগ্য কোনো অঞ্চল থাকবে না।
২০১০ সালে করা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ডের জরিপের ভিত্তিতে জাতিসংঘ বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১১ ইঞ্চি বাড়লে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে সুন্দরবনের ৯৬ শতাংশ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শতাব্দীর শুরুতে পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা ছিল এক লাখের মতো। কিন্তু আবাসভূমি হারানো, পাচার ও শিকারের কারণে এদের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে চার হাজারে। সুন্দরবনে যে কয়েকটি বাঘ আছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সেগুলোর টিকে থাকা হুমকির মুখে পড়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের উদ্ভিদকুলে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এটিও রয়েল বেঙ্গল টাইগার কমে যাওয়ার একটি কারণ।
ম্যানগ্রোভ ইকোলজিস্ট খুলনা বিশ্ব বিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, বাঘ তো সারা পৃথিবীতেই ঝুঁকির মধ্যে আছে। আর রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অবস্থা আরও সংকুচিত হয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া এরা আর কোথাও নেই। সুন্দরবনের বাঘ বিশ্বের বিস্ময়। এদের আচার-আচরণ, অভ্যাস ও জীবনচক্র শুধু মাত্র আমরা জানি।

সুতরাং এটা যেন বিলুপ্ত না হয়, সেজন্য আমাদের দক্ষ ম্যানেজমেন্ট দরকার। আর এ ম্যানেজমেন্ট করতে গেলে পর্যায় ক্রমিক বাঘ শুমারি এবং আমাদের বাঘের জিনোম আবিষ্কার জরুরি। তবুও নানামুখী উদ্যোগের ফলে আমাদের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে বলে আশাবাদী সুন্দরবন বিভাগ।
সুন্দরবনে চলমান বাঘ গণনা শেষে আগামী বছর বাঘ দিবসে ফল প্রকাশিত হলে প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে বলে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে জানিয়েছেন।
তার ভাষায়, ‘সম্প্রতি সুন্দরবনে বার বার বাঘ দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, বনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। তবে গণনা সম্পন্ন হলে সঠিক সংখ্যা বলা যাবে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে বাঘের গুরুত্ব সব থেকে বেশি। বাঘের সুরক্ষা ও বংশবৃদ্ধির জন্য ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০০৯-২০১৭), ২০১০ সালের বিশ্ব বাঘ সম্মেলনের অঙ্গীকার, দ্বিতীয় টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০১৬-২০২৭) ও গ্লোবাল টাইগার ফোরামের সিদ্ধান্তের আলোকে দেশে বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ এবং সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ ও এর সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়।
২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ প্রকল্পে দুটি অংশ রয়েছে- একটি হলো বাঘ গণনা ও অন্যটি বাঘ সংরক্ষণ।
মাটি থেকে ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে গাছের সঙ্গে ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিটি পয়েন্টে দুটি করে ক্যামেরা থাকবে ৪০ দিন। ১৫ দিন পরপর ক্যামেরার ব্যাটারি ও মেমোরি কার্ড পরিবর্তন করা হবে। ক্যামেরার সামনে দিয়ে কোনো বাঘ, হরিণ, শূকর বা অন্য কোনো প্রাণী গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ছবি ১০ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ হবে।
সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক আবু নাসের মো. মোহসিন হোসেন বলেন, ‘বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাঘ সংরক্ষণ, বাঘের সংখ্যা ও বর্তমান অবস্থা জানার জন্য শুমারি হচ্ছে। সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জের ৬৬৫ টি পয়েন্টে দুটি করে ক্যামেরা বসানো হবে। এই ক্যামেরা বসানোর কাজ পর্যায় ক্রমে চলমান থাকবে।’
এ প্রকল্পের বাঘ সংরক্ষণ অংশে বাঘের বংশবৃদ্ধির জন্য পুরুষ ও নারী বাঘকে কাছাকাছি রাখতে বাঘ হস্তান্তর, তাদের বিচরণ এলাকা জানার জন্য দুটি বাঘের স্যাটেলাইট সংযুক্তি ও মনিটরিং করা, বাঘের পরজীবীর সংক্রমণ ও অন্যান্য ব্যাধি এবং মাত্রা নির্ণয় উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন তৈরির উল্লেখ রয়েছে।
প্রাণী ও পরিবেশবাদীদের মতে, বাঘ সারা বিশ্বে একটি বিপন্ন প্রাণী। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের ১৩ টি দেশে ৩৮৪০ টি বাঘ প্রকৃতিতে রয়েছে। তার মধ্যে সর্বশেষ ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে সুন্দরবনের বাঘ আছে ১১৪ টি। ২০১৫ সালের জরিপে ১০৬ টি ও ২০০৪ সালের জরিপে ৪০৪ টি বাঘের উপস্থিতি উল্লেখ করা হয়।

সুন্দরবনে ২২ প্রজাতির উভচর, ১৪৩ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১১৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ীর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রাণী হচ্ছে রাজকীয় রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও মায়াবী চিত্রল হরিণ। চোরাশিকারি দমনসহ সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা খুবই জরুরি। বনেরই কো-সিস্টেমে কোনো একটা অংশে ব্যাঘাত হলে তার প্রভাব বাঘের ওপর পড়ে।
বাঘের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়। সর্বোপরি সুন্দরবন টিকিয়ে রাখতে হলে বাঘ টিকিয়ে রাখা অবশ্যক। বাঘই সুন্দরবনের বিশ্বস্ত পাহারাদার, সুন্দরবনের ‘রাজা’।
তাই বাঘের প্রকৃত সংখ্যা জানা গেলে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটি রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে বলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন।
বন সংলগ্ন মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি, বন অপরাধ দমন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাস করে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বর্তমান সরকারের গৃহীত বহুমুখী কার্যকর উদ্যোগের কথা তিনি উল্লেখ করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাঘ ও হরিণসহ বণ্যপ্রাণীর ঝুঁকি ও চোরাশিকারিদের অপ-তৎপরতার কথা স্বীকার করে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, সুন্দরবনে বাঘ ও হরিণসহ বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুরক্ষায় তিন বছর মেয়াদি সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বাঘ গণনার জন্য বনের ৪ টি রেঞ্জে ৬৬৫ টি স্পটে ২ টি করে ক্যামেরা বসানো হচ্ছে।
পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার সুন্দরবনের কালাবগি এলাকায় ‘ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে’ বাঘ গণনার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর হলদিবুনিয়া এলাকা থেকে ক্যামেরা স্থাপন শুরু হয়। এর মধ্যে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগে ৩৪০ এবং পূর্ব বিভাগে ৩২৫ টি স্পট রয়েছে। ইতোমধ্যে ২৫৯ টি স্পটে ক্যামেরা স্থাপন ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। নভেম্বর থেকে ফের গণনা শুরু হবে।
তার ভাষায়, চোরা শিকারের হুমকি সব সময় কম-বেশি থাকে। তবে এখন তা গত কয়েকবছরে অনেকাংশে কমেছে। টহল বা পাহারা জোরদার করা হয়েছে। এজন্য মানুষ-বাঘ দ্বন্দ্ব নিরসনে ৪৯ টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের ৩৪০ জন সদস্য ও চারটি রেঞ্জে কমিউনিটি প্যাট্রোল গ্রুপের ১৮৫ জন সদস্য এবং ভিলেজ কনজারভেশন ফোরাম গঠন করে সমন্বিতভাবে কাজ চলছে।
তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, পোশাক সরবরাহ ও প্রতিমাসে বনকর্মীদের সঙ্গে মাসিক সভা করা হচ্ছে। তাছাড়া, লোকালয়ে বাঘ প্রবেশ করে কোনো ব্যক্তির বা কোনো গবাদি পশুর বা ফসলের ক্ষতি করলে এখন ৩ গুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাঘ, হরিণ, শুকরসহ বন্যপ্রাণীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে ইতোমধ্যে সুন্দরবনে ৮০ টি পুকুর পুনর্খনন এবং ৪টি নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে। অতিজোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসের সময় লবণ পানি যাতে পুকুরে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য পুকুরের পাড় উঁচু করে বাঁধানো হয়েছে।’
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ বছরে ৫৩ রয়েল বেঙ্গল টাইগার নানা কারণে মারা গেছে। যার অর্ধেকের বেশি মরেছে মানুষের হাতে। নতুন এলাকা ও খাবারের সন্ধানে বন থেকে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় স্থানীয়দের পিটুনিতেও মারা পড়েছে বাঘ।
তবে বাঘ হত্যায় চোরা শিকার ও বনদস্যুদের দায় বেশি। চোরা কারবারিদের চাহিদা অনুযায়ী বনের গভীরে বাঘ হত্যা করে তারা। সুন্দরবনের ‘রাজা’ বলে খ্যাত ভয়ংকর সুন্দর রয়েল বেঙ্গল টাইগার শিকার সবচেয়ে কঠিন।
অসম্ভব হিংস্র, ক্ষিপ্র্র ও ধূর্ত এই প্রাণী বনের সবচেয়ে বিপদজনক শিকার। রয়েল বেঙ্গল শনাক্ত ও অনুসরণ, সঠিক জায়গা নির্বাচন এবং মৃত্যু নিশ্চিত না হলে শিকারি নিহত হয়।
গত ৩১ মার্চ পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্যে খালের পাড়ে গাছের ডালে বিশ্ব খ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা পান একদল পর্যটক। ১০ জনের এ পর্যটক দলের অনেকে ক্যামেরায় সে দৃশ্য ধারণ করেন বলে পর্যটক ও পরিবেশ প্রেমী বিশেষজ্ঞ ফরিদী নুমান জানান।
গত ১২ মার্চ সুন্দরবনের ছিটা কটকা খালপাড়ে একসঙ্গে চারটি বাঘ দেখেছিলেন অপর একদল পর্যটক। সুন্দরবনে অভূতপূর্ব এ দৃশ্য দেখে উচ্ছ্বসিত তারা ভিডিও করেন।
এর আগে গত রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) একসঙ্গে ৩ টি বাঘ অভূতপূর্ব এ দৃশ্য দেখে উচ্ছ্বসিত তারা, ভিডিও করেন একদল পর্যটক।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            